চট্টগ্রাম টেস্টে হারার পর ঢাকা টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল টাইগারদের। কিন্তু মিরপুরের টেস্টে গতকাল রোববার টাইগারদের সেই প্রত্যয়ের ছিটেফোটাও দেখা গেল না। বোলিং তুলনামূলকভাবে ভালো বলা গেলেও ব্যাটিং হয়েছে যাচ্ছেতাই। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের টার্গেট ছিল মাত্র ২৩১ রানের। হাতে ছিল পুরো দেড়দিন। কিন্তু ও টপঅর্ডারদের ব্যর্থতা ও মিডল অর্ডারদের খামখেয়ালিতে ১ দিন বাকি থাকতেই ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ক্যারিবিয়দের ৪০৯ রানের বিপক্ষে বাংলাদেশ তুলে ২৯৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৩ রানে এগিয়ে থেকে টাইগার বোলিংয়ে বেশিদূর যেতে পারেনি ক্যারিবিয়রা। ১১৭ রানেই অলআউট হয় উইন্ডিজ। এতে আগের রানের সাথে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ২৩১ রানে। দেড়দিন হাতে রেখে এই রান টপকাতে ২১৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে ১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এই হারে ২ ম্যাচ চেস্ট সিরিজে হোয়ায়াইটওয়াশ হলো মুমিনুলরা। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট ছোটাচ্ছিলেন দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। ইনিংসের ১২তম ওভারেই পূর্ণ দলীয় অর্ধশতক। আর অর্ধশতকপূর্ণের পরেই ছন্দ পতন। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের বলে খোঁচা মারতে গিয়ে স্লিপে থাকা ফিল্ডারের হাতে বল তুলে দেন সৌম্য। প্রথমে উইকেটরক্ষক ক্যাচ মিস করলেও স্লিপে থাকা কর্নওয়াল হাতছাড়া করেননি সুযোগ।
তবে উইন্ডিজ খেলোয়াড়দের আবেদনের পরেও আম্পায়ার আউট না দিলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় উইন্ডিজ। আর চ্যালেঞ্জে জিতে ঠিকই সৌম্যের (১৩) উইকেট তুলে নেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। তামিমের ইকবালের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বেশ এগোচ্ছিল টাইগাররা। তবে সৌম্যর ফেরার পর অর্ধশতক তুলে নিয়ে আর উইকেটে থাকতে পারলেন না তামিম। ব্র্যাথওয়েটের দ্বিতীয় শিকার হয়ে দলীয় ৭০ রানে ফিরলেন তামিম (৫০)।
দ্রুতই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন নাজমুল হোসেন শান্ত (১১)। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ শান্ত। দলীয় মাত্র ৭৮ রানেই ফিরলেন শান্ত। বাংলাদেশ বড় বিপদে পড়ে মুশফিকুর রহিমের বিদায়ে। ৩০ বলে ১৪ রান করে জোমেল ওয়ারিক্যানের শিকার হন তিনি। মুশফিক না ফিরতেই সাজঘরে ফিরেছেন মিথুন। ১২ বলে ১০ রান করে রাহকিমের শিকার হয়েছেন তিনি। ওয়ারিক্যানের টার্ন ও বাউন্স ডেলিভারীতে কর্নওয়ালের ইনিংসের দ্বিতীয় ক্যাচ ফিরলো বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৬৮ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২৬ রান করেন তিনি। এরপর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি লিটনও। কর্নওয়ালের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটা কাট করতে চেয়েছিলেন লিটন দাস। ব্যাটে-বলে হলো না। কোণা ছুঁয়ে ক্যাচ উঠল উইকেটরক্ষক জশুয়া দা সিলভার হাতে। প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের বিদায়ে তখনই আশা ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ শিবির। কর্নওয়ালের আরেকটি শিকার তাইজুল ইসলাম। ডানহাতি স্পিনারের সোজা বল মিস করে এলবিডব্লিউ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ২৫ বলে ৮ রান করে তাইজুল ফিরেছেন সাজঘরে। নিজের ভুলে সাজঘরে ফিরলেন নাঈমও। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের বলটাকে বুঝতেই পারেননি তিনি। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করেছে ভেবে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যা সরাসরি আঘাত হেনেছে প্যাডে। এলবিডবি¯œউর আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার। পরে বাংলাদেশ রিভিউ নিয়ে দেখলো বলটা পড়েছিল স্ট্যাম্প লাইনেই। উইকেট আর রিভিউ দুটোই হারায় বাংলাদেশ। নিজের খেলা শেষ তিন ওভারে প্রতি আক্রমণের কৌশলে এগোচ্ছিলেন মিরাজ। তুলে নিয়েছিলেন ২৫ রান। তাতে জয়ের আশাও সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ শিবিরে। তবে লাভ হয়নি শেষমেশ। ওয়ারিক্যানের বলে স্লিপে কর্নওয়ালের হাতে ক্যাচ দিয়ে আশার সমাপ্তি ঘটান মিরাজ। ধবলধোলাই নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।