রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

অমর একুশে বইমেলা: এবার ৫৪০ প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪ স্টল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। বিপত্তি ঘটে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে। হঠাৎ করেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বইমেলা হবে না গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকেই মেলা শুরু হয়। তবে নতুন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এখন। প্রকাশকদের শঙ্কা, করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বইমেলা। গত মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের বক্তব্যেও সে ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে মেলার ব্যাপারে অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।’
বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। গত বছর বইমেলা শেষ হওয়ার পর পরই বাংলাদেশে বিশ্ব মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এতে থমকে যায় সবকিছু। করোনার প্রভাবে এখনো বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় এবার অমর একুশে বইমেলা নিয়ে ছিল নানা দোলাচল। বাংলা একাডেমি প্রথমে অনলাইনে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রকাশকরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন মার্চে করোনাভাইরাসের দাপট কমে আসতে পারে। এমন পরামর্শে এবারই প্রথম অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে স্বাধীনতার মাস মার্চে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি। ফলে আগের মতোই খোলা মাঠে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, এবারের মেলায় অংশ নেয়া ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৬টি এবং বাকি স্টলগুলো বসানো হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এবারের মেলায় ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কার কথা বিবেচনায় রেখে দর্শনার্থীদের জন্য চারটি বড় আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
বইমেলা শুরু হওয়ায় সবার মনে আনন্দের ঢেউ খেললেও সময়ের আগে শেষ হওয়ার শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রকাশকরা। তাদের বক্তব্য হলো, ধারদেনা করে তারা বিনিয়োগ করেছেন। এখন যদি মেলা না জমে কিংবা কিছুদিন চলে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির পরিচালক কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমরা শঙ্কা করছি, ২৬ মার্চের পর মেলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে দেশে লকডাউনের সুপারিশও করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। করোনা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি আমাদের জন্য বড় দুঃসংবাদ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, “নো মাস্ক, নো সার্ভিস” পলিসি মেনে মেলা করবেন প্রকাশকরা।’ অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে প্রকাশকরা ৭০-৮০ শতাংশ মূলধন খাটিয়ে ফেলেছেন। এমন অবস্থায় মেলার ব্যাপারে যেকোনো ভিন্ন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য চূড়ান্ত ক্ষতি বয়ে আনবে। সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক আজরা পারভীন সাঈদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত শপিংমল, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালু থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন মেলার ব্যাপারে দ্বিতীয় কোনো সিদ্ধান্ত জানানো না হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা সুষ্ঠুভাবে শেষ হবে আমরা এ আশা করছি।
শুধু প্রকাশক নয়, দুশ্চিন্তা বাড়ছে লেখকদেরও। সাহিত্যিক আনিসুল হক জানালেন, ‘এতদিন মেলা করার পক্ষে আমিই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। গত এক সপ্তাহের পরিস্থিতি দেখে এখন আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। মেলা চলবে কিনা বা কীভাবে চলবেÍপুরো ব্যাপারটিই এখন বিশেষজ্ঞদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তারা যা ভালো মনে করেন, আমরা সেটাই মেনে নেব।’ লেখক ও অনুবাদক মাইনুল ইসলাম মানিক বলেন, বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার অস্বীকার করছি না। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। একজন মানুষও যদি মেলার কারণে করোনায় আক্রান্ত হয় কিংবা প্রাণহানির শঙ্কা থাকে, তাহলে বলব মেলা এগিয়ে না নেয়াই ভালো।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মেলা এগিয়ে না নেয়াই ভালো এমনটিও বলেছেন তারা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক হোসাইন বলেন, ‘জাতীয় জীবনের জন্য মেলা অপরিহার্য কোনো বিষয় নয়। যেহেতু মেলায় প্রকাশকদের ব্যবসার একটি বড় বিষয় আছে, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা করা যেতে পারে। তবে আমি বলব, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় এ মুহূর্তে মেলা না এগোনোই ভালো। আমাদের দেশের লোকজন যে খুব একটা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করে চলে তা-ও কিন্তু না।’ তবে ভিন্নমতও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মেলা বন্ধ করার কথা না ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘করোনা আতঙ্কে কোনো কিছু বন্ধের পক্ষে আমি নই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছুই করা যাবে। সমস্যা হলো, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাই না। বাংলা একাডেমির মেলায় বিশাল পরিমাণ জায়গা রয়েছে। সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সুন্দরভাবেই মেলা করা সম্ভব। তাই মেলা বন্ধ করা বা লকডাউন দেয়া, এগুলো কোনো ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না।’
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারটি পরিকল্পনায় রেখেছি। করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বিষয়টি এখন আরো বেশি গুরুত্ব দেব।’ সংক্রমণ বাড়ার কারণে মেলায় পাঠকদের উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সে রকমটি মনে হচ্ছে না। মেলা ঘিরে লেখক-প্রকাশক-পাঠক সবাই এতদিন প্রতীক্ষায় ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠকরা মেলায় আসবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা। সবকিছুই তো চলছে, আশা করি মেলাও ঠিকঠাক চলবে।’ গত দুই দিনের উপস্থিতি আশানুরূপ হয়েছে বলেও জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com