রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি কমলেও কাটেনি দুর্ভোগ। পানি কমানোর সাথে বেড়েছে ভাঙন। নষ্ট হয়েছে শত শত একর আবাদী জমির আমন ক্ষেত। এছাড়া বেড়ি বাঁধ ভেঙে তিস্তার পানি গ্রামে প্রবেশ করায় এখনও প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। জানা যায়, পঞ্চম দফায় তিস্তার বৃদ্ধি পেলে উপজেলা তিস্তা বেষ্টিত এলাকার চরসহ নিম্ন এলাকার প্রায় ৫ হাজার পানিবন্দি হয়। সরকারিভাবে ওইসব পরিবারের জন্য ১০টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়ে ছিলো। কিন্ত সে পানি কমানোর ৩ দিনের মাথায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গত বৃহম্পতিবার রাত থেকে আবার তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে ৭ ইউনিয়নের চরসহ নিম্ন এলাকার ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়। পানির তীব্র সোতে বিভিন্ন এলাকায় দেখা ভাঙন। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে বেড়ি বাঁধটি ভেঙে গোটা বিনবিনা পানিবন্দি হয়। এছাড়া পূর্ব বিনবিনা ও লক্ষীটারীর পশ্চিম ইচলীর প্রায় আড়াই শতাধীক পরিবারের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা, গাছ-পালা ও আমান ক্ষেত বিলীন হয়ে যায়। দিশে হারা ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দি মানুষজন বাড়ি, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু রক্ষার জন্য ছুটাছুটি করে। এসব পরিবারের জন্য ৩ ইউনিয়ন কোলকোন্দ, লক্ষীটারী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নে আবার সরকারিভাবে ১১টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান পিআইও মুনিমুল হক। এদিকে শনিবার তিস্তার পানি বিপদসীমার নেচে নেমে এলেও এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে বিভিন্ন এলাকার ৫ হাজার পরিবার। ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবাদী জমি, বিভিন্ন গাছ। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত চর বিদ্যুৎ খুঁটি উপরে গিয়ে অন্ধকারে পরিনত হয়েছে। পরপর দু-দফার বন্যায় ভেসে গেছে বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয় ও মৎস খামারের কয়েক লক্ষ টাকার মাছ। সরজমিনে গতকাল রবিবার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চর ও লক্ষীটারী ইউনিয়নের ইচলীর চর গেলে দেখা যায়, বিনবিনার পাকার মাথা থেকে ইচলী পর্যন্ত বেড়ি বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় তিস্তার পানি সরাসরি বিনবিনা ও ইচলীতে প্রবেশ করছে। তিস্তার পানি প্রবেশ করায় গোটা বিনবিনাবাসীসহ চিলাখাল ও মটুকপুর চরের ৩ হাজারের বেশী এবং ইচলীর দেড় হাজারের বেশী পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। ওইসব এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দি পরিবারের অনেকে বাড়ি ছেড়ে আত্বীয়-স্জনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তিস্তার পানি আরো না কমানো পর্যন্ত পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে থাকতে হবে। পানিবন্দি পরিবারগুলো খাবার সংকটে দিন কাটাচ্ছে। কোন রকম একবার রান্না করে দিন-রাত কাটিয়ে দিচ্ছে। বিনবিনার আহাম্মদ, মনতাজ, আইয়ুব জানান, এবার আমন চাষাবাদ করার মত কোন উপায় নেই। তাছাড়া আমন ক্ষেতসহ জমি ভেঙে গেছে। এছাড়া বেড়ি বাঁধটি ভেঙে তিস্তার পানি গ্রামে তিস্তার পানি কমলেও আমরা পানিবন্দি হয়ে আছি। যতদিন আরো পানি কমবেনা ততদিন আমাদের গ্রামের সবাইকে পানিবন্দি অবস্থায় থাকতে হবে। অন্যদিকে শনিবার রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি ইচলীর দেড়শ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ উপহার বিতরণ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক স্থানীয়দের ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান জেলা প্রশাসকের সাথে পরিদর্শন শেষে জানান, ভাঙন রোধে জরুরীভাবে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণের সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান সাজু আহম্মেদ লাল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাবিয়া বেগম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার শাহ, জেলা ত্রাণ ও পূর্ণ বাসন কর্মকর্তা এটিএম আকতারুজ্জামান, পিআইও মুনিমুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়ন যুবলীগের উদ্যোগে ১৫ ও ২১ শে আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারবর্গ ও সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিনবিনার নারকেল তলে পানিবন্দি মানুষের মাঝে শনিবার বিকালে ত্রাণ বিতরণ করে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ তুলে দেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটুল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মামুনুর রশীদ মামুন, কামরুজ্জামান শাহীন, সদস্য ওয়াসিমুলবারী শিমু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লেবু, সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম লুলু, সহ-সভাপতি সাইদুল হাসান টিপু, কোলকোন্দ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাহেদুর রহমান মনা, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দীক সুজন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান সুরুজ, যুবলীগ নেতা নুর আমিন রাজু, মানিক, আশিক, উমর ফারুক, সোভন, আইয়ুব প্রমুখ।