ধান চাষের জন্য প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে একই জাতের বীজ দিয়ে ট্রেতে বীজতলা তৈরি, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন এবং কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন করার পদ্ধতিই হচ্ছে ‘সমলয়’। ধান চাষে শ্রমিক সংকট নিরসন, উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ ও সময় বাঁচায় এ পদ্ধতি। গাজীপুরের কালীগঞ্জের কৃষকদের কাছে পদ্ধতিটি নতুন হলেও দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে। জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বোরো মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর ব্লকের চুপাইর গ্রামে ৫০ একর জমিতে ৬শ কেজি উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের বীজ দিয়ে ৪ হাজার ৫শ প্লাস্টিকের ট্রেতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে এর আগে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বাঙ্গালহাওলা গ্রামে হাইব্রিড জাতের ৩শ কেজি ধানের বীজতলা ৫০ একর জমিতে সাড়ে ৪ হাজার প্লাস্টিকের ট্রে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপন এবং তা কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস বলছে, জমির উপরিভাগের মাটির সাথে জৈব সার সংমিশ্রণে প্লাস্টিকের ট্রেতে ধান বীজ বপন করা হয়। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে এই বীজ চারা রোপণের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। এতে করে বাড়তি সারের প্রয়োজন হয় না। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির পরিমাণ কম লাগে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বৃদ্ধি পায়। একসঙ্গে চারা রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকে এবং তা একসঙ্গে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন করায় কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারে। সমলয় পদ্ধতি নিয়ে কথা হয় উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর ব্লকের চুপাইর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ কৃষক কামাল হোসেন, ত্রিশোর্ধ কাউসার হোসেন দেওয়ান, খলিলুল্লাহ মোড়ল ও বিশোর্ধ কৃষক মোক্তাজুলের সাথে। তারা জানান, বিষয়টি তাদের জন্য নতুন হলেও কৃষি অফিস থেকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষন দেওয়ার পর তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এতে শ্রমিক সংকট নিরসন হওয়ার পাশাপাশি সময় ও খরচ এবং রোগ বালাইও কম হয় বলে জানান তারা। চুপাইর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, আমরা শুরুতে এই চাষে কৃষক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে সমলয় পদ্ধতি নিয়ে তাদের সাথে বিস্তর আলোচনার পর তারা আগ্রহী হয়। পরে বিষয়টি আমার ঊর্ধতনদের সাথে কথা বলে এই সময় চাষের কাজ শুরু করি। স্থানীয় কৃষকদের কাছে নতুন হলেও এ নিয়ে এখন ব্যাপকভাবে তাদের মাঝে সাড়া ফেলেছে বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, প্রথম বীজতলা তৈরিতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হলেও তা ভাল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ধানের চারা রোপন করা হয়েছে এবং তা আমরা নিয়মিত মাঠ মনিটরিং করছি। কোন সমস্যা পেলেই দ্রুত সমাধানের ব্যবসা করছেন বলেও জানান ওই উদ্ভিদ রক্ষরণ কর্মকর্তা। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, সমলয় চাষের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই আমরা যেন কৃষি যান্ত্রিকি করণের মাধ্যমে আমাদের ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি সে কারণেই কৃষকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা। এ পদ্ধতিতে ধান বীজ তলা করা হয় যন্ত্রের মাধ্যমে। এছাড়াও ধান রোপন করা হয় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপন এবং তা কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন করা হবে।