শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

প্রবৃদ্ধি নয়, সময় এখন করোনা সামাল দেওয়ার 

শাহজাহান সাজু :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১

বাজেট নিয়ে সিপিডির সুপারিশ 

বছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কত হবে, মহামারির মধ্যে এটি আলোচনার সময় নয়। এখন সময় হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়ার। এখন বড় প্রকল্পে নজর দেওয়ার সময় নয়। এখন নজর দেওয়া উচিত কর্মসংস্থানের ওপর। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরার সময় এসব কথা বলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি বলেছে, সরকার ৩৫ লাখ পরিবারকে যে পরিমাণ নগদ সহায়তা দিচ্ছে, সেটি আরও বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে পরিবারের সংখ্যা ও নগদ সহায়তার পরিধিও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। আগামী বাজেট কেমন হওয়া উচিত, সেটির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ আর রাখা ঠিক হবে না। আগামী অর্থবছর থেকে এই সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব করছি। কারণ, এই সুবিধা করকাঠামোর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।’ বরং যাঁরা কর শনাক্তকরণ নম্বর নিয়েছেন, তাঁদের করের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে চারটি খাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেগুলো হলো কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সেবা নিশ্চিত করা। সে জন্য এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থান তৈরিতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। চতুর্থত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ।
সভায় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার গরিব মানুষকে নতুন করে নগদ সহায়তা দিতে যাচ্ছে। সত্যিকারের গরিব মানুষ যাতে এ সহায়তা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, প্রণোদনার চেয়ে নগদ সহায়তা বেশি উপকারী। এ টাকায় চাহিদা তৈরি হয়। অর্থনীতি চাঙা হয়। তাই নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে গরিব মানুষের সংখ্যা এবং এর পরিধিও বাড়ানো উচিত। বছরে দুই থেকে তিনবার গরিব মানুষকে নগদ সহায়তার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সভায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোর একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এই জিডিপি যদি কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারে, তাহলে এই প্রবৃদ্ধির কোনো অর্থই হয় না। পৃথিবীর অনেকে দেশেই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। তাতে কী হয়েছে ওই দেশের। তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এখন নয়।’
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ করহার আগের জায়গায়,অর্থাৎ ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে সিপিডি, যেটা এখন ২৫ শতাংশ রয়েছে। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেট সম্প্রসারণমূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিপিডি বলেছে, করোনার কারণে অর্থনীতির যে পরিবেশ, তাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেন বাস্তবসম্মত হয়। স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেসব আমদানিতে কর পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। মহামারির কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেট সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ এবং সারচার্জ ১ শতাংশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। কোভিডের কারণে সংস্কার কার্যক্রম যাতে পিছিয়ে না যায়, সেদিকে নজর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে। স্বাস্থ্য খাতে যাঁরা ফ্রন্টলাইনে আছেন, তাঁরা এখনো প্রণোদনার টাকা পাননি। তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রণোদনার টাকা ছাড়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমিয়ে এনেছে এই দাতা সংস্থা। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করেছিল, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। এই পূর্বাভাস হিসাব করার সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিবেচনা করা হয়নি।
গত বুধবার প্রকাশিত এডিবির ‘এডিবি ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২১’-এ এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এডিবির ঢাকা কার্যালয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবির কর্মকর্তা সুন চাং হয়।
এডিবি মনে করেন, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কত হবে, তা নির্ভর করবে কীভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি টিকা কার্যক্রম কেমন চলছে, এটিও অর্থনীতির সামনের দিকে যাওয়ার সূচক হিসেবে কাজ করবে। এডিবি আরও বলছে, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সম্পর্কে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮-৯ মাসের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রাক্কলন করেছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের শুরুতে লকডাউন দেওয়া হয়। চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এগুলো অবশ্যই প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। এ কারণে আমাদের প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে আসতে পারে। তবে ৫ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। টিকা দেওয়ার মাধ্যমে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করে এডিবি। এ জন্য বাংলাদেশকে ৯৪ কোটি ডলার দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা চলছে বলে জানায় এডিবি। এ বিষয়ে মনমোহন প্রকাশ বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার জন্য শুধু সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিকল্প উৎস খোঁজা উচিত। কোরিয়া ও থাইল্যান্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা বানায়। এ ছাড়া স্পুতনিক ও সিনোভ্যাক্স নিয়েও আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এ মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হলো টিকার সরবরাহ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com