সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকরের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২১

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকরের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন বেড়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে এই নির্যাতনের ঘটনা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই করোনা পরবর্তী সময়ে নারী নির্যাতন বন্ধে এখনই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ধর্ষক-নির্যাতকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল রবিবার (৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের মন্ত্রী হোস্টেলের মিডিয়া সেন্টারে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তারা এ আহ্বান জানান। সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু। স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেনÍ শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের ভাইস চেয়ারম্যান আরমা দত্ত, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও অপরাজিতা হক, স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান) এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল ও সাংবাদিক নিখিল ভদ্র। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম-এর সম্পাদক সাকিলা পারভীন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বলেন, ‘নারী নির্যাতন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সমাজে মাদকের প্রভাব। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করতে সরকারি- বেসরকারি সকল পর্যায়ে ডোপ টেস্ট চালু করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নারীর ওপরে সহিংসতা বন্ধে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরগুলো পৃথক পৃথক ভাবে কাজ করছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও বিচ্ছিন্নভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।’ এক্ষেত্রে সমন্বয়ের প্রয়োজন। আগামীতে নারী নির্যাতন বন্ধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
নারী নির্যাতন বন্ধে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের অঙ্গীকার হবে, সমাজে যেন একজন নারীও নির্যাতনের শিকার না হন। এজন্য আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। নির্যাতন বন্ধে স্থানীয় সরকারকে আরও বেশি সক্রিয় করতে হবে।’
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে এ সংক্রান্ত টাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ‘আদালতে বিচারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। উপজেলা নারী বিষয়ক কর্মকর্তার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সরকারকে আদালতে একজন নারী পিপি নিয়োগ দিতে হবে।’ নির্যাতনের শিকার নারীর সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
নারী নির্যাতন বন্ধে জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক বলেন, ‘সরকার মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে আইনের সংশোধনী পাস করেছে। এখন মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকরের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’ সেটা করা সম্ভব হলে এসিড সন্ত্রাসের মতো নারী নির্যাতনও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেসমিন প্রেমা বলেন, ‘বিকৃত রুচির জায়গা থেকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা বাড়াতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত অর্ধযুগে সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে। ওই বছরে বছর দেশে এক হাজার ৩৭০টি ধর্ষণ, ২৩৭টি গণধর্ষণসহ চার হাজার ৬২২টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তবে করোনা মহামারিকালেও ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা কমেনি। গত বছরে তিন হাজার ৪৪০ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে এক হাজার ৭৪ জনকে ধর্ষণ, ২৩৬ জনকে গণধর্ষণ ও ৩৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ২০০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। আর ৪৩ জন শ্লীলতাহানি ও ৭৪ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। অনুষ্ঠানে এ সব অপরাধ কমিয়ে আনতে আইন ও ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com