গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনের জমি ও প্রায় দেড় শতাধিক দোকানপাট নিজেদের দখলে নিতে দু-দফায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সন্ত্রাসী হামলার মুলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই বাজারে বনের জমিতে যেসব দোকানপাট রয়েছে, সেগুলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। গুলিবিদ্ধ যুবক হলেন, জামালপুরের সদর থানার পাকুল্লা এলাকার রাজা মিয়ার ছেলে মানিক হোসেন(২৮)। অপর দিকে গ্রেপ্তারকৃত হলেন- টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে খাদেম আলী(৫৫)। এলাকাবাসী, বনবিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খাদেম আলী প্রায় ২০ বছর আগে জীবিকার খোঁজে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আসেন। পরে তিনি উপজেলার পূর্বচান্দরা বোর্ডমিল এলাকায় বনের জমিতে বাড়ি নির্মাণের পর তার পরিবারের লোকজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এরপর তিনি চন্দ্রা বন বিট অফিসের বন প্রহরী হিসেবে কাজ শুরু করেন। মাত্র ৪ বছর সেখানে কাজ করে তিনি বনের দালাল হয়ে উঠেন। তিনি কৌশলে নিজের নামে ওই এলাকায় বনের জমি জবর-দখল করে বেশ কিছু দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেন। এছাড়াও বনের জমিতে দোকান প্রতি ১ থেকে ২ লাখ টাকা আদায় করেন দালাল খাদেম আলী। এভাবে সেখানে বনের জমিতেই প্রায় দেড় শতাধিক দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। আর খাদেম আলী ধীরে ধীরে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরপরও তিনি প্রতি মাসে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। কিন্তু সম্প্রতি সব দোকানদাররা মিলে সেখানে একটি বাজার কমিটি করা হয়। নিজেদের উন্নয়নের লক্ষে প্রতিদিন দোকান প্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে বাজার কমিটি। এতে ক্ষিপ্ত হন দালাল খাদেম ও তার সহযোগীরা। এর জের ধরে গত শুক্রবার বিকেলে খাদেম আলীর সহযোগী পিচ্ছি বাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক ওই বাজারের শামসুল রহমানের দোকানে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় তারা দোকানের মালামাল ও টাকা লুট করে। খবর পেয়ে অন্য দোকানদার ও স্থানীয় লোকজন পিচ্ছি বাবুসহ তার সহযোগীদের গণপিটুনি দেয়। এদের মধ্যে পিচ্ছি বাবুকে মর্ডাণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিক শামসুর রহমান বাদী হয়ে খাদেম আলী ও পিচ্ছি বাবুর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের নামে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ করেন। খবর পেয়ে পরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় পিচ্ছি বাবুর অপর সহযোগী বাবলুর নেতৃত্বে তিনজন যুবক অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ওই বাজারে যায়। এসময় তাদের সঙ্গে বাজার কমিটি ও দোকানদারদের মধ্যে কথা কাটা-কাটির এক পর্যায় বাবলু একাধিক গুলি বর্ষণ করে। এ সময় মানিক নামে এক যুবকের ডান পায়ে পর পর দুই রাউন্ড গুলি করে। পরে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মানিকের বোনের স্বামী বাদশা মিয়া বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ওই ঘটনার মুলহোতা খাদেম আলীকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ওই বাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সফিপুর-বড়ইবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ওই রাতেই ঘটনাস্থলে গেলে প্রায় ঘন্টাখানেক পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই সড়কে চলাচলরত পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। অপরদিকে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই বাজারে বনের জমিতে যেসব দোকানপাট রয়েছে, সেগুলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। পূর্ব চান্দরা বোর্ডমিল বাজার কমিটির কোষাদক্ষ সুলতান সিকদার জানান, আমরা কয়েকজন বাজারের অস্থায়ী দোকান থেকে প্রতিদিনের ভাড়া তুলছিলাম। এসময় পিচ্ছি বাবুর অপর সহযোগী বাবলু কয়েকজন যুবক নিয়ে সেখানে আসে। পরে তারা মানিককে আটক করে হাতুরি পেটা ও পায়ে গুলি করে। এসময় মানিক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা শরিফ উর রহমান খান জানান, বনের জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ মারামারি করেছে। যত সমস্যার মুলে রয়েছে খাদেম আলী। তবে ওই এলাকাসহ উচ্ছেদ করার বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। আমাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া লকডাউনের পর বাস্তবায়ন করা হবে। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরি জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মুলহোতা খাদেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ওই বাজারে বনের জমিতে যেসব দোকানপাট রয়েছে, সেগুলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ করা হয়েছে।