কঠোর স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আলু উৎপাদনকারী, রপ্তানীকারক, সরকারি কর্মকর্তা এবং এফএও বাংলামেদের প্রতিনিধিবৃন্দ রবিবার সকালে রংপুর অঞ্চলের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে এই বছরের আলু রপ্তানী উদ্বাধন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি যৌথভাবে এই কর্মসূচি আয়োজন করেছে। আলু চাষীরা কোভিড ১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এই বছর তাদের ফসল উত্তোলন করেছে। বলা বাহুল্য, অনেকে তাদের বিনিয়োগ থেকে লাভ করতে পারবেন কিনা বা তাদের আলু নষ্ট হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আলু রপ্তানীকারকদের সাথে তাদের অংশীদারিত্ব এবং ‘উত্তম কৃষি চর্চা অনুযায়ী মানসম্পন্ন আলু উৎপাদনের ফলে তাদের সকল আশঙ্কা ভুল প্রমানিত হয়েছে। এফএও গ্লোবাল এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রামের মিসিং মিডিল ইনিশিয়েটিভের আওতায় ২০১৮ সাল হতে রংপুরে ৩টি আলু উৎপাদনকারী সমবায় সংগঠনকে নিয়ে কাজ করছে। সমবায়গুলোকে আলু উৎপাদনের জন্য ‘উত্তম কৃষি চর্চা’ বিষয়ের পাশাপাশি আর্থিক ও ডিজিটাল স্বাক্ষরতার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তারা শক্তিশালী এবং সুসংহত। এফএও এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংগঠনগুলোকে রফতানিকারক, রিটেইল চেইন শপ এবং কোল্ড স্টোরেজের সাথে যুক্ত করেছে। রপ্তানীকারকদের সাথে সংযোগের মাধ্যমে, গত বছর সংগঠনগুলো মোট এক হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানী করেছিল। এ বছর আরও অধিক রপ্তানীকারকদের সাথে সংযোগ স্থাপনের ফলে সদস্যদের পাশাপাশি প্রতিবেশি আলুচাষীরাও এই রপ্তানীকারকদের কাছে সংগঠনের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে তাদের আলু বিক্রি করতে পারবে। বদরগঞ্জ উপজেলার এক তরুণ আলু উৎপাদনকারী সালমা বলেন, ‘গত বছর আমাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেক কৃষক তাদের উৎপাদন বাড়িয়েছেন এবং আমাদের সংগঠনকে আলু রপ্তানীকারকদের কাছে তাদের আলু বিক্রির জন্য অনুরোধ করেছেন। রপ্তানীকারকরা আমাদের সংগঠনকে উৎসাহ প্রদান করে ঝামেলা মুক্ত করেছে। শক্তিশালী সংগঠনের মাধ্যমে উচ্চ মানের আলু উৎপাদন এবং রপ্তানীকারকদের সাথে তাদের অংশীদারিত্ব এই অঞ্চলে আলু উৎপাদনকারীদের জীবন-জীবিকা টেকসইকরণে ভূমিকা রাখবে। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বিরহিম আলু উৎপাদনকারী দলের সভাপতি মোকসেদুল বলেন, ‘প্রতিবছর আলুর মৌসুমে দাম ওঠানামা করলেও আমাদের কৃষকরা রপ্তানীকারকদের কাছ থেকে নগদে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।’ বাংলাদেশ প্রতিবছর ১ কোটি ১০ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপাদন করে, যার মধ্যে প্রায় ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত। এই উদ্বৃত্ত আলুব্যবহারের উপায় বের করার সাথে মূল্যসংযোজন ধারায় সম্পৃক্ত কৃষক এবং অন্যদের জন্য বিশাল সমৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এর গুরুত্ব সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রনালয় ভালোভাবে অবহিত রয়েছে। এফএওর সিনিয়র এ্যাডভাইজার মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষনা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. এছরাইল হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার ওয়াহেদ, রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ও সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক সর্দারসহ অন্যরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে এখন উদ্বৃত্ত আলুনিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের রপ্তানী প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে এবং রপ্তানী ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী জাত উদ্ভাবিত করতে হবে। এফএও এই খাতকে আরও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি জনাব রবার্ট সিম্পসন বলেন, ‘এফএও রপ্তানীর পাশাপাশি দেশীয় ভোক্তাদের জন্য মানসম্পন্ন আলু উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। উৎপাদনকারী সংগঠন এখানে মূখ্য, খাবার এবং বীজ আলুর ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি খামার স্তরের স্টোরেজ সুবিধা স্থাপনে বেসরকারি খাতকে নিযুক্ত করে চলেছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উন্নতি কল্পে এই অংশীদারিত্ব এবং কোভিড মহামারীর উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গ্রামীণ জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার সম্ভাবনা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীরা। এবছর ২ লাখ মেট্টিক টন আলু বিদেশে রপ্তানী করার লক্ষ নেয়া হয়েছে বলে সচিব জানান।