চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়া সেই দীঘি এবার আসছেন নায়িকা হয়ে। দিঘী বলেন, ‘সেই নবম শ্রেণি থেকে নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব পাচ্ছি। কেবল পড়াশোনার জন্য এদিকে মনোযোগ দেইনি। বাবা বলেছেন, পরীক্ষার পর কাজ করতে পারব। এখন পরীক্ষা শেষ। তাই কাজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’ দীঘি ছয় বছরে ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যার অধিকাংশই ব্যবসাসফল। ২০০৬ সালে ‘কাবুলিওয়ালা’, ২০১০ সালে ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’ এবং ২০১২ সালে ‘এক টাকার বউ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান দিঘী। সেই ছোট্ট দীঘি এখন বড় হয়েছেন। নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব পাচ্ছেন নিয়মিত। স্কুলের গ-ি পেরিয়ে কলেজে পড়ছেন। বাবার শর্ত মেনেই তাই সিনেমায় অভিনয়ের কথা ভাবছেন দীঘি।তার হাতে এসেছে ডজন খানেক সিনেমার স্ক্রিপ্ট।
দীঘি বলেন, ‘সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করব- এ পরিকল্পনা আগে থেকেই। বেশ কিছু সিনেমার স্ক্রিপ্ট রয়েছে হাতে। সেগুলো থেকেই বাছাই করবো কোন সিনেমায় আগে অভিনয় করব। কারণ আমার প্রথম কাজ। ছোট্ট দীঘির প্রথম কাজ সবাই মনে রেখেছেন, বড় দীঘির প্রথম কাজও যেনো সবাই মনে রাখেন। ভালো একটি সিনেমার নায়িকা হিসেবেই দেখা যাবে আমাকে।’ নায়িকা দীঘি ক্যামেরার সামনে কবে নাগাদ দাঁড়াচ্ছেন- প্রশ্ন রাখলে উত্তরে দীঘি বলেন, ‘সময়টা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি- খুব শিগগিরই।’
মনোয়ার হোসেন ডিপজলের হাত ধরে ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু ‘ ছবিতে অভিনয় করে দিঘী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ২০১১ সালে দিঘীর মা দোয়েল মারা যান। তারপর অনেকটা আড়ালে চলে যান তিনি। মনোযোগ দেন লেখাপড়ায়। দীঘি সিনেমার আসার বিষয়ে তার বাবা অভিনেতা সুব্রত বলেন, ওর ইচ্ছা সিনেমায় অভিনয় করার। বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করতে চায়।
‘নায়িকার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু নায়কের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না।’ ঘটনা অনেকখানি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতোই। ২০০৬ সালে শিশুশিল্পী দীঘির অভিষেক। দু-তিন বছরের মধ্যে গোটা দশেক হিট-সুপারহিট ছবি, একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আর দর্শকের উপচে পড়া ভালোবাসায় রীতিমতো ভাসলেন। তখন থেকেই দীঘির নায়িকা হওয়ার দিন গণনা শুরু। চৌদ্দ বছরের প্রতীক্ষা শেষে অবশেষে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন ‘নায়িকা দীঘি’। এমন একটা সময়ে বিরতি কাটিয়ে ফিরলেন, যখন পুরো বিশ্ব থমকে আছে করোনাভাইরাসে। আর কয়েকটা দিন কি দেরি করতে পারতেন না দীঘি? পারেননি, কারণ প্রথম ছবির নায়ক শান্ত খানের বাবা প্রযোজক সেলিম খানের তাড়া ছিল। মা দোয়েলের অকালমৃত্যুর পর থেকে মেয়ে দীঘিকে নিয়ে ধীরেসুস্থেই এগোচ্ছিলেন বাবা সুব্রত। কিন্তু আচমকা বাবা-মেয়ের হাতে একসঙ্গে পাঁচ ছবির প্রস্তাব তুলে দেয় শাপলা মিডিয়া। ‘একদিন হুট করে রনী ভাই [পরিচালক শামীম আহমেদ] আমাকে দুটি ছবিতে অভিনয়ের অফার দেন। সংক্ষেপে গল্পও বলেন। শুনে মনে হলো, পা-ুলিপি পড়া যায়। সেদিনই পা-ুলিপি পাঠিয়ে দিলেন তিনি। পড়ে দুই দিনের মধ্যেই জানিয়ে দিই, ছবিগুলো করব। একসময় সেলিম আংকেল