মস্তিষ্কের ক্ষয়রোগ সবার জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। আর তা যদি হয় নবজাতক শিশুদের; তাহলে বিষয়টি আরও জটিল, কষ্টকর এবং হৃদয়বিদারক বিষয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাতি আমলেই নবজাতক মুক্তি পাবে মস্তিষ্কের ক্ষয়রোগ থেকে। নবজাতকের মস্তিষ্কের ক্ষয়রোধের সেই আমলটি কী?
নবজাতকের জন্য বিশ্বনবির সুন্নাতি আমল ‘তাহনিক’ করা মস্তিষ্কের ক্ষয়রোধ করতে কার্যকরী। শিশুর জন্মের পর প্রত্যেককে এ ‘তাহনিক’ করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম একটি সুন্নাত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় সুন্নাতি আমল ‘তাহনিক’-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার বিষয়টি প্রমাণিত। এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক সুন্নাতি আমলই বিজ্ঞানের গবেষণায় উপকারি হিসেবে প্রমাণিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বা বৈজ্ঞানিকভাবে যথার্থতা প্রমাণিত হোক বা না হোক, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতসমূহ সবসময়ই মানবজাতির জন্য একান্ত অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। আর প্রত্যেক নবজাতকের জন্য ‘তাহনিক করা’ একটি অন্যতম সুন্নাতি আমল। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় ওঠে এসেছে, এই সুন্নাতি আমলটি নবজাতকের মস্তিষ্কক্ষয়রোধে অত্যন্ত কার্যকর।
তাহনিক কী? নবজাতকের জন্মের পর ৩টি কাজ করা আবশ্যক ও সুন্নাত। এর মধ্যে তৃতীয় কাজটি হলো- তাহনিক করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবজাতকের জন্য তাহনিক করাটা আবশ্যক করে দিয়েছেন।
তাহনিক হলো- খেজুর চিবিয়ে সেই চর্বিত খেজুর নবজাতকের মুখে দেওয়া। নবজাতকের মুখের (জিহ্বার) তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা যাতে এর কিছু রস তার পেটে পৌঁছে যায়।
যদি খেজুর সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তবে সুন্নাতের উপর আমল করার নিয়তে যে কোনো মিষ্টিদ্রব্য দ্বারা তাহনিক করা যায়। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নবজাতক শিশুদেরকে পেশ করা হতো। তিনি তাদের জন্য বরকতের দোয়া করতেন এবং তাদেরকে মিষ্টি মুখ করাতেন।’ (মুসলিম)
তাহনিকের আমলের উপকারিতা: নবজাতকের প্রথম খোরাক তাহনিকের ফলে তার চরিত্র চিত্রণে জীবনভর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। দাঁতের মাড়ি মজবুত হয়। মায়ের দুধ পানে আগ্রহ তৈরি হয়। তাহনিকে খেজুর ও মধু বহুবিধ উপকার করে। এমনকি মস্তিষ্কের ক্ষয়রোগ প্রতিহত করে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর থকে প্রায় সাড়ে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর বিজ্ঞান প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, ‘তাহনিক’ নবজাতকের মস্তিষ্কক্ষয় রোধ করে।
দ্য ইসলামিক ইনফরমেশনের তথ্য মতে, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অপরিপক্ক নবজাতকের মুখে জেলের মতো এক ধরনের চিনির ডোজ দেওয়া হয়; যা তাকে মস্তিষ্কক্ষয় থেকে সুরক্ষা দান করে। লো ব্লাড সুগার বা হাইপোগ্লাইসিমিয়া প্রতি ১০ জন অপরিপক্ক নবজাতকের মধ্যে অন্তত ১ জনকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করে। যদি তৎক্ষনাৎ এর চিকিৎসা করা না হয়, তবে এটি একটি স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২৪২ জন নবজাতককে জেল থেরাপি দেওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মন্তব্য করেছেন, নবজাতকের মস্তিষ্কক্ষয়রোধে এটিই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা। নিউজিল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ কর্তৃক পরিচালিত এই সফল পরীক্ষামূলক থেরাপি ও এ ব্যাপারে তাদের মন্তব্য বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দি ল্যানসেট-এ প্রকাশিত হয়েছে।
আবার অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জেন ও তা সহকর্মীরা বলেছেন, প্রতিটি নবজাতকের জন্য এই ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপিতে খরচ হয় মাত্র ১ ডলার বা তার চেয়ে কিছু বেশি যা ড্রিপারের মাধ্যমে গ্লুকোজ দেওয়ার চেয়ে অনেক সহজ। এবং বর্তমানে লো ব্লাড সুগারের চিকিৎসায় চিকিৎসকগণ এই জেল থেরাপির প্রতিই বেশি ঝুঁকছেন। এদিকে লন্ডনের বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ নেইল মারলো বলেছেন, কার্যকারিতা ও সহজলভ্যতার বিচারে নবজাতকের হাইপোগ্লাইসিমিয়ার চিকিৎসায় গ্লুকোজ সেবনের ব্যবহারের চেয়ে ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে শক্তিশালি প্রমাণ আছে।
সর্বোপরি চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ‘ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপির মতো এই সাশ্রয়ী চিকিৎসা ‘লো ব্লাড সুগার’-এর কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নবজাতকের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেবে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আবিষ্কৃত নবজাতকের জন্য এই ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো তাহনিকের সঙ্গে হুবহু মিল।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নবজাতকের জন্মের পরপর যে ৩ কাজ করা সুন্নাত ও আবশ্যত তন্মধ্যে অন্যতম একটি তাহনিক করা। এর ফলে অনেক নবজাতক জন্মের পর জটিল ও কঠিন পরিস্থিতিতে রোগ-ব্যধি ও বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবজাতকের জন্মের পর দ্রুত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, কানে আজান-ইকামত ও তাহনিকের মাধ্যমে মুখে খেজুর বা মিষ্টি দ্রব্য খাওয়ানোর তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।