গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘কারখানাগুলোয় আইনের লঙ্ঘন নিয়মিত ঘটনা। সরকারের নজরদারির অভাবেই বারবার এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে।’ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা- প্রসঙ্গে তিনি এই কথা বলেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘অনেক দুর্ঘটনা হত্যাকা-ের সামিল। তাজরিন, রানা প্লাজা অথবা সেজান জুস কারখানার মানুষ মরার ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করলে দেখবেন, অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতার কারণে বহু হতাহত হয়েছে। এ সময় তিনি রূপগঞ্জের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘একজন মানুষও যেন অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ না করে তার নিশ্চয়তা সরকার এবং কারখানার মালিককেই দিতে হয়।’
একই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল সেলিম এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলীর কাছে।
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক শতাংশ মানুষ একদিকে, অন্যদিকে ৯৯ ভাগ মানুষ। সরকার এক শতাংশ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে মরিয়া। আর এই এক শতাংশ মানুষ সরকারকেও সুরক্ষা দিচ্ছে।’
কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আরও বলেন, ‘লুটেরা, ধনী আর সাম্রাজ্যবাদ শক্তির নিশানায় সরকারগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আর এ কারণেই তাজরিন, সেজান জুস কারখানার মতো ঘটনা বারবার দেখতে হচ্ছে। এদেশে সাধারণ মানুষের কোনো মূল্য নেই। চাপা পড়ে বা পুড়ে মরলে মালিকের কিছু যায় আসে না। মুনাফাই সব। সরকার উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতা পোক্ত করে। উন্নয়নের জন্য মুনাফা দরকার। সে মুনাফা পোড়া লাশের বিনিময়ে হলেও মালিক-সরকারের কোনো সমস্যা নেই।’
বামপন্থি এ রাজনৈতিক বলেন, ‘সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে শ্রম দিচ্ছেন। আর মালিকেরা বিদেশে টাকা পাচার করছেন। করোনায় সব বন্ধ করে দেয়া হলো। অথচ গার্মেন্টস চালু রাখা হলো। কী নির্মম! সেজান জুস কারখানায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ হত্যাকা-ের বিচার দাবি করি। কিন্তু কার কাছে বিচার দাবি করব।’
অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘একটি ঘটনা দিয়ে আরেকটি ঘটনা চাপা পড়ে যায়। রানা প্লাজা দিয়ে তাজরিনের ঘটনা ভুলে গেছি। সেজান জুস কারখানার ঘটনায় রানা প্লাজার ঘটনা চাপা পড়ে যাবে। এভাবেই চলছে। অথচ, আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার কথা ছিল। কারখানাগুলো সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন করছে। আমি বহু ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেছি। দেখেছি, কিভাবে অল্প বয়সী মেয়েদের যৌন হয়রানি করা হয়। শ্রম আইন মানা হয় না বললেই চলে।’
বিশিষ্ট এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘মাত্র দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কি হাস্যকর। একজন মানুষের মূল্য কি দুই লাখ টাকা! মূলত, জবাবদিহিতা এবং দায়বদ্ধতা না থাকার কারণেই এমন শোষণের শিকার হতে হচ্ছে। সরকার কারখানাগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থাটা জোরদার করলে অন্তত এত মানুষকে নির্মমভাবে মরতে হয় না।’