কভিড-১৯ মহামারীতে গত বছর এপ্রিল-নভেম্বরে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের প্রায় ৭৭ শতাংশ হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজেছেন। পরিবারগুলোর ৬১ ভাগেই দেখা গেছে, তাদের অন্তত একজন সদস্য মহামারীতে চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। এ সময়ে অনুষ্ঠিত বিয়ের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ (৭৭ শতাংশ) কনের বয়স ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালে জরিপকৃত জাতীয় বাল্যবিবাহ হারের (৫১ শতাংশ) চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। শহরের (৭০ শতাংশ) তুলনায় গ্রামে (৮১ শতাংশ) বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ গবেষণায় করোনাকালে বিপরীতমুখী অভিবাসনের প্রভাবে বাংলাদেশের মধ্যম মানের শহর, উপজেলা এবং গ্রামীণ অঞ্চলে জনমিতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের ওপর পরিবর্তনগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
‘কভিড-১৯-এর কারণে জনমিতিক ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনসমূহ: নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য ও ফলাফল গতকাল এক অনলাইন পলিসি ডায়ালগের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। আলোচক হিসেবে যোগ দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ কার্যালয়, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং ব্র্যাকের প্রতিনিধিরা।
সংখ্যাগত ও পরিমাণগত গবেষণা কৌশলের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১০-২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৭০টি খানায় এ জরিপ পরিচালিত হয়, যেখানে গত বছরের এপ্রিল-নভেম্বর সময়কালকে রেফারেন্স পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে যারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নিজ বাসভূমে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছে তাদের জীবনযাত্রায় সামগ্রিকভাবে যে ধরনের প্রভাব পড়েছে, তার ওপর এ গবেষণায় বিশেষভাবে দৃষ্টিনিবদ্ধ করা হয়েছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সমীক্ষায় অংশ নেয়া খানাগুলোতে প্রায় ২৫ শতাংশ ফেরত আসা অভিবাসী ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন, যার গড় ৭৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা। প্রায় ৪৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা কোনো উপার্জনমূলক কাজ পায়নি। কিছু পরিবারকে সঞ্চয় উত্তোলন করে বা বিভিন্ন সম্পদ ভাড়া বা বন্ধক দিয়েই তাদের খরচ চালাতে হচ্ছে। সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্থানান্তরের ফলে মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। তাদের জন্য কীভাবে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করে দেয়া যায় এ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এজন্য আমাদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, আগামী বাজেটই হতে পারে এ পরিকল্পনা।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, যখন পুনরুদ্ধার এবং মোকাবেলা কৌশলের কথা বলছি, তখন এ ধরনের গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনই সরকারের নেতৃত্বাধীন জনগণের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সব স্টেকহোল্ডারকে সংযুক্ত হয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য আলোচনা করা জরুরি।