বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আজ পহেলা ফাগুন- ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। কবির ভাষায়, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’। একই সঙ্গে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, যা পহেলা ফাল্গুনের আবেগ, অনুভূতি ও উচ্ছ্বাসের রঙে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলার প্রকৃতিতে বসন্ত আর ভালোবাসা যেন পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। তাই ঋতুরাজ বসন্তকে বলা হয় প্রেমের ঋতু। বাংলা ভাষার এমন কোনো কবি নাই যিনি বসন্ত নিয়ে দু-চার লাইন লিখেননি। এমন দিনে ভালোবাসা দিবস যুক্ত হওয়ায় সবার অন্তরে এক ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পহেলা বৈশাখের পর পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব বাঙালি সংস্কৃতিতে এক সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই আজ সব দীনতা, হীনম্মন্যতা ও কুসংস্কারকে উপেক্ষা করে, হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদ ভুলে এই উৎসবকে বরণ করে নেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে আছে নানা বয়সের মানুষ।
বসন্তের আগমনে বাংলার প্রকৃতি যেন বর্ণিল সাজে সেজেছে – গাছে গাছে পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে। শুকনো পাতা ঝরে পড়ে ডালে ডালে জন্ম নিয়েছে কোমল-রঙিন কচিপাতা। শুষ্ক মাটির রুক্ষতা ভেদ করে মাঠে মাঠে গজিয়েছে কোমল-মসৃন সবুজ দূর্বাঘাস। বইতে শুরু করেছে ফাগুনের মৃদু-মন্দ দক্ষিণা হাওয়া। শীতের নির্জীবতা-আড়ষ্টতা ছাপিয়ে প্রাণে এসেছে সজীবতা ও সতেজতা।
বসন্তের রূপ ও মোহে মুগ্ধ হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে, শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায়, ফাল্গুনী মোর মন বনে’।
ফুলের মৌ মৌ গন্ধ, কোকিলের কুহুতান, মৌমাছি আর ভ্রমরের গুঞ্জরন, সোনালি রোদের মিষ্টি ছোঁয়া মানব মনকে উদাস করে দেয়। এই দিনে বাংলদেশের প্রতিটি নগরে, বন্দরে, শহরে, গ্রামে- সব বয়সের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে, আবেগের উন্মাদনায় মেতে ওঠে। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে, খোঁপায় নানা রঙের ফুল গুঁজে আর তরুণেরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি পরে সুসজ্জিত ও সুশোভিত হয়ে উচ্ছ্বসিত মনে পথে- প্রান্তরে সমবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠে কবিগুরুর সেই গান, ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…’
বসন্তে প্রকৃতি নবরূপে সজ্জিত হয়, এক নিরুপম সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। মনের সুখে রঙিন পাখা মেলে প্রজাপতির উড়ে বেড়ানো এবং ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য একাকার হয়ে মনোমুগ্ধকর এক মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করে। নিঝুম সন্ধ্যায় জোনাকির মিটিমিটি আলো আর ঝিঁঝি পোকার শিহরণ জাগানিয়া ডাক গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে আরও ঐশ্বর্যম-িত করে তোলে।
পাশাপাশি আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হওয়ায় আজকের এই দিনে বসন্তের রং আর ভালোবাসার অনুভূতি প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দিচ্ছে আলোর বিচ্ছুরণ। ভালোবাসা দিবস কিংবা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’কে একসময় পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি বলে বিদ্রূপ করা হলেও সময়ের পরিবর্তনে আজ তা বাঙালি মনেও স্পন্দন জাগায়।
ভালোবাসা এমন এক আবেগময় মানবিক অনুভূতি, যা জীবনকে উপলব্ধি করতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়, সাহসী হতে শক্তি জোগায়, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে তোলে। ভালোবাসা মনের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে এবং ভাবনার জগৎকে প্রসারিত করে। কল্পনায় সে মেঘের সঙ্গে বিহঙ্গের মতো ভেসে বেড়ায় এবং অনন্ত এক সৌন্দর্যলোকে অবগাহন করে।
ভালোবাসার অতল সরোবরে সাঁতার কেটে মানুষের মন বিশুদ্ধ ও সংবেদনশীল হয়। ভালোবাসার আলোকরশ্মিতে মানব মন পুলকিত ও বিকশিত হয়, শিহরিত ও বিমোহিত হয়, স্নিগ্ধ ও বিমুগ্ধ হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে তরুণ-তরুণীর সাজসজ্জা আর ভালোবাসার সংগীতে বসন্তের প্রকাশ ঘটে। তারা উদাস প্রাণে আনমনে গেয়ে ওঠে ‘মধুর বসন্ত এসেছে, মধুর মিলন ঘটাতে’।
ভালোবাসার উৎপত্তি মানুষের মস্তিষ্ক থেকে। সেখান থেকে ধাবিত হয় তার চিন্তায়-মননে। এরপর স্থায়ী অবস্থান নেয় অন্তরের অন্তস্তলে। তারপর ইশারায়-ইঙ্গিতে, সংগীতে-ভঙ্গিতে, বাঁশির সুরলহরীতে কিংবা কবিতার ছন্দময় শব্দের জাদুতে তারা ভালোবাসার কথা জানান দেয়।
চারিদিকে পাখির কলকাকলী, মানুষের কলরব, প্রকৃতিতে লাল-হলুদ আর সবুজের সমাহারের অপরূপ সৌন্দর্যে ব্যাকুল প্রেমিক হৃদয় বলে ওঠে, ‘দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর, ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর’। পরিশেষে, কোনো অমিতাচার কিংবা বিশৃঙ্খলা নয়, মানবকল্যাণ, মানবপ্রেম তথা মানুষের প্রতি ভালোবাসাই হোক পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের মূল অঙ্গীকার। এটিই সবার প্রত্যাশা। (উৎস: দৈনিক বাংলা)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com