বিপদে হতাশা নয়, বরং আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে ভরসা করায় রয়েছে শান্তি ও মুক্তি। নিজেদের ঈমান, ভরসা ও ধৈর্য ধরে রাখতে ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে চলা একান্ত আবশ্যক। যেসব বিশ্বাসে রয়েছে নিরপত্তা, তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভের অনুপ্রেরণা। আর তাহলো-
>> বিপদে প্রতিদানের আশা রাখা
মহামারি মানুষের জন্য শাস্তিস্বরূপ নাজিল হলেও তা মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। একবার তিনি আল্লাহর রাসুলের কাছে মহামারি বিষয়ে জানতে চান। তখন দয়ার নবি জানান-
‘মহামারি হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি শাস্তি, তবে মুমিনদের জন্য এটি রহমতস্বরূপ। মুমিনদের মধ্য থেকে যারাই মহামারি কবলিত এলাকায় ধৈর্য্যধারণ করে অবস্থান করে এবং এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, তা-ই সে ভোগ করবে তবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শহিদি মর্যাদা দান করবেন।’ (বুখারি)
>> আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা রাখা
মহামারি কিংবা বিপদে কোনো মুমিন বান্দার কিংবা তাদের কোনো নিকটজনদের ক্ষতি হয় বা আক্রান্ত হয় তবে তাদের উচিত সে পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট না হওয়া। ধৈর্যধারণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর কাছে রোনাজারি করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ দোয়া করা।
– হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের দোয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা-
رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلٰى وٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صٰلِحًا تَرْضٰىهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ الصّٰلِحِينَ
উচ্চারণ : রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’ (সুরা নামল : আয়াত ১৯)
– হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামের দোয়া বেশি বেশি পড়া-
لَااِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْن
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
– বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
>> তাওবাহ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা
বিপদ মহামারিতে গোনাহমুক্ত জীবন যাপনের বিকল্প নেই। বিগত জীবনের অপরাধ থেকে তাওবাহ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে তাওবার কথা বলেছেন। তাই বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা।
– اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ القَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আসতাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহ হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
– গোনাহ মাফে হজরত আদম আলাইহিস সালামের সেই বিখ্যাত দোয়া পড়া-
رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخٰسِرِينَ
উচ্চারণ : রাব্বানা জ্বালামনা আংফুছানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান্না মিনাজ জ্বালিমিন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
>> দুনিয়ার তুলনায় পরকালকে প্রাধান্য দেয়া
নিঃসন্দেহে একজন মুসলিম দুনিয়ার তুলনায় পরকালকে অধিক পছন্দ করে। এ কারণেই মুমিন বান্দা আখিরাতের মুসিবতের চেয়ে পার্থিব বিপদ আপদকেই অধিক পছন্দ করে। কারণ দুনিয়ার সব বিপদই পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা তাঁর কোনো বান্দার কল্যান চান তখন তিনি তাকে দুনিয়ায় বিপদগ্রস্ত করেন। আর যখন আল্লাহ তাআলা তাঁর কোনো বান্দার অকল্যান চান তখন তিনি দুনিয়ায় তাকে ছাড় দেন এবং আখেরাতে তাকে হিসাবের সম্মুখীন করেন।’ (তিরমিজি)
তাই দুনিয়ার সঙ্গে পরকালের কল্যান কামনায় বেশি বেশি এ দোয়া পড়া-
رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الْءَاخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান্নার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)
>> বিপদ মুমিনের ক্ষমা লাভের মাধ্যম
দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-মহমারি আল্লাহর ক্ষমা লাভের অন্যতম মাধ্যম। সুরা বাকারায় আল্লাহ তাআলা মুমিন-বান্দাকে সে পরীক্ষা গ্রহণের আভাস দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوٰلِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرٰتِ ۗ وَبَشِّرِ الصّٰبِرِينَ
তোমাদেরকে ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি (এসবের) কোনকিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব, ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-
وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ الْعَذَابِ الْأَدْنٰى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো সেই মহাশাস্তির আগে যাতে করে তারা (আমার দিকে) ফিরে আসে।’ (সুরা সাজদাহ : আয়াত ২১)
বান্দাকে পরীক্ষা বা শাস্তি দেয়ায় আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো বান্দা যেন গোনাহ থেকে তার পথে ফিরে আসে। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ আয়াতে লঘু শাস্তি বলতে এই দুনিয়ার বিপদ-আপদ এবং রোগ-বালাইকে বোঝানো হয়েছে। আর পৃথিবীতে মানুষের প্রতি যেই বিপদই আসুক না কেন তা হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ যাতে করে মানুষ আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসে।
সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাই মুমিনের অন্যতম কাজ। মুমিন যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, তখন সে বুঝতে পারে যে, মহান আল্লাহর দেয়া অগণিত নেয়ামত অগ্রাহ্য করার কারণে সে বিপদে পতিত হয়েছে। যার ফলে তাদের ওপর নেমে এসেছে বিপদ-আজাব কিংবা মহামারি। তাই মুমিনের উচিত বেশি বেশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। বেশি বেশি তাওবা ইসতেগফার কা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনাসহ সব বিপদ-আপদে ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর নসিহতগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করে দৃঢ়তা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। পরকালের কল্যাণ লাভে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ই-খ/খবরপত্র