সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ: সবচেয়ে বিপদজ্জক ঢাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২১

সরকার নানা উদ্যোগের কথা বললেও কমছে না বায়ুদূষণ। বরং প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসছে ঢাকা। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগের সব রেকর্ড প্রায় ছাড়িয়ে গেছে গতকাল রোববার (১০ জানুয়ারি)। আজ দূষণের মানমাত্রা উঠেছিল ৫০২-এ। যা চলতি বছর তো বটেই, গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর মানমাত্রা উঠেছিল ৪৩০। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পোনে ১টা পর্যন্ত গড়ে ঢাকা প্রথমস্থানেই আছে এবং দূষণে মাত্রা গড়ে ৫০২ পর্যন্ত উঠেছিল।
বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবহাওয়াকে তারা দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন। এখনই দূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে। দুপুর ১টার পরে কিছুটা কমে এখন ২২১-ও এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ঢাকা এখনও প্রথম স্থানেই আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধুলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।
কেন দূষণের মাত্রা এত বেশি জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘দূষণের মাত্রা অনেক বেশি এখন। এইটা আরও ক’দিন এমনই থাকবে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে এতদিন আমরা বাইরে থেকে আসা বাতাসের সঙ্গে ধুলোবালিকেই দায়ী করেছি বেশি। আজ বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। আজ পুরো দূষণের কারণ আমাদের নিজেদের দূষণ। বড় প্রকল্পের কাজ, যানবাহনের ধোয়া, আবর্জনা পোড়ানোর ধোয়াই মূলত দায়ী। এগুলো বন্ধ করে দ্রুত বড় রাস্তাগুলোতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা দরকার এখনই। নইলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
সরকারের পক্ষ থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মনিটরিং টিম করে সেই টিমের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। দূষণ রোধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দূষণ রোধে শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় কাজ করলে হবে না তাই দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও কয়েক দফা সভা করেছি আমরা।’ রাস্তায় পানি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়েও কাজ চলছে। দূষণ শুধু আমাদের জন্যই হয় তা নয়, বাইরে থেকেও বাতাসের সঙ্গে ধুলিকণা আসে। এতেও আমাদের দূষণ বেড়ে যায়। আমরা দূষণ কমিয়ে আনতে যা যা করার দরকার তা করছি।’
রাজধানীতে ভয়াবহ যানজট: গতকাল রোববার সকালে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে হয়ে রাজধানীর কর্মজীবীরা ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েছেন। যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তিব্র ছিল যে ক্ষেত্রবিশেষে পাঁচ মিনিটের রাস্তা পথ ঘণ্টাতেও পার হওয়া যায়নি। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ উপলক্ষে হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ থাকায় আশাপাশের রাস্তাগুলোতে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, মধ্য বাড্ডা, মালিবাগ, আবুল হোটেল, তেজগাঁওয়া, মগবাজার, গুলশান, মহাখালিসহ বিভিন্ন সড়কে যানজটের দৃশ্য দেখা গেছে। তবে বনশ্রী, মালিবাগ আবুল হোটেল, রামপুরা এবং তেজগাঁওয়া অঞ্চলের রাস্তাগুলোতে যানজটের তীব্রতা বেশি দেখা গেছে।
বনশ্রী-রামপুরা অঞ্চলের যানজটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ফেসবুকের একটি গ্রুপে মো. মীর মিলন নামের একজন লিখেছেন, ‘আইডিয়াল থেকে রামপুরা ব্রিজে আসলাম এক ঘণ্টা ২০ মিনিটে। পুরো হাতিরঝিল বন্ধ, একটা মানুষও ঢুকতে দিচ্ছে না।’ মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটে মেরুল বাড্ডায় আসা রাজধানী সুপার পরিবহনের চালক মো. আলী কদম বলেন, ‘রাস্তায় ভয়াবহ যানজট। ১০ বছরের ওপরে আমি রাজধানীতে গাড়ি চালাচ্ছি। এমন যানজটে আর কখনো পড়িনি।’ তিনি বলেন, ‘আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস। তাই রাস্তায় একটু যানজট থাকবে এটা ধরেই বের হয়েছি। কিন্তু এমন যানজটে পড়তে হবে কল্পনাও করিনি। আবুল হোটেল থেকে মেরুল বাড্ডা আসতে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট লেগেছে। যানজট ধরেই সাধারণ এই রাস্তা আসতে ৩০ মিনিটের বেশি লাগে না।’
বনশ্রী থেকে মোটরসাইকেলে ফার্মগেটের অফিসের উদ্দেশে রওনা হওয়া আরিফুল ইসলাম রামপুরা ব্রিজের ওপর থেকে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বনশ্রীর এফ ব্লকের বাসা থেকে বের হয়ে ইউলুপ পর্যন্ত আসতেই এক ঘণ্টার ওপরে লেগেছে। ইউলুপ পার হয়ে দেখি হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ। এখন বাড্ডা-গুলশান ঘুরে অফিসে যেতে হবে। ১০টায় অফিস শুরু, ইতোমধ্যে সাড়ে ১০টা বেজে গেছে। অফিস পৌঁছাতে আজ কয়টা বাজবে আল্লাহ্ জানে। রাস্তার যে অবস্থা, ১২টার ওপরে বেজে যাবে মনে হচ্ছে।’ তেজগাঁও অঞ্চল ঘুরে যানজটের দৃশ্য দেখেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক প্রদীপ দাস। তিনি জানান, তেজগাঁওয়া অঞ্চলের প্রতিটি রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি রাস্তাতেই দীর্ঘ সময় ব্যক্তিগত গাড়ি ও পরিবহন দাঁড়িয়ে থাকছে। কেউ কেউ গন্তব্যে পৌঁছাতে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওনা দিচ্ছেন। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার দৃশ্য প্রগতী স্বরণীতেও দেখা গেছে। পায়ে হেঁটে নতুন বাজারের অফিসের উদ্দেশে রওনা হওয়া হৃদয় হাসান নামের একজন আফতাব নগর গেটের সামনে থেকে বলেন, ‘অফিসে মিটিং আছে ১১টায়। যাত্রাবাড়ির বাসা থেকে ৯টায় রওনা দিয়েছি। মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত ভালোভাবেই আসতে পেরেছি। কিন্তু এরপরেই যানজটে পড়তে হয়েছে। মালিবাগ থেকে রামপুরা আসতেই এক ঘণ্টার ওপরে লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম হাতিরঝিল পর্যন্ত আসলে যানজট কমবে। কিন্তু হাতিরঝিল পর্যন্ত এসেও দেখি সামনে একই রকম যানজট। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে অফিস যাচ্ছি। এখন পৌনে ১১টা বেজে গেছে। পরিস্থিতি যা, হয়তো আজ মিটিং ধরতে পারবো না। অফিসের অনেকে এমন যানজটে পড়েছেন। স্যারকে যানজটের কথা জানিয়েছি। স্যার বলেছেন দ্রুত অফিসে পৌঁছাতে।’ রামপুরায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথনের কারণে হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে হাতিরঝিলের ভেতর দিয়ে যে গাড়িগুলো যেত, সেগুলো বাড্ডা দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে এই রাস্তা গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। এতেই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com