শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

জিন্দা বিলে লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১

যতদূর চোখ যায় শুধু সৌন্দর্যের হাতছানি। মনে হচ্ছে কেউ লালগালিচা বিছিয়ে রেখেছে। চোখ জুড়িয়ে যায়, মন ভরে যায় দর্শনার্থীদের। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া লাল শাপলা সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা মধ্যপাড়া এলাকার বিলের। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে মনোমুগ্ধকর এই লