কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রবাহমান ঈদগাঁও নদীর উত্তরপাড়ের বেড়িবাঁধ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকের বিরুদ্ধে। ঈদগাঁও নদীর বেড়িবাঁধ থেকে জলভাগের অভ্যন্তরের অন্তত ৫ফুট জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ঈদগাঁও নদীর( উত্তরপাড়) ঈদগাহ হাই স্কুল পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বেড়িবাঁধের উপর থেকে নদীর জলভাগের অভ্যন্তরে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত নদী দখল করে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সিরাজুল হক বলেন, বন্যা থেকে তার বসতবাড়ি রক্ষার জন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি নিয়ে গাইডওয়াল নির্মাণ করছেন। কিন্তু নদী অভ্যন্তরে কেন এ প্রশ্নের জবাবে জনাব সিরাজুল হক বলেন, নদীভাঙ্গনের ফলে তার বসতবাড়ি কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই কারণে নদীর জলভাগের অভ্যন্তরের সিকস্তি অংশ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তিনি।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন হাইড্রোলজিকাল ইঞ্জিনিয়ার জানান, ঈদগাঁও নদীর উত্তরপাড়ে ঈদগাহ হাই স্কুল পয়েন্টের বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়ীবাঁধের অভ্যন্তরে সীমানাপ্রাচীর করা হলে বর্ষামৌসুমে পাহাড়ী ঢলে ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে ওই অংশটি। এর ফলে নদীভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়বে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ হাই স্কুল”সহ পূরো ঈদগাহবাজারের বেশিরভাগ অংশ। জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, ঈদগাহ হাই স্কুলকে ক্রমাগত নদীভাঙ্গনে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করতে ২০০৭ সালে আমার উদ্যোগে এবং এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদুল হকের সার্বিক সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭৪ লক্ষ্য টাকা ব্যয় করে ব্লক বসিয়ে প্রায় ৫শ ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মাণ করে। সেখানে এই বেড়িবাঁধ দখল চরম লজ্জার এবং নীতিহীনতার পরিচয় বলে তিনি ধিক্কার জানান। বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, ২১ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়িত্ব রক্ষার স্বার্থে উহার উপর বা উহার পার্শ্বঢালে কোন ব্যক্তি, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত, কোন প্রকার ঘরবাড়ি, স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করিতে পারিবেন না। এই ধারা লংঘনে ৫ বছর কারাদ- এবং দশ হাজারে টাকার জরিমানা আদায়ের দ- থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিন দিন এই নদী খালগুলি দূর্বৃত্তের দখল ও দূষণের শিকার হয়ে অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়ছে ক্রমাগত। ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। এ বিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ দখলের এখতিয়ার কারো নেই এবং পানি বোর্ড বেড়িবাঁধের কোন অংশ কাউকে ব্যবহার বা দখলের অনুমতি দেয়নি বা দিতে পারেনা। তিনি ঈদগাহ নদীর বেড়িবাঁধ দখলরোধে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।