ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার দিব্যক জয়স্তম্ভ একটি। কালের সাক্ষী বহন করে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ওই স্তম্ভটি। প্রায় প্রতিটা দিনই ভ্রমণ পিপাসু মানুষ দিবর দিঘী পরিদর্শনে আসেন। নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৫৭ কি.মি. পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত পত্নীতলা উপজেলার দিবর দীঘি। পাল আমলে খননকৃত ৬০ বিঘা দিঘীর মাঝখানে আশ্চর্যজনক ভাবে স্থাপিত অখন্ড গ্রানাইড পাথরের স্তম্ভ সুদূর অতীতের বাঙ্গালীর শৌর্যবীর্যের সাক্ষ্য বহন করছে আজও। অর্ধ বর্গবিঘা জমির ওপর অবস্থিত গোলাকার ওই দীঘির মধ্যখানে অবস্থিত আটকোণাবিশিষ্ট গ্রানাইট পাথরে নির্মিত এতবড় স্তম্ভ বাংলাদেশে বিরল। সকলের কাছেই ওই দীঘিটি কর্মকারের জলাশয় নামে পরিচিত। স্তম্ভে¢র সর্বমোট উ”চতা ৩১ ফুট ৮ ইঞ্চি। পানির নিচের অংশ ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং পানির উপরের অংশ ২৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। স্তম্ভ¢টির ব্যাস ১০ ফুট ৪ ইঞ্চি। প্রতিটি কোণের পরিধি ১ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি। স্তম্ভটিতে কোন লিপি নেই। স্তম্ভে¢র উপরিভাগ খাঁজকাটা অলঙ্করণ দ্বারা সুশোভিত। বৃটিশ প্রতœতাত্ত্বিক স্যার আলেকজান্ডার ক্যানিং হামের মতে, একাংশ শতাব্দির কৈর্বত্য রাজা দিব্যকের ভ্রাতা রুদ্রকের পুত্র প্রখ্যাত নৃপতি ভীমের কীর্তি এটি। এ স্তম্ভে¢র প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতবিরোধ থাকলেও আজ অবধি দিব্যকের কীর্তি বলে অত্র অঞ্চলে প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। ধারণা করা হয়, এই শাসনামলে পাল বংশকে পরাজিত করে বিজয় অর্জনের স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে দীঘির মাঝখানে স্তম্ভত্ম স্থাপন করা হয়। এটি একটি অখন্ড পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে স্তম্ভ। চারটি কোন থাকার পাশাপাশি এই বিরাট স্তম্ভে¢র উপরিভাগে পরপর তিনটি রেখা রয়েছে যা স্তম্ভটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। স্তম্ভটির শীর্ষে রয়েছে নান্দনিক কারু কাব্য যা রাজার স্মৃতিকে আজও অম্লান করে রেখেছে। এদিকে, এ প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনকে আরও দর্শনীয় করে তুলতে স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের সহযোগীতায় ডাকবাংলো, চিড়িয়াখানা, হোটেল ও পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছিল এক সময়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে পরিদর্শনে আসতো।কিন্তু এখন আর সেই চিত্র নেই একমাত্র ডাকবাংলো ও আমাদের দেশের নদী গুলোর নামে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা পিকনিক স্পট গুলো ছাড়া চিয়িাখানাই নেই কোন পশশু পাখি।নেই নিরাপদ খাবার হোটেল, টয়লেট ব্যবস্থা। তারপরেও ওই দিঘীর টানে এখনো প্রতিদিন দর্শানার্থীরা সেখানে আসেন, ২৬ জুন শনিবার বিকেলে বেড়াতে আসা বাদল নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আচার চটপটি-ফুসকা খেলাম। তিনি পরিবার সহ এসেছেন পোরশা উপজেলা থেকে। তারা বলেন চিড়িয়াখানাই কিছু নাই,বসার স্থান গুলো সংস্করন করা দরকার, নিরাপদ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা। একটি মসজিদ রয়েছে সেখানে নির্ধারিত ইমাম মোয়ার্জেম রাখা অত্যান্ত জরুরী। দিঘীর রাস্তা ধরে হাঁটেেত দু পাশে সারি সারি গাছ, পাহাড়, চারদিকে সবুজের সমারোহ, আর কালের সাক্ষী দিঘী ও তার স্তম্ভ। সব মিলিয়ে ব্যবস্থা নিলে স্থানটিকে একটি আদর্শ বিনোদন কেন্দ্র তথা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে দিবর দিঘী। স্থানীয় অনেক দিনের দাবি ঐতিহাসিক ওই স্থানে পর্যটন মোটেল ও আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট নির্মাণের।আকবরপুর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, স্থানটিকে আমরা আসলে এখনো টিকিয়ে রেখেছি, কিন্তু উপর মহলের কাছে আমাদের যে দাবী, এলাকাবাসীর যে দাবী তা পূরণ না হলে উপেক্ষিত থেকে যাবে ঐতিহাসিক দিবর দিঘী। জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা জিন্না ঝর্ণা আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমি এই দিবর দিঘীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জেলা পরিষদকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছি।
যেভাবে যাবেন :
নওগাঁ জেলা সদর বালু ডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে সাপাহারের বাসে উঠে সহজেই এখানে পৌঁছানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে দিবর মোড়ে নেমে ভ্যান যোগে সামান্য পাকা পথ। জয়পুরহাট থেকে ধামইরহাট পত্নীতলা হয়েও এখানে যাওয়া যেতে পারে।