শীত যেতে না যেতেই হঠাৎ করে সিলেট নগরজুড়ে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মশার এই যন্ত্রণায় রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরের ২০ লক্ষাধিক মানুষ। বাজার থেকে কেনা সাধারণ কয়েল বা স্প্রে দিয়েও মশার উপদ্রব ঠেকানো যাচ্ছে না। নগরবাসী বলছেন, সাধারণত বর্ষাকাল শুরু হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকাল শুরুর আগেই সিলেট নগরে বেড়েছে মশার উপদ্রব। প্রায় মাসখানেক ধরে নগরজুড়ে মশা রাজত্ব বিস্তার করছে। রাতে তো বটেই দিনেও মশার যন্ত্রণায় বাসাবাড়ি এমন কি অফিসেও টেকা দায় হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এর কাছে জোরালো উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ নিয়ে ব্যস্ততার কারণে এবার মশক নিধন অভিযান (মশার ওষুধ) ছিটানো দেরিতে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের কর্মকর্তারা। গতকাল রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বেশিরভাগ এলাকায় ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে ড্রেন-ছড়াগুলো ভরে আছে আবর্জনায়। সড়কের আশপাশেও পড়ে থাকছে আর্বজনার স্তুপ। এতে সহজেই বিস্তার লাভ করছে মশা।
সিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেরিতে হলেও পহেলা মার্চ থেকে মশক নিধন অভিযান তারা শুরু করেছেন। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে শিগগিরই মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ শেষ হবে। এরপরপরই মশার যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমে আসবে। সিসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ৭, ১২, ১৩, ১৭, ২১ নং ওয়ার্ডে চলছে মশক নিধন কার্যক্রম। রোববার থেকে বন্দর জিন্দাবাজার, আম্বরখানায় এই মশক নিধন কার্যক্রম চলবে। পর্যায়ক্রমে নগরের সব ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পরেই ওষুধ (লার্ভিসাইট) স্প্রে করা হচ্ছে মেশিন দিয়ে। মশার ডিম ধ্বংস করার জন্য এই ওষুধ স্প্রে ব্যবহার করা হয়। বড় মশা মারার জন্য এডাল্টিসাইট স্প্রে করা হয় ফগার মেশিন দিয়ে। রোববার থেকে লার্ভিসাইড স্প্রের পাশাপাশি ফগার মেশিনও ব্যবহার করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মশা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানান তারা। নগরের ঘাসিটুল এলাকার গৃহিণী শাহিদা জামান বলেন, ‘অনেকদিন হবে মশার উৎপাত বেড়েছে। আগে বৃষ্টি হলে মশার উপদ্রব বাড়ত। কিন্তু এখন বর্ষাকাল শুরুর আগেই মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। সকাল-সন্ধ্যা বলে কোনো কথা নেই। সব সময়ই মশার উপদ্রব থাকে। কয়েল দিয়েও মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
বাগবাড়ি এলাকার গৃহিণী খালেদা হোসেন বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় বসবাস করা এখন দায়। এমনকি মশার স্প্রে করেও তাদের দমানো যাচ্ছে না। মশার জন্য এখন দিনের বেলায়ও মশারি টানাতে হয়।’ আখালিয়ার লেকসিটি এলাকার আব্দুল জব্বার বলেন, ‘গত বছর এমন সময় আমাদের এলাকায় মশার তেমন উপদ্রব তেমন ছিল না। কিন্তু এ বছর বর্ষাকাল আসার আগেই মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। গত এক মাস যাবত মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সবাই। সিসিকের উচিত ছিল ফিল্ড পর্যবেক্ষণ করে আরও আগেই মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করা।’
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ মার্চ থেকে আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত এক দেড় মাস যাবত এই কার্যক্রম একটু ধীরগতিতে চলে। কারণ আমার কোভিড ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই এই মশক নিধন কার্যক্রমে নজর দেয়া হয়নি। এখন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশাকরি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’ তবে মশার উপদ্রব বাড়লেও এই মশার কামড়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। কিন্তু এখন যে মশাগুলো নগরে আছে সেগুলো এডিস নয় কিউলেক্স মশা। যেগুলো ড্রেন, ছড়া, নালায় জন্ম নেয়। এই মশার কামড়ে ভাইরাসজনিত কোনো রোগ হয় না। মসকিটো এনার্জি বা বিভিন্ন ধরনের এনার্জি যাদের আছে তাদের মশার কামড়ের কারণে সমস্যা হতে পারে।’
সিটি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘এডিস মশার প্রজনন কাল হচ্ছে বর্ষাকাল। তাই এই মশাকে এডিস মশা ভেবে আতঙ্কিত হবেন না। এডিস মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হয় বৃষ্টির সময়। কারণ এডিস মশার জন্ম হয় বৃষ্টির জমে থাকা পানি থেকে। তাই মার্চের পর থেকে আমরা এডিস মশার লার্ভা সংগ্রহ শুরু করব। এখন লার্ভিসাইট স্প্রের মশার ডিম ধ্বংস করা হচ্ছে। ফগার মেশিন স্প্রে করলে এডাল্ট মশাও নিয়ন্ত্রণে আসেবে।’