মহামারি করোনার মধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মশাবাহিত এ রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা না হলে, মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। করোনাকালে কারও জ্বর হলেই ভেবে নেন করোনা হয়েছে! শুধু করোনায় আক্রান্ত হলেই তো রোগী জ্বরে ভুগেন না বরং ডেঙ্গুর কারণেও জ্বরে ভুগতে পারেন। বর্তমানে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে মানুষের মাঝে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই এ সময় জ্বর হলেই উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে?
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কী? ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচ- ব্যথা হয়ে থাকে। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমড়, পিঠসহ অস্থি সন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়াও মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা তীব্র হয়। এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’। জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ, অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো। পাশাপাশি বমি বমি ভাব, এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়।
সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায়। কারও ক্ষেত্রে ২ বা ৩ দিন পর আবারও জ্বর আসে। একে বাই ফেজিক ফিভার বলে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর: রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, মহিলাদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনী আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম: ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণগুলো হলো- -রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া। -নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়। -শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠা-া হয়ে যায়। -প্রস্রাব কমে যাওয়া।
-হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন? যদিও ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই জ্বর সাধারণত নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে- -শরীরের যেকোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে। -প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে। -শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে। -প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে। -জন্ডিস দেখা দিলে। -অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে। -প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
ঘরে চিকিৎসা নিতে করণীয়: পর্যাপ্ত বিশ্রাম (জ্বর চলাকালীন এবং জ্বরের পর এক সপ্তাহ) নিতে হবে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাবেন। যেমন- খাবার স্যালাইন, টাটকা ফলের রস ইত্যাদি। এছাড়াও গ্লুকোজ, ভাতের মাড়, বার্লি, ডাবের পানি, দুধ/হরলিকস, বাসায় তৈরি স্যুপ ইত্যাদি