পিছিয়ে পড়া সাগর পাড়ের শিশুদের আলোর পথে যাত্রা করিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের শাহেরখালী ইউনিয়নের বেড়ীবাঁধ এলাকার সোনালী স্বপ্ন নামের এ সংগঠনটি ঝরে পড়া শিশুদের মাঝে বিতরণ করছে শিক্ষা। এ যেন অন্ধকারে আলোর স্ফুরণ! বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) শাহেরখালী বেড়ীবাঁদ এলাকায় গেলে দেখা যায়, শিশুদের ক্লাস নিতে কোন রকম ঘরের ব্যবস্থা না থাকলেও খোলা আকাশের নিচে চাটাই বিছিয়ে শিক্ষা বিতরণ করা হয়। বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে শিক্ষা গ্রহণ করছে। সংগঠনটির সভাপতি আরিফুল ইসলাম সুমন জানান, এদের মধ্যে গত শিক্ষাবর্ষে ফারহানা, সপ্না, আনিস, মিনা, রাজিয়া ও সাকিব প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন তারা উচ্চ বিদ্যালয় গন্ডি পার হওয়ার প্রতিযোগীতায় সামিল হয়েছে। অথচ এর পূর্বে ভেড়ীবাঁধ এলাকার আর কোন শিশু শিক্ষার এটুকু সিঁড়ি পাড়ি দিতে পারেনি। এখন তাদের স্বপ্নজয়ের শারথি হয়েছে ‘সোনালী স্বপ্ন’ নামের সংগঠন। উদ্যোক্তারা জানায়, এলাকার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে তাদের ভর্তি করিয়ে দিয়ে একটা সময় শ্রেণি শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া সোনালী সপ্নের কর্মীরা বেড়ীবাঁধ এলাকার তিনটি গ্রামে চিকিৎসা, সচেতনতা ও বিশুদ্ধ পানি পানে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি হাতে নেয় সোনালী স্বপ্ন নামের সংগঠনটির সদস্যরা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুমন আহম্মদ জানান, বর্তমানে তারা পাশ^বর্তী তিন গ্রামের ৯৫জন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠদান করছেন। পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রীর দায়িত্বও তারা নিয়েছেন। অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি মাসে একবার অভিভাবক সমাবেশ করা হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্যে বিভিন্ন সময় তাদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। মহতি এ কাজেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে জানিয়ে উদ্যোক্তারা বলেন, শুরুর পর থেকে শাহেরখারী ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মরহুম নুরুল মোস্তফা চৌধুরীর মাধ্যমে বেড়ীবাঁধ এলাকার একটি পরিত্যাক্ত ঘরে শিশুদের পাঠদান করা হতো। বর্তমানে ওই ঘরটি এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত ভেঙ্গে দিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আসলে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঈনুল হোসেন টিপু বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় গত চারটি শিক্ষা বর্ষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বেশ কজন শিশু অংশ নেয়। তারা কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে। বর্তমানে তারা বিনা বেতনে মাধ্যমিকে অধ্যায়ন করছে।’
প্রতিষ্ঠার আদ্যোপান্ত:
উপকূলের অবহেলিত তিনটি গ্রামে গজারিয়া, ডোমখালী আর শাহেরখালী। এ তিন গ্রামের বেড়ীবাঁধ এলাকার অধিকাংশ শিশু শিক্ষা-স্বাস্থ্য আর চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। এখানকার কয়েকটি গ্রামের শিশুদের যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা তারা সে বয়সে পরিবারের বড়দের সঙ্গে যোগ দেয় মাছ ধরা পেশায়। ২০১১ সালের নাগাদ স্থানীয় শাহেরখালী ইউনিয়নের শিক্ষিত চার যুবক সুমন আহম্মদ, মাঈনুদ্দীন রিপন, ইকবাল হোসেন ও মঈনুল হোসেন টিপু তাদের কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সোনালী স্বপ্ন’ নামের সংগঠনের। প্রথম দিকে পিছিয়ে পড়া স্থানীয় কয়েকজন শিশুকে সেচ্ছায় পাঠদানের উদ্যোগ নেন তারা।