প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৩০০ প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী-গবেষকের চিঠি
মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি দিয়েছেন ৩০০ প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, গবেষক ও পেশাজীবী। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ই-মেইলে এ চিঠি পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বিগত ১৬ বছরের জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন ও দুঃশাসনের কবল থেকে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, হাজার হাজার ছাত্র-জনতার খুনি ফ্যাসিবাদী শক্তি এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যসূত্র উল্লেখ করে আরও বলা হয়, সরাসরি রাজনৈতিক নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৮৩৪ জনকে হত্যা এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রমাণ পেয়েছে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন দমনে বেআইনি ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে শক্তির ব্যবহার করেছে।
সবশেষ প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি, সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ১ হাজার ৪০০জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ শিশুও রয়েছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে হত্যার জন্য শিশুদের টার্গেট করা হয়েছে। আহত হয়েছে অজস্র মানুষ। ১১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু জুলাই হত্যাকা-ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকা- চালিয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুই হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। গুম কমিশনের রিপোর্টে উঠে এসেছে কীভাবে ছোট বাচ্চাকে জিম্মি করে মায়ের বুকের দুধ পান করতে না দিয়ে মায়ের উপর নিপীড়ন চালিয়েছে। সারাদেশে ৭০০-৮০০ আয়নাঘর তৈরি করে বছরের পর বছর সলিটারি কনফাইনমেন্টে রেখে পাশবিক নিপীড়ন চালিয়েছে অসংখ্য মানুষের ওপর। নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনা ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে গুম করেছে। যেখানে হাজার হাজার মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছেন (হাসনাত ও মাশাল, ২০২৪)।
আয়নাঘরের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, গুম সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্ট, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট এবং সম্প্রতি আপনার নেতৃত্বে আয়নাঘর উন্মুক্ত হওয়ার পর মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, হত্যার যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখতে পেয়েছি এরপরেও রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বাংলাদেশে চলতে পারে না। আমরা অবিলম্বে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার খুন, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। ফ্যাসিবাদী দলকে নিষিদ্ধ না করলে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- ড. শিব্বির আহমদ, ড. মোহাম্মদ তারিক, ড. মারুফ মল্লিক, ড. রাশেদুল ইসলাম, ড. ফয়জুল কবির, ড. মো. খালেদ হোসেন, ড. আবু ইউসুফ, ড. এমরান হোসেন, মো. ফাহিম শারকার ঈশাত, মো. আলী আজম, আব্দুল্লাহ আল জায়েম, মো. রেজাউল হক, মো. রবিউল ইসলাম, মুনতাসির মাহদী, ফাবিহা তাসনিম অরনী, মুসুন্না গালিব, জাকির হোসেন, শেখ তাশরিফ উদ্দিন, সাজিদ কামাল, মোহাম্মদ এস আলী, এন এইচ এম আরাফাত, মো. মাহবুবুর রহমান শাকিল, মো. নুরুল হক, দিলশানা পারুল, মারজিয়া মিথিলা, এম এস আলী, জুলফিকার আলী, মুনা হাফসা, শাফায়েত আহমদ, শেখ মো. সাজেদুল করিম, মোহাম্মদ ইসলামুল হক, কামাল চৌধুরী, রাসেল মোহাম্মদ, নাবিদ মোহাম্মদ সিয়াম, নাসরুল ইসলাম সোহান, সায়েমা শারমিন, আব্দুর সামি, মোহাম্মদ মুনাসির মামুন চৌধুরী, আয়েশা পারভিন, শেখ মো. বোরহান, মো. আশরাফ, হুমায়রা বিনতে আশেক, মুজতাহিদুল, খালেদা আক্তার, শায়লা আফরিন, মুহাম্মদ সালেহ আবদুল্লাহ, মাহফুজা, ফরহাদ হোসেন, এম মিয়া, আবু তাইব আহমেদ, আবু জাকারিয়া, মো. নাজমুল করিম ফারুকি, আহমদ মূসা, এম এন উদ্দিন, সুবাইল বিন আলম, শাকিব মুস্তাফী, আফসানা আহমেদ ও এম এইচ মাহমুদ প্রমুখ।