অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী: জাকিয়া জান্নাত অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী। ১৯৯৮ ৫ ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করার পর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিনমাস ব্যাপী দর্জি প্রশিক্ষন নেন। দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষনের ভাতা দিয়ে পুরাতন সেলাই মেশিন কিনেন। পরবর্তীতে আমি সেলাই কাজ করে ৩০ত্রিশ হাজার টাকা জমিয়ে নতুন একটা প্লেন সুইং মেশিন কিনেন। সেই মেশিনে সেলাই কাজ করে ১৫হাজার টাকা জমা করে বাড়ীতে কাপড়, ক্যামিকেল, রং ডাইস ইত্যাদি ব্লক বাটিকের জিনিসপত্র কিনে ব্যবসা শুরু করেন। ১৫ জন মহিলা দিয়ে কাজ করান। প্রতি মাসে ২৫০০০/-থেকে ৩০০০০/-হাজার টাকা আয় হয়। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত মনে করেন। শিক্ষা ও চাকরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী : মোছাঃ হাসিনা খাতুন ১৯৮৩ইং সালের ১লা জানুয়ারীতে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার কবিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। সাত বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যায়নরত সময়ে সংসারে মায়ের হাতের কাজ করতে হয়েছে। ঘরের সকল কাজ রান্না করা থেকে শুরু করে ঘর গৃহস্থালীর সকল কাজ আবার গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী এসব আমারই একা হাতে সামলাতে হতো। কিন্তু সংসারের এতসব কাজের মাঝে স্কুল কখনও ফাঁকি দেননি। সংসারে অভাবের কারনে পড়ালেখার জন্য খাতাও কিনতে পারতো না। লেখার জন্য নির্বাচনের পোস্টারকে ব্যবহার করতাম খাতা হিসাবে। পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা ছিল তাই শত কষ্টের মাঝেও পড়াশোনা করতেন। এসএসসির সময় মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯৯৮ সালে এসএসসিতে আমি ফার্স্ট ডিভিশন পান। এরপর স্থানীয় কলেজেই ভর্তি হন। ২০০০ইং সালে এইচএসসি পরীক্ষা সেকেন্ড ডিভিশন পেয়ে উত্তীর্ণ হন। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের মাঝামাঝি সময়ে বিবাহিত জীবন শুরু হয়। বিয়ের দুই বছর পর কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। ২০০৯ শুরু হয় চাকুরী জীবন।
টেপড়া হতে টেম্পুতে ১৫ কিলোমিটার যাওয়ার পর টেম্পু হতে নেমে সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে হেটে স্কুলে যেতে হতো। আল্লাহর রহমত ছিলো বলেই জীবনের অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ সফল একজন নারী হিসেবে নিজেকে দাড় করিয়েছেন। অভাব অনটন কোনো কিছুই আমার স্বপ্নকে নষ্ট করতে পারেনি সফল জননী নারী : রোকেয়া রহমান একজন সফল জননী নারী। সন্তানকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর তিনি। রোকেয়া রহমান ১৯৬৫ সালে মানিকগঞ্জ জেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের ধলাই গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার কারনে তিনি বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেন নি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৮১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। তিনি পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি, তাই সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সন্তানদের পড়ালেখায় উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন। হাঁস, মুরগী পালন করে তা থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন। ৪ জন সন্তানকে সুশিক্ষিত করে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বড় মেয়ে রোজিনা মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এম.বি.এস পাশ করে সহকারি শিক্ষিক হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে ড. সুলতানা আক্তার প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় সুনামের সহিত পাশ করে বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ড. সুলতানা আক্তার বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের উপর গবেষণা করে ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। বড় ছেলে মোহাম্মদ সেলিম মোল্লা কৃতিত্বের সাথে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এম.