বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ মে, ২০২১

অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে নিচ্ছে। এতে টাকার সরবরাহ বেড়ে গেলেও করোনার কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার না কিনলে প্রতি ডলারের দাম ৭০ টাকায় নেমে যেতো। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন প্রবাসীরা ও রফতানিকারকরা। মূলত রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখার জন্য এবং রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মজুদ যেমন শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাবাজারও স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত বছরের মার্চ থেকে ব্যবসাবাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য আমদানি কমে গেছে। এতে কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার। কিন্তু রেমিট্যান্স, রফতানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানসহ যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে তার বেশির ভাগই উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। প্রায় সব ব্যাংকের হাতে এখন উদ্বৃত্ত ডলার থাকায় বাজারে চাহিদাও কমে গেছে। বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারায় ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আসছে। ডলারের মূল্য পতন ঠেকাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের ডলার কিনেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম মাসে বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনেছিল ১৩৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মূল্য ছিল ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা হিসেবে)। পরের মাসে অর্থাৎ আগস্টে কেনে ৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যার স্থানীয় মূল্য ৩ হাজার ৪৪২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে আবার তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। যার স্থানীয় মূল্য ছিল ৭ হাজার ৪৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অক্টোবরে আরো বেড়ে হয় ১০১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মূল্য ৮ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। ৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা মূল্যের ৮৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার কেনা হয় নভেম্বরে। পরের মাসেই অর্থাৎ ডিসেম্বরে কেনা হয় ৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা সমমূল্যের ১০১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এভাবে জানুয়ারিতে ২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা মূল্যের ৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা মূল্যের ৪১ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং মার্চে কেনা হয় ১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা মূল্যের ২২ কোটি ডলার। সর্বশেষ গত এপ্রিলে ৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪৫ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয় বাজার থেকে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা স্থবির হয়ে পড়েছে। আমদানি ব্যয় কমে গেছে। কমে গেছে মানুষের চাহিদা। অপর দিকে আগে প্রতি মাসেই বিদেশে চিকিৎসার বিপরীতে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো। কিন্তু করোনার কারণে চিকিৎসার জন্য কেউ বিদেশে যেতে পারছেন না। আবার প্রতি বছরই পবিত্র হজ ও উমরাহ পালনের জন্য হজযাত্রীরা বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এটাও বলা চলে ব্যয় হয়নি। এ দিকে দীর্ঘদিন বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বেকার হয়ে গেছেন। অনেক দেশ থেকেই এখন বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ দিনের জমানো অর্থ বিদেশ থেকে দেশে পাঠাচ্ছেন অনেকেই। এ কারণে করোনার মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্সের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা দেয়, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার, যেখানে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এসেছে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অপর দিকে কিছু রফতানি আয় দেশে আসছে। সেই সাথে বিদেশী ঋণ ও বৈদেশিক অনুদান আসছে। সবমিলে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে অর্থনৈতিক কর্মকা স্থবির থাকায় ওই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে না। এর ফলে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই বৈদেশিক মুদ্রা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এতে চাহিদা না থাকায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন কমে গেছে। সবমিলেই বাজারে চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত ডলার থেকে যাচ্ছে।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর ইচ্ছে করলেই বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে না। প্রতিটি ব্যাংকেরই তার বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখার জন্য সীমা দেয়া আছে। এ সীমাকে এনওপি বা নেট ওপেন পজিশন বলে। নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার থাকলে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে, না হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সীমার বাইরে ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হয়। জরিমানার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংকগুলো বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বরস্থ হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com