সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

তোষামোদি

আবু তালহা রায়হান:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১

এক. মানুষ প্রশংসাপ্রেমী। সে তার স্বীয় কর্মগুণে বাহবা পেতে চায়। মানুষ কাজ করে, সফলতার স্বপ্ন বুনে, জগতে শ্রেষ্ঠ হতে চায়। মানুষ চায়, পৃথিবীর বুকে সে সর্বোচ্চ সম্মানী ও প্রশংসিত ব্যক্তি হোক। তার মর্যাদা হোক আকাশচুম্বী। চারদিকে কেবল তার বিজয় ধ্বনি বাজুক। এরকম হাজারো অলীক স্বপ্ন মানুষ তার মনের মধ্যে লালন করে। মানুষের লোভ দু’টি জিনিসে। সম্পদ আর প্রশংসায়। মানুষ যতই ধনী হয় না কেন, সম্পদের লোভ কিছুতেই কমে না। যার যত ধন আছে, সে আরো চায়। তেমনই মানুষের যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, এতে সে বাহ্যিকভাবে তৃপ্ত হলেও আত্মতৃপ্ত হয় না। মানুষ মুখ দিয়ে না বললেও প্রশংসার জন্য তার প্রবল মনোবাঞ্ছা থাকে। সে চায়, পুরো পৃথিবী তার প্রশংসায় লিপ্ত হোক। তাকে বাহবা জানাক। মানুষের এই চাওয়া, এই স্বপ্ন আমরণ বেঁচে থাকে। মৃত্যুর আগ মুহূূর্ত পর্যন্ত মানুষ কেবল চাইতেই থাকে। মানুষের ধারণা, একসময় সে সফল হবে। গোটা বিশ্ব তাকে অভ্যর্থনা জানাবে।
দুই. প্রশংসা মানুষের সহজাত ধর্ম। অভিনন্দন-অভ্যর্থনা, বাহবা মানুষকে আত্মমর্যাদাবোধে জাগিয়ে তোলে। ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেয়। সফলতার দিকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু অতিরিক্ত প্রশংসা মানুষকে বিপথগামী করে। নীতির পথ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। আমরা মুসলমান। আমাদের ধর্ম ইসলাম। ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। সত্য ও নীতির ধর্ম। ইসলাম যেমনভাবে আল্লাহর সৃষ্টি মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছে, সর্বোচ্চ প্রশংসায় প্রশংসিত করেছে, ঠিক তেমনই মানব জীবনে অতিরিক্ত প্রশংসা করাকে ইসলামে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘যারা স্বীয় কৃতকর্মে সন্তুষ্ট এবং তারা যা করেনি তার জন্য প্রশংসাপ্রার্থী, এরূপ লোকদের সম্পর্কে ধারণা করো না যে, তারা শাস্তিবিমুক্ত, বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি’ (সূরা আল-ইমরান : ১৮৮)।
কারো সামনে কিংবা পেছনে অতিরিক্ত প্রশংসা করা থেকে রাসূল সা: কঠোর নিষেধ করেছেন। রাসূল সা: বলেছেন, ‘কারো সামনে তার প্রশংসা করা তার পিঠে ছুরি মারা বা তার গলা কেটে ফেলার সমান’ (আদাবুল মুফরাদ : ৩৩৫)।
অন্য একটি হাদিসে নবীজী সা: বলেছেন, ‘কেউ তোমাদের সামনাসামনি প্রশংসা করলে তার মুখে তোমরা পাথর ছুড়ে মারো’ (আদাবুল মুফরাদ : ৩৪০)।
জনৈক সাহাবি রাসূল সা:-এর কাছে অপর এক সাহাবি সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসায় লিপ্ত হলেন, তা শুনে রাসূল সা: বললেন, ‘আফসোস, তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে!’ কথাটি নবীজী সা: তিনবার বললেন। অতঃপর বললেন, ‘যদি কারো প্রশংসা করতেই হয়, তবে সে যেন এভাবে বলে যে, আমি তার ব্যাপারে এমন এমন ধারণা পোষণ করি। কারণ তার প্রকৃত হিসাব মহান আল্লাহ তায়ালাই জানেন’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত : ৪৮২৭)। অতিরিক্ত প্রশংসা ও তোষামোদের দ্বিমুখী ক্ষতি রয়েছে। যে ব্যক্তি প্রশংসা করে আর যার প্রশংসা করা হয়, তারা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং কারো প্রশংসা, তোষামোদ, খোশামুদ করতে গিয়ে অতিরঞ্জিত না করাই ইসলামের সুষ্ঠু বিধান। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন! আমীন। লেখক : ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com