বি.এস (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করে ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে ইসতিয়াক মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে কৃত্বিত্বের সাথে স্নাতক (সম্মান) (প্রথম শ্রেণি) ও স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি নুরুন্নাহার ট্রেডার্সে বিজনেস কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত আছেন। সংসারে টানাপোড়েন, অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে কিভাবে ৪ সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী : আইশা বেগম চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। গরিবের ঘরে জন্ম নেওয়াটাই ছিলো তার জন্য অভিশাপ। ২০০৮ সালে পিতার মৃত্যুর পর ছোট দুই ভাইকে নিয়ে তার মা একা সংসার চালাতে পারতেন না। মায়ের সাথে তিনিও সংসার চালাতে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন। এভাবে আস্তে আস্তে বড় হন। ২০০৯ সালের বিয়ে হয়। বিয়ের পর জীবনে নেমে আসে এক অভিশাপ। বিয়েতে যৌতুক না দেওয়ায় বিভিন্ন রকমের নির্যাতন শুরু হয়। অনেক মারধর করে। স্বামী নেশা করে নির্যাতন করতো। এই অবস্থা দেখে শাশুড়ী আলাদা করে দেয়। আলাদা হওয়ার পরে সংসারের কাজ শেষ করে অন্য বাড়ীতে কাজ করতে গেলে শাশুড়ী ও ননদী ভাত খেয়ে ফেলতো। স্বামীকে ভাত দিতে না পারলে মারধর করতো। এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। তারপর এক জন ছেলের সন্তান জন্ম হয়। টাকার অভাবে আইনের সাহায্য নিতে পারে নাই। ২০১৬ ইং ভালাক হয়ে যায়। তারপর মায়ের কাছে ছোট ছেলে রেখে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে সেলাই এর কাজ শিখে একটু একটু করে সংসার চালাতে থাকে। কিছদিন পর গার্মেন্টসে চাকরি নেন। ওভারটাইমসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা বেতন পান। এখন সংসার ভালভাবেই চলে । জীবনের সাথে যুদ্ধ করে পারিবারিক সামাজিকভাবে নির্ঘাতনের স্বীকার হন। জীবনযুদ্ধে কঠিন সময় পার করে নির্যাতনের বিভিস্বীকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেন।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী: শেফালী বেগম ৪ বোন ও ১ ভাই অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেছেন। টাকার অভাবে ভাই বোন কেউই এসএসসি পর্যন্ত লেখা পড়া করতে পারি নাই। ১৯৯৪ সালে বিয়ে হয়। দুইটি সন্তান জন্ম নেয়। বড় মেয়ের বয়স ৮ বছর আর ছোট মেয়ের বয়স ৫ বছরে স্বামী মারা যায়। আয় রোজগারের লোক ছিল না। বাড়ি ছাড়া মাঠে কোন জায়গা জমি ছিল না। এরপর মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করান। পড়ালেখার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হতো। মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাতে, মেয়েদের নিয়ে ৩ বেলা পেট ভরে খেতে পারতেন না। তাদের ভালো কোন পোষাক দিতে পারতেন না। এর পর এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা রূপসা ওয়হেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেম্বার পদে তিন বার নির্বাচিত করেন। স্কুলের শিক্ষকরা দুই মেয়ের পড়া লেখার অনেক সুযোগ সুবিধা করে দেন। ঐ স্কুল থেকেই দুই মেয়ে এসএসসি পাশ করে। পরে বিএ পাশ করালাম। ২০১৬ সালে উলাইল ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা ‘সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন। নির্বাচনী এলাকার রাস্তায় মাটির কাজ, ইটের সলিং এর কাজ করেন। দুইটি প্রাইমারি স্কুল এবং একটি হাই স্কুলেরও উন্নয়নের কাজ করেন। দুইটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও উন্নয়নের কাজ করেন। এলাকার গরিব দুখী মানুষদের বিজিএফ, ভিজিটি ৩০ জনকে বয়স্ক ভাতা, ২০ জনকে প্রতিবন্ধি ভাতা, ২৫ জনকে মাতৃকালীন ভাতা ও ৩৫ জনকে বিধবা ভাতা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধ করে দেন। বিভিন্ন অসহায় মানুষের মাঝে ৩৫টি টিউবওয়েল, রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ, ইট সলিং, রাস্তা মেরামত ইত্যাদি জনসেবামূলক কাজ করে এলাকার উন্নয়ন করেন।