রাতারাতি মশা নিধন করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখনই মশা নিধন করে ফেলা যাবে, এটা বলে লাভ হবে না। এটা বাস্তব কথা। আমরা কী কী পরিকল্পনা করছি, এগুলো যদি একটা লাইনআপ করে সারাবছর চালাতে পারি, তখনই আমাদের কাজ হবে। আমরা কাজ করে যাবো, আমরা হাল ছাড়বো না।’ গতকাল মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকালে ডিএনসিসির কনফারেন্স রুমে ডিএনসিসির স্প্রেম্যান সুপারভাইজরদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন আধুনিক যত প্রযুক্তি আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করবো। এজন্য কিটতত্ত্ববিদদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান, আপনারা আমাদেরকে বলুন কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে মশা মারা যায়। সিটি করপোরেশনের যেমন দায়িত্ব আছে, সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসী যারা আছেন সকলে মিলে সুন্দর ঢাকা শহর যেন গড়তে পারি, সেটাই করবো।’
মশক সুপারভাইজারদের হুঁশিয়ারি করে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মশক নিধনে আর ফাঁকিবাজি করলে মশক সুপারভাইজরদের বরখাস্ত করবো। ফাঁকি ধরা পড়লেই আমি চাকরিতে রাখতে পারবো না, ভেরি সরি।’ মশক সুপারভাইজরদের উদ্দেশ্য মেয়র বলেন, ‘যার নামে অভিযোগ পাবো, যে এলাকাতে দেখবো ওই এলাকাতে এডিসের প্রভাব কম আছে, অটোমেটিক্যালি সেটা কিন্তু খবরে চলে আসবে, আর যেখানে বেশি আছে এটাও অটোমেটিক্যালি খবরে চলে আসবে। সুতরাং আমি মনে করি তারপরও চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু ফাঁকি যে মারবে, যে সময়মতো আসবে না এবং সময়ের আগে সে চলে যাবে তার জন্য চরম শাস্তি। শাস্তি একটাই, তার চাকরি নাই।’ সুপারভাইজরদের উদ্দেশ্য আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘তুমি বেতন নিবা, তোমাকে বেতন দেবো আমরা। আর তুমি এখানে এসে ফাঁকি মারবা এটা তো হতে পারে না। এর শাস্তি হবে, তোমার চাকরি নাই, তুমি বরখাস্ত হবে। ফাঁকি ধরা পড়লেই আমি চাকরিতে রাখতে পারবো না, ভেরি সরি। নতুন লোক নিয়ে আসবো। তোমাদের পানিশমেন্ট (শাস্তি) হবে, ডিমোশন হবে, বেতন বন্ধ হয়ে যাবে, যা যা করা দরকার আমরা তা করবো। আমি করতে বাধ্য হবে, আমি চাই তোমরা এটা করাতে বাধ্য কোরো না।’
মশক কর্মীদের কাজের ফাঁকির বিষয়ে আক্ষেপ তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আসে, অনেক জায়গায় মশক কর্মী যারা আছে তারা মশক নিধনের কাজ বাদ দিয়ে লাইসেন্স দেয়া, অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে। এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। এদেরকে একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আবার অনেক মশক কর্মী আসে না, তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বাক্ষর দিয়ে দেয়, এটা সত্য কথা। সত্যকে স্বীকার করতে হবে। গত ৩০-৪০ বছর তারা এই সিস্টেমে চলেছে। সুতরাং নতুন সিস্টেমের তারা কোনোভাবেই আসতে চায় না। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বায়োমেট্রিক চালু করেছি। আগামী ১ সেপ্টেম্বরের থেকে প্রত্যেকটি বায়োমেট্রিক নিশ্চিত হবে। এরপর পজ মেশিনের মাধ্যমে তাদের হাজিরা নিশ্চিত করা হবে। যাদেরকে দেখবো তারা ফাঁকি মারছে, তাদের কঠিন শাস্তি আরোপ করছি, আমি বলেছি দরকার হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবো।’
মশক নিধনে ডিএনসিসির কর্মকা- নিয়ে মেয়র বলেন, ‘এবারই প্রথম মশক নিধনে চলমান অভিযানে বিপুল অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই থেকে যে অভিযান শুরু হয়েছে আজ অবদি প্রায় ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজকের এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে সুপারভাইজাররা প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিটি অঞ্চলে অঞ্চলভিত্তিক ট্রেনিং প্রশিক্ষণ করাবেন। সেখানে যারা মশক কর্মী তাদেরকে ট্রেনিং দেওয়া হবে। সুতরাং আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কীভাবে মশাটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।’ অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, কীটতত্ত্ববিদ প্রফেসর কবিরুল বাশার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।