আমাকে নিয়ে আরো ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। সংখ্যা বাড়তে বাড়তে শেষ পর্যন্ত শাপলা মিডিয়ার ব্যানারে পাঁচটি ছবি করছি,’ এভাবেই নায়িকা হওয়ার গল্প বললেন দীঘি। সেপ্টেম্বরে শামীম আহমেদ রনীর ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ ছবির ১০ দিন শুটিং করেছেন। একই নির্মাতার ‘একাত্তরের ইতিহাস’ ছবির শুটিং করবেন এ মাসে। মালেক আফসারীর ‘ধামাকা’ ও কাজী হায়াতের ‘যোগ্য সন্তান’ ছবি দুটির গল্প লেখার কাজ চলছে। সব ছবিতেই দীঘির নায়ক প্রযোজকপুত্র শান্ত খান। তবে শান্ত খানেই থেমে নেই দীঘি, আটকে নেই ‘শাপলা’য়ও। নতুন আরো দুটি ছবির কাজ হাতে নিয়েছেন তিনি। সেগুলোর ঘোষণা দেবেন অক্টোবরেই। দুটিই অন্য প্রযোজকের ছবি, নায়কও ভিন্ন। কয়েক বছর আগে রটেছিল, শাকিবের নায়িকা হবেন দীঘি। তাহলে কি নতুন ছবি দুটির একটিতে বা দুটিতেই দীঘির নায়ক শাকিব খান? ‘না’, এককথায় উত্তর শাকিবের ‘চাচ্চু’ সহশিল্পীর। একটু ভেবে পরক্ষণেই বললেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে নতুন করে প্রস্তাব এলে ভেবে দেখা যাবে।’
এখন পর্যন্ত দীঘির সঙ্গে একটাই নাম পাওয়া যাচ্ছেÍশান্ত খান। শান্ত আসলে কতটা শান্ত? হাসতে হাসতে দীঘি বললেন, ‘প্রথম দেখায় তাকে শান্তই মনে হয়। মিশে বুঝেছি, সে আসলে চঞ্চল। তবে আমার কথার মূল্য দেয় খুব, যথেষ্ট সম্মানও করে।’ হঠাৎ করেই নায়িকাদের মিছিলে ঢুকে পড়েছেন। এখানে-সেখানে দীঘিকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে খুব। তবে ‘নায়িকা নয়, অভিনেত্রী হতে এসেছি’ বলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন দীঘি। এও জানালেন, এমন চরিত্র চান, যা তাঁকে অভিনেত্রী হিসেবে নিজের জাত চেনানোর সুযোগ দেবে। দর্শক হিসেবে তিনি সর্বভুক, থ্রিলার থেকে রোমান্টিকÍসব পছন্দ। যেমন পছন্দ করেন জমজমাট বাণিজ্যিক ছবি, সমান আগ্রহ নিয়ে দেখেন ‘আর্টফিল্ম’। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করার পর নিজের পছন্দের চরিত্র কি পেয়েছেন দীঘি? ‘হাতে থাকা ছবিগুলোর প্রতিটিতে আমার চরিত্র একটা থেকে আরেকটা আলাদা। আমি বৈচিত্র্য পছন্দ করি, তাই ছবিগুলো করতে রাজি হয়েছি। বাণিজ্যিক ছবি করব, কিন্তু লোকে যেন বলে, দীঘির অভিনয়টা ভালো হয়েছে,’ এটুকুই তাঁর চাওয়া।
এমন এক সময় দীঘি চলচ্চিত্রে এলেন, যখন সিনেমা হলের সংখ্যা কমে গেছে। তাঁর অভিনীত ‘চাচ্চু’, ‘দাদীমা’, ‘এক টাকার বউ’য়ের সময় সিনেমা হল হাউসফুল থাকত। হলে হলে ঘুরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছবি দেখার স্মৃতি এখনো তাজা। তেমন সুখকর দৃশ্যের দেখা এবার না পেলে কেমন লাগবে দীঘির? ‘সমস্যাটা সাময়িক। দর্শক আবার হলে যাবে। দিন ফিরবে বলেই বাবা আর আমি মিলে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিনেমা ঘুরে দাঁড়াবেই।’
দীঘি এটাও জানেন, সিনেমা হলের জায়গা নিচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। হলের সঙ্গে তাঁর ছবি ওটিটিতে মুক্তি পেলে খুশিই হবেন। কারণ তিনি নিজেও ওটিটির নিয়মিত দর্শক। বলেন, ‘আমি মনে করি, নতুন একটা মাধ্যম যোগ হলো। আমরা এখন নেটফ্লিক্সে, অ্যামাজনে ছবি দেখছি, সিরিজ দেখছি। সিনেমা হলে কম যাচ্ছি। দর্শক এখন হাতের মুঠোফোনেই সব কিছু চান। এই নতুন বাস্তবতা মানতে হবে।’ দীঘি আরো জানান, চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতেও আপত্তি নেই তাঁর। তবে সিরিজের গল্প, চিত্রগ্রহণ, নির্মাণ হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।