গত ১৫ বছর গণমাধ্যম সাদাকে সাদা এবং কালো কে কালো বলতে পারে নি। এর কারণে বাংলাদেশের গণমাধ্যম আস্থা সংকটে পরেছে। যার ফলে মানুষ আর গণমাধ্যমের মধ্যে দুরুত্ব তৈরী হয়েছে। সাধারণ মানুষের গালি খাওয়ার তালিকায় এখন পুলিশ ও ডাক্তারদের উপরে সাংবাদিক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। গতকাল সাগর-রুণি হত্যাকান্ডের বিচারসহ সাংবাদিকদের অধিকার ও সুরক্ষার দাবিতে রংপুর বিভাগীয় সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। যাদের কাজ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সাংবাদিকরা হলো সবচেয়ে বড় মানবধিকার কর্মী, কেননা তারা মানুষের দুঃসময়ে পাশে থাকেন । অথচ গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের কবলে পরে গণমাধ্যম তার গণমুখির যে সংস্কৃতি তা হারিয়ে ফেলেছেন। গত ১৫ বছরের গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদের দালালী করেছে, তোষামোদি করেছে। জুলাই আন্দোলনে অনেক গণমাধ্যম সাফাই গেয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর বুক গুলি করে ঝাঝড়া করে দিয়েছিলো শেখ হাসিনার পুলিশ। মুরগী জবাইয়ের পর যেমন ছটপট করে এক সময়ে নিস্তেজ হয়ে যায়, তেমনি ছোট ছোট বাচ্চারাও এক সময় মৃত্যুর কোলেঢেলে পড়ে। তারপরও এক শ্রেণির সাংবাদিক টকশোতে নির্লজের মতো গলাবাজি করছিলো। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। সেটি কি হতে পেরেছে গণমাধ্যম। অনেক সুন্দর সুন্দর চকচকে পত্রিকা বের হয়েছে। কিন্তু সেই সব পত্রিকার অধিকাংশ দলীয় লিফলেট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। পরবর্তিতে রাজনীতিতে ব্যবহার হয়েছে। যার কারনে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা শুধু পচনমুখি নয়, পতনমুখিও। গণমাধ্যম কর্পোরেট হওয়ার কারনে সমাজের দর্পন হওয়ার পরিবর্তে আমরা এখন পোষা কুকুরের মতো হয়েছি। সাংবাদিক এই নেতা আরো বলেন, আমরা সাদাকে সাদা বলবো, কালোকে কালো বলবো। সত্যকে তুলে ধরবো। মিথ্যার পরাভুত হবো না। বাংলার মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট আসতে পারবে না। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কোন আংশিক নয় পুরোটাই সত্য হবে। একশতভাগ হতে হবে সত্য। তাহলে সেটি হবে সাংবাদিকতা। এসময় তিনি রংপুর বিভাগীয় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজক সংগঠনের প্রতিকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, রংপুর বিভাগের সাংবাদিকরা যে আগুন জ্বালালো, সেই আগুন পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে। সাংবাদিকরা তাদের অধিকার আদায় করবে ঘরে ফিরবে। বিভাগীয় সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, বাসসের পরিচালনা পর্যদ সদস্য দৈনিক যুগের আলোর প্রকাশক ও সম্পাদক মমতাজ শিরিন ভরসা। এছাড়াও সমাবেশে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মহানগর পুলিশের সিটিএসবি প্রধান হাবিবুর রহমান, রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, সিটি প্রেসক্লাব রংপুরের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু নাগসহ সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন জাতীয় ও বিভাগীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দৈনিক দিনকালের ব্যুরো প্রধান সালেকুজ্জামান সালেক এবং পুরো সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আরপিইউজে সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টেলিভিশন ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সিনিয়র রিপোর্টার ও ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান। এর আগে পৌনে ১২ টার সময় সমাবেশের উদ্বোধন করেন ২৪ এর জুলাই বিপ্লবে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র গর্বিত মা ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য শামসি আরা জামান কলি। সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয় অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধন।
এরপর সকাল সাড়ে ১১ টায় ভিডিও জার্নালিষ্ট আলমগীরের পবিত্র কোরআন তেলোয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকদের এই সমাবেশ। এরপর সকল নিহত সাংবাদিকদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সবার অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক রেজাউল করিম মানিক। বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ, জামিল আহমেদ ও নাহিদ হাসান খন্দকার, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক দিনাজপুরের জি এম হিরী, কুড়িগ্রামের তামজিদ হাসান, গাইবান্ধার সৈয়দ রোকনুজ্জামান, লালমনিরহাটের বকুল রায়, নীলফামারীর ইয়াসিন মুহাম্মদ সিপু, ঠাকুরগাঁওর আল মাহমুদ ইমন, পঞ্চগড়ের মোশাররফ হোসেন, টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরামের এহসানুল হক সুমন, শরীফা শিউলি, আসাদুজ্জামান আফজাল প্রমুখ। রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশ থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ড, ২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুন্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকসহ দেশের সকল সাংবাদিক হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, আর্থিক নিরাপত্বা, ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং হামলা, মামলা, হয়রানি বন্ধের জোরালো দাবী জানানো হয়। সেই সাথে সমাবেশ থেকে সুপারিশমালা সরকারের এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে প্রস্তাব লিখিত আকারে তুলে ধরে হয়। এতে রংপুর বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলার থেকে প্রায় এক হাজার সাংবাদিক অংশ নেন।