সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন

লকডাউনেও রাস্তায় এত মানুষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপ করেছে সরকার। ৫ এপ্রিল থেকে এই বিধিনিষেধ পালনের মেয়াদকাল শুরু হয়। চলবে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত। এই সময়ে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কথা থাকলেও ঘরে বসে নেই মানুষ। প্রথম দিনে রাস্তায় অফিসগামী মানুষের ভিড় থাকলেও দ্বিতীয় দিনে অপ্রয়োজনে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষ পথে আছে ঠিক কিন্তু নেই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন। যার কারণে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছে আর মাস্ক বিতরণ করছে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও স্বাভাবিক চলাচল ছিল সাধারণ মানুষের। পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানে আড্ডা, রাস্তায় অযথা ঘোরাঘুরি কিংবা খেলাধুলা করার মতো ঘটনা চোখে পড়েছে। আর গণপরিবহন না থাকায় গাদাগাদি করে রিকশা, ভ্যানগাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা কিংবা ভ্যানগাড়ি করেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছে মানুষ। সেখানে নেই স্বাস্থ্যবিধি পালনের নমুনা। সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছুই নেই। সকালে অফিস টাইমে মানুষের চাপ বেশি থাকলেও সারা দিনের চিত্র অন্যান্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মতোই ছিল। অনেকেই রাস্তায় বের হয়েছেন ‘লকডাউন’ কেমন চলছে সেটার দেখার আগ্রহ নিয়ে।
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রশিদ বাসার থেকে বেরিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। হাতে বাজারের ব্যাগ থাকলেও মুখে ছিল না মাস্ক। জিজ্ঞাসা করতেই অনেকটা বিরক্ত হয়ে বললেন, খেয়াল ছিল না।
তার পিছু পিছু বাজারের দিকে যেতেই চোখে ছানাবড়া। বাজারে ঘিঞ্জি পরিবেশের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। ক্রেতা কয়েকজনের মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতা কারও মুখে নেই মাস্ক। সেখানে নেই সামাজিক দূরত্ব পালনের কোনও ব্যবস্থা। বাজারের সবজি বিক্রেতা ইউনুস মিয়ার কাছে মাস্কের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওইসব গরিব মানুষের হয় না। আর কাস্টমার তো দূরেই থাকে। সমস্যা নাই। এতদিন কিসু হয় নাই আর কী হইবো এখন?’ শুধু হাট-বাজার নয়, উন্মুক্ত স্থানে কিংবা পথের মধ্যেও মানুষের স্বাস্থ্যবিধি পালনের নজির আছে খুব কম। আর সামাজিক দূরত্ব মানার অভ্যাস নেই বললেই চলে। অফিসগামী যাত্রীদের সকালে সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম গণপরিবহন। বাস বন্ধ থাকায় ভরসা এখন রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশা। এই সুযোগে অতিরিক্ত আয়ের পথ দেখছেন চালকরাও। তাই ২০০ টাকায় একজনকে না নিয়ে জনপ্রতি ১০০ টাকায় ৩-৪ জন করে নিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। তাছাড়া রিকশা ভাড়াও এই সুযোগে বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ অফিসগামী যাত্রীদের।
সকালে অফিসের জন্য কাওরানবাজার মোড়ে পরিবহন খুঁজছিলেন সামাদ আলী। তার আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও ৩০-৪০ জন। সেখানে অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। আবার একটি গাড়ি কিংবা সিএনজি এলেই সেটিকে ঘিরে ধরছেন অন্তত ১৫-২০ জন। দামাদামি হয়ে গেলেই যে যার মতো উঠে পড়ছেন।
সামাদ আলী বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমাদের দুর্ভোগ হচ্ছে অনেক। অফিস খোলা রেখে যানবাহন বন্ধ করার কোনও মানে হয় না। দুদিনে অনেক টাকাই অফিস যাওয়া আসায় চলে যাবে আমাদের।
সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ প্রশাসন নেমেছে অভিযানে। জরিমানা করে মাস্ক পরতে অনেকটা বাধ্য করা লাগছে তাদের। সোমবার (৫ এপ্রিল) শাহবাগ মোড়ে অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করতেই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা তদারকিতে ঢাকায় অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল থেকেই গুলশান, ধানমন্ডি ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় এসব অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. মামুনুর রশিদ ঢাকার ধানমন্ডি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে গুলশান-২ নম্বর এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এ সময় ৩১৫টি দোকান, পার্লার, সবজি দোকান ইত্যাদি পরিদর্শন করা হয়। এ সময় লাইসেন্সবিহীন এবং ফুটপাতের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করা, মাস্ক না পরায় ৮ জনকে ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মিরপুর-১০ অ লের আ লিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহা বিনতে সিরাজের নেতৃত্বে দারুসসালাম এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এ সময় মাস্ক ছাড়া রাস্তায় ঘোরাঘুরির অপরাধে ১০ জনকে মোট ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
হরিরামপুর অ লের আ লিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরিনের নেতৃত্বে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপদ রোড এবং ময়লার মোড় এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে যথাযথভাবে মাস্ক না পরার কারণে ১০টি মামলায় মোট ১ হাজার ২৯০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এছাড়া একটি হোটেলের ভিতরে লোকজনকে বসিয়ে খাবার পরিবেশনের অপরাধে হোটেল মালিককে ৫ হাজার জরিমানা করা হয়। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ৯০টি মাস্ক বিতরণ করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানার নেতৃত্বে অ ল ১০-এর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। মাস্ক না থাকায়, সরকারের জারিকৃত আদেশ অমান্য করায় এবং ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় দুটি মামলায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া বাজার মনিটরিং করে, বাজার কমিটির সঙ্গে কথা বলে সব স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য এবং বাজার মূল্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
উত্তরখান অ লের আ লিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবেদ আলীর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এ সময় করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ভাটারা অ লে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় মোট ৮টি মামলায় ৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং জনগণকে সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা প্রতিপালনে সচেতন করা হয়।
উল্লেখ্য, দেশে গত ৯ দিনে ছয়বার রেকর্ড ভেঙেছে করোনা শনাক্ত। গত বছরের ২ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয় একদিনে ৪ হাজার ১৯ জন। গত ২৯ মার্চ সেই রেকর্ড ভেঙে করোনা শনাক্ত দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৮১ জন। এরপর আজ মঙ্গলবার দেশের ইতিহাসে করোনার সর্বোচ্চ শনাক্ত এবং মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এদিন শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২১৩ জন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষা না করলে এই সংক্রমণের হার কমানো মুশকিল হয়ে যাবে।- সূত্র: বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com