সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন

নারীর জন্য পর্দা

রাফিয়া নূর:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

‘পর্দা’ শব্দটি আরবি ‘হিজাব’ শব্দের বাংলা ও উর্দু তরজমা। যার অর্থ : আবরণ, অর্থাৎ যা দিয়ে কোনো কিছু ঢেকে রাখা যায় কিংবা যার সাহায্যে কোনো কিছুকে দৃষ্টির আড়াল করা হয়। ইসলামী শরিয়তে পর্দার অর্থ হলো : ‘সতর’, পর্দা আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নির্দেশ। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ।
এর সুফল ইহকাল ও পরকালে পাওয়া যাবে। পর্দার কারণে ইহকালে হিফাজত ও নিরাপত্তা এবং সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা লাভ হবে। আর পরকালে এর প্রতিদান মহান আল্লাহর নিয়ামত ও জান্নাত পাওয়া যাবে। পক্ষান্তরে বেপর্দার জন্য ইহকালেও বেইজ্জতির কুফল রয়েছে আর পরকালেও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘মহিলারা যেন তাদের পায়জামা পায়ের গোছা হতে এক বিঘত পরিমাণ নিচে নামিয়ে দেয়।’ এ কথা শুনে হজরত উম্মে সালমা রা: বলেন, এ অবস্থায় তো তাদের পায়ের টাখনু থেকে নিচের অংশ খোলা থাকবে। হজরত মুহাম্মদ সা: তখন বললেন, ‘তবে এক হাত নিচে নামিয়ে দেবে’ (আবু দাউদ শরিফ)। অনেকে বলে, ‘মনের পর্দা বড় পর্দা। বাহ্যিক কোনো পর্দার প্রয়োজন নেই’ এরূপ উক্তি সম্পূর্ণ কুরআন-হাদিসের বিরোধী, কুফরি বা ঈমান বিধ্বংসী কথা। এমন কথা বললে বা বিশ্বাস করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
পর্দার হুকুম : ‘হে নবী! মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে, আল্লাহ তা জানেন। তেমনিভাবে মুমিন নারীদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে। তারা যেন স্বীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, শুধু ওই সৌন্দর্য ব্যতীত, যা সাধারণ প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং তারা যেন স্বীয় বুকের ওপরে আবরণ বা চাদর টেনে দেয়। আর তারা যেন সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এই সব লোক ব্যতীত, যথা- স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, তৎপুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভাগিনে, আপন স্ত্রীলোকরা, স্বীয় ক্রীতদাস, নারীর প্রতি স্পৃহাহীন এবং ওই সব বালক যারা নারীর গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়নি। তারা যেন পথ চলার সময় এমন পদধ্বনি না করে, যাতে তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য পদধ্বনিতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে’ (সূরা নূর, আয়াত : ৩০-৩১)। ‘হে নবী! আপনার বিবি, কন্যা এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের শরীর ও মুখম-ল হিজাব দ্বারা আবৃত রাখে।’
পর্দা ফরজ হওয়ার প্রমাণ : মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে। জাহেলি যুগের নারীদের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না’ (সূরা আহজাব, আয়াত-৩৩)।
মহানবী সা: অসংখ্য হাদিসে এই প্রসঙ্গ বর্ণনা করেছেনÑ হজরত মুহাম্মদ সা: ইরশাদ করেন, ‘সাবধান! কোনো পর পুরুষ যেন কোনো পর নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান না করে। কেননা, যখনই তারা নির্জনে একত্র হয় শয়তান তাদের তৃতীয়জন হয় এবং কুকর্মে লিপ্ত করানোর প্রচেষ্টায় তাদের পিছু লেগে যায়’ (তিরমিজি শরিফ)।
‘কোনো পর পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জনতা অবলম্বন না করে। তবে মাহরাম ব্যক্তির ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। আর কোনো মহিলা যেন মাহরাম ব্যতীত একাকী তিন দিনের পথ ভ্রমণ না করে’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।
পর্দার গুরুত্ব : হজরত আয়েশা রা: বলেন, ‘একজন মহিলা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কাছে চিঠি দেয়ার জন্য পর্দার আড়াল থেকে হাত বাড়িয়েছেন’ (আবু দাউদ)।
অনেক মেয়েকে দেখা যায় বিয়ের আগে যদিও তারা জামা পায়জামা পরে তাদের শরীর ঢেকে রাখে, পর্দার চেষ্টা করে কিন্তু বিয়ের পর আগের মতো ততটুকু সতর্ক থাকে না পরিবারের লোকদের সামনে শরীরের কিছু অংশ প্রদর্শন করে চলাফেরা করে। সন্তান হলে তো কোনো কথাই নেই, পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনেই স্তন উন্মুক্ত করে শিশুকে দুগ্ধ পান করান (বিশেষত মহিলাদের সামনে)। বিয়ের আগে বা পরে উভয় অবস্থায় মেয়েদের পর্দার হুকুম সমান। তাই বিয়ের আগে মাহরাম পুরুষের সামনে যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ করা হারাম, বিয়ের পরও তা প্রকাশ করা হারাম।
তাই মেয়েদের জন্য বিয়ের পর একমাত্র স্বামী ছাড়া পরিবারের মাহরাম গাইরে মাহরাম কারো সামনেই শরীরের কোনো অঙ্গ প্রকাশ করে চলা এবং তাদের সামনে ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় এমন পাতলা বা টাইটফিট কাপড় পরা কিছুতেই জায়েজ হবে না। তেমনিভাবে স্বামী ছাড়া অন্য কারো সামনে স্তন উন্মুক্ত করে শিশুকে দুগ্ধ পান করানো জায়েজ হবে না।
পর্দার উদ্দেশ্য : মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির অপূর্ব নৈপুণ্যে নারীর অবয়বে দৈহিকভাবে যে সুন্দর্য, আকর্ষণ, লাজুকতা ও পবিত্রতার মহাসম্পদ দান করেছেন, সে মূল্যবান সম্পদকে অন্য পুরুষের কুদৃষ্টি, কুৎসিত কামনা বাসনা থেকে রক্ষা করাই পর্দার মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনÑ ‘পর্দার বিধান তোমাদের অন্তঃকরণসমূহ পবিত্র থাকার উত্তম উপায়’ (সূরা আহজাব, আয়াত-৫৩)। তবে পর্দার উদ্দেশ্য কখনো মহিলাদের শুধু ঘরের কোণে আবদ্ধ করে রাখা নয়। বরং নবী সা: মহিলাদেরকে আপন সম্ভ্রম রক্ষা করে জরুরি শিক্ষাদীক্ষা, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে কিংবা সাংসারিক জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে পর্দার গ-ির ভেতরে চাকরি ও ব্যবসার আনুমতি রয়েছে।
নারী শিক্ষাকে পুরুষের মতোই ফরজ করা হয়েছে। রাসূল সা: বলেন, ‘প্রতিটি নর-নারীর ওপর ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ফরজ’ (মিসকাত শরিফ)। ওহে নারীকুল! আল্লাহ পাক তোমাদেরকে জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন’ (বুখারি, মুসলিম শরিফ)। হজরত আয়েশা রা: রাসূল সা:কে বললেন, হে আল্লার রাসূল! আমরা মহিলারা কি পুরুষের সাথে জিহাদ করব না? রাসূল সা: বলেন, ‘নারীদের সর্বোত্তম জিহাদ হলো মাকবুল হজ’ (বুখারি শরিফ)।
পর্দাহীনতার ক্ষতি : পর্দাহীনতায় বিশ্ব মানবতার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো- মানবের সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ উত্তম চরিত্র এবং আদর্শ ধ্বংস হয়ে যায়। পর্দাহীনতার কারণেই বিশ্ব সমাজে আজ স্বেচ্ছাচারিতা, নারী ধর্ষণ, জারজ সন্তান জন্মদান, নারীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন, তালাক, হত্যা, ব্যভিচারসহ অপকর্ম চলছে। যার পর্দা নেই, তার লাজলজ্জার কোনো বালাই নেই। লজ্জাহীন মানুষ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। তারা যেকোনো অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। রাসূল সা: বলেন, ‘যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন তুমি যে অন্যায় ইচ্ছে, তা করতে পারবে’ (বুখারি শরিফ)। পর্দার বিধান অবশ্যই মেনে চলতে হবে এবং যে ব্যক্তি পুরুষ কিংবা মহিলা যদি সম্পূর্ণভাবে এর বিধান মান্য করে চলেন তাহলে অবশ্যই তারা দুনিয়াবি শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পর্দার বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com