দেশে প্রথমবারের মতো মতো এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) মাদক জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। ডিবি বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে রাজধানীর একটি বাসা থেকে তারা এই মাদকের সন্ধান পেয়েছে।
এলএসডি বিক্রির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বুধবার রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তারা হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র লুপল ও তুর্জ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিব। ডিবি পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলন করবেন। ডিবির ওই সূত্র বলেছে, ফেসবুকে ‘আপনার আব্বা’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে ওই মাদকের ক্রেতা সংগ্রহ করা হয়। গ্রুপে সদস্যসংখ্যা এক হাজারের বেশি। গ্রেফতার লুপল গ্রুপটি পরিচালনা করেন। লুপল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর ছাত্র ছিলেন। ড্রপ আউট হওয়ার পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ডিবি বলছে, সুইডেন থেকে এলএসডি মাদক আমদানি করা হয়। অনলাইনভিত্তিক অর্থ লেনদেন (পেমেন্ট) ব্যবস্থা পেপ্যালের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়। এই তিনজনের কাছ থেকে ২০০টি এলএসডি জব্দ করা হয়েছে। প্রতিটি তিন হাজার টাকা মূল্যে তারা বিক্রি করেন। ডিবি সূত্র বলছে, ১৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় তার তিন বন্ধু এলএসডি সেবন করান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি শুধু একটি শর্টস পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন। সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা হিসেবে তার মৃত্যু হয়। এর আট দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে হাফিজুরের ভাই তার লাশ শনাক্ত করেন।
হাফিজের মৃত্যু, তার চিকিৎসা এবং অজ্ঞাতনামা হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে তার লাশ আট দিন পড়ে থাকার ঘটনার তদন্ত দাবি করে আসছেন তার সহপাঠীরা।
ডিবি পুলিশের দাবি, যে তিন বন্ধু হাফিজুর রহমানকে এলএসডি সেবন করিয়েছেন, তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন ফার্মাসিউটিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া ড্রাগস ডটকমের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, লাইসারজিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয় এলএসডি। এই অ্যাসিড বিভিন্ন দানাদার শস্যে থাকা এরগোট ছত্রাকে পাওয়া যায়। ১৯৩৮ সালে বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণে প্রথম এলএসডি তৈরি হয়। এটি এতই শক্তিশালী যে এর ডোজগুলো সাধারণত মাইক্রোগ্রাম হিসেবে নেওয়া হয়। এটি উত্তেজক, আনন্দদায়ক। মনের ওপরও এর প্রভাব রয়েছে। কখনো কখনো এর প্রভাবে ভীতিকর অনুভূতি তৈরি হয়। এমনটা ঘটলে একে ‘ব্যাড ট্রিপ’ বলা হয়। নানাভাবে এলএসডি বাজারজাত করা হয়। যেমন: ব্লটার পেপার বা নকশা করা বিশেষ কাগজে এলএসডি মেশানো হয়। এভাবেই এলএসডি বেশি সহজলভ্য। এ ছাড়া ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে, তরল বা কিউব আকারে পাওয়া যায়।