বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

বাড়ি ফিরতে মরিয়া সবাই

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ মে, ২০২১

গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঈদুল আজহাতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়। এরপরই বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে সবাই। আর এবছর ঈদযাত্রা যেন ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে দেশে, আরেকদিকে মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্দেশনা, কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েও ঘরে রাখা যাচ্ছে লোকজনকে। বৃহস্পতিবার থেকে মানুষ ছুটছে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। গত বছরও কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ ছিল: গত বছরও ঈদুল আজহার ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকাতে বলা হয়েছিল। ২০২০ সালে ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ জুলাই বা ১ আগস্ট ঈদুল আজহা পালিত হবে। তবে যেদিনই পালিত হোক, ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন এই তিন দিন সরকারি ছুটি থাকবে। কিন্তু তারপরও মামুষকে থামানো যায়নি। এবছরও সর্বশেষ জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা আছে কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না। কিন্তু ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা ছেড়েছে লাখো মানুষ।
গত বছর করোনা প্রকোপ এত ছিল না: এবছর ১৯ এপ্রিল করোনায় দেশে ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয় ৪ হাজার ২৭১ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে। করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই সময়ে সবচেয়ে সংকটময় অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। গত বছর ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়। এদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৯ জন। এবছর ১৯ এপ্রিলে একদিনেনতুন রোগী শনাক্ত হয় ৪ হাজার ২৭১ জন।
এত মানুষ কোথায় যায়? সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ মার্চ বিধিনিষেধসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এর মধ্যে ঘরের বাইরে গেলে মাস্কের ব্যবহার অন্যতম। কিন্তু সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকলেও জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এখনও উদাসীনতা দেখা গেছে। এরপর কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে চলাচল সীমিত করা হয়, অফিসসহ নানা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। যদিও পরবর্তীতে শপিং মল থেকে শুরু করে শহরের মধ্যে গণপরিবহন চলাচল খুলে দেওয়া হয়। এখনও আন্তঃজেলা বাস বন্ধ আছে। তারপরও মানুষ ছুটছে। শনিবার ফেরি আটকানোর ঘোষণা এলেও ঘাটে ১১ হাজার মানুষ জড়ো হয়ে ফেরি চালাতে বাধ্য করে। রবিবারও হাজার হাজার মানুষ ফেরি পার হয়ে ফরিদপুর-মাদারীপুর-ঝিনাইদাসহ বিভিন্ন জেলায় রওনা হয়।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। এই সময়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য ফেরিতে যে গাদাগাদি হয়ে মানুষ পার হতে দেখা গেল তা আগামী ১৪ দিন পরে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। নিষেধাজ্ঞা দিলে নিম্নবিত্তের দুর্দশার কথা বলা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলে সবাই মার্কেটে ভিড় করলেন। মানুষের ভেতর বেপরোয়া ভাব চলে এসেছে যা বিপদ বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: করোনার সংক্রমণ রোধে ঈদে বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ করুন। একটা ঈদ বাড়িতে না করলে কী হয়। তিনি সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান। সবাইকে বলবো, নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ করুন। কেননা বাড়ি যাওয়ার পথে কে ভাইরাস বহন করছেন, কে করছেন না, তা আমরা কেউ জানি না। কাজেই বাড়ি যাওয়ার পথে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বলবো, বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা যাওয়ার পথে আপনি ভাইরাস বহন করে নিয়ে যেতে পারেন আপনার পরিবারের কাছে।’-বাংলাট্রিবিউন
তিন হাজার যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ঘাট ছাড়লো ফেরি:
গতকাল সোমবার (১০ মে) সকাল থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায় বাড়ি ফেরা মানুষদের ঢল লক্ষ্য করা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যারিকেড উপেক্ষা করে ঘাটে ভিড় জমায় যাত্রীরা। ৩ হাজার যাত্রী এবং দুইটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সকাল ১০টার দিকে ২ নং ঘাট ছেড়ে গেছে ফেরি যমুনা।
জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘরমুখো মানুষের স্রোত রোধ করতে ঘাটের প্রবেশ মুখে গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দেয়। যাত্রীরা সেই ব্যারিকেড উপেক্ষা করে এক কিলোমিটার পথ হেঁটে ঘাটে জমা হয়। এ সময় তারা ঘাটে দাঁড়িয়ে ফেরি ছাড়তে হবে বলে স্লোগান দেয়। এদিকে ফেরিঘাট দিয়ে পার হতে না পেরে ঘাটের পাশের কনকসার এলাকাসহ আশপাশের এলাকা দিয়ে ট্রলারে করে নদী পার হচ্ছে মানুষ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবৈধভাবে পারাপারের কারণে ৬টি ট্রলার জব্দ করেছে নৌপুলিশ।
শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে অরিরিক্ত যাত্রীর চাপে সকাল ১০টার দিকে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স ও ৩ হাজার যাত্রী নিয়ে ফেরি যমুনা বাংলাবান্ধা ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ অব্যাহত আছে। আজ সোমবার সকালেও শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আছেন কয়েক হাজার যাত্রী। ফেরি বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই নৌপথের অপেক্ষমাণ যাত্রীরা। ফেরির আশায় এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে ছুটছেন তাঁরা।
ঘাট ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোররাত থেকে দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীরা শিমুলিয়া ঘাটে জড়ো হয়েছেন। তাঁরা সকাল থেকে ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন। সকাল ৬টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সবাহী একটি ফেরি ছেড়ে গেলেও আর কোনো ফেরি ছেড়ে যায়নি। এদিকে শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশেমুখ শিমুলিয়া-ভাঙা সড়কে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সেখানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হলেও বিজিবির টহলের মধ্যে এসব যাত্রী ঘাটে জড়ো হয়েছেন। এ ছাড়া শিমুলিয়া ঘাটে ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে মালবাহী গাড়ির লম্বা সারি রয়েছে। পারাপারের অপেক্ষায় আছে প্রায় ৪৫০টি যানবাহন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শিমুলিয়া ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় দেখা যায়, কয়েক হাজার যাত্রী ফেরির জন্য পন্টুনে অপেক্ষা করছেন। এ সময় ফেরি ছাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। দীর্ঘ সময় ৩ নম্বর ঘাটে থাকার পর যাত্রীরা আবারও ২ নম্বর ঘাটের দিকে ছুটতে থাকেন। কিছু সময় পর আবার ফেরির আশায় ৪ নম্বর ঘাটে ছোটেন তাঁরা।
এ সময় ঘাটের যাত্রীরা বলেন, তাঁরা রোজা রেখে ভোর থেকে ঘাটে আছেন। এখন রোদে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। কখনো ফেরি চলছে, কখনো ফেরি বন্ধ থাকছে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে আছেন। এক যাত্রী বলেন, ‘কী যে ভোগান্তিতে আছি, শুধু আমরাই জানি! হয় একেবারেই ফেরি বন্ধ করে দিক, নয়তো চলাচল স্বাভাবিক করা হোক।’ শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল উদ্দিন বলেন, সকাল ৬টার পর এ ঘাট থেকে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একটি ছোট ফেরি ছেড়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞার পরও যাত্রীরা বিভিন্নভাবে ঘাটে এসে জড়ো হচ্ছেন। এ মুহূর্তে ঘাটে ও সড়কে সাড়ে চার শতাধিক মালবাহী যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে। ফেরি চলবে কি না, সেটা বিআইডব্লিউটিসি বলতে পারবে।
শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যদি অ্যাম্বুলেন্স আসে, সে ক্ষেত্রে হয়তো ফেরি চালানো হতে পারে। যাত্রীদের চাপ বাড়লে ফেরি চলবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ নিয়ে বিবেচনা করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com