অধ্যক্ষের বাধায় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দুই সংগঠক, শাহজাদপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলক ও রৌমারী যুব শিবিরের মুক্তিযুদ্ধের রিক্রুটিং ক্যাম্প ইনচার্জ, শাহজাদপুর কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন জিএ ও থানা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শাহিদুজ্জামান হেলাল এবং তৎকালীন ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ফরহাদ হোসেনের কবর সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণে মাননীয় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্বেও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুমতির দোহাই দিয়ে অধ্যক্ষ সরাসরি এ সংস্কার কাজ নাকচ করে দেয়ায় প্রখ্যাত দুই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে হতাশা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জানা গেছে, ১৯৭২ সনের ৯ জুন শাহজাদপুর কলেজে একটি কৃষক সমাবেশ চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে দুষ্কৃতিকারীদের সশস্ত্র হামলায় ছাত্র নেতা ওই দুই বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৬ জন নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। হত্যাকান্ডের পর হাজার হাজার ছাত্র-জনতার দাবির মুখে কলেজ ছাত্র সংসদের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহিদুজ্জামান হেলাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেনকে শাহজাদপুর কলেজে (বর্তমান সরকারি কলেজ) অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশে সমাহিত করা হয়। সেই সময়ে ওই কবর দু’টি ইট-সিমেন্ট দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছিলো। এর প্রায় দীর্ঘ ৪৯ বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় কবর দু’টি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহিদুজ্জামান হেলাল’র পরিবারের পক্ষ থেকে কবর দু’টি পূনঃনির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আব্দুস সাত্তারের নিকট অনুমতি চাওয়া হলে প্রথমে স্টাফ কাউন্সিলের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংস্কারের বিষয়ে অসম্মতি জানান। এমতবস্থায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তাদের একটাই প্রশ্ন, দু’জন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধার কবর দু’টি কী পূনঃনির্মাণ করা আদৌও সম্ভব হবে না? এ বিষয়ে শাহজাদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘যেহেতু সরকারি কলেজ, সেহেতু সংস্কারের অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুমতি ছাড়া আমার পক্ষে কবর সংস্কারের অনুমতি দেয়া সম্ভব নয়।’ এ বিষয়ে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আজাদ রহমান জানান, ‘এখানে তো নতুন কোন কবর দেয়া হচ্ছে না। কবর তো আছেই। কবরটি জরাজীর্ণ হওয়ায় তা সংস্কারে তো বাধা থাকার কথা নয়! যখন এই দুই মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়, তখন কলেজটি সরকারি ছিলো না। এখন কলেজটি সরকারি হলেও কবর দু’টি সংস্কারে বাধা দেয়া সমীচীন বলে মনে করি না। এটা সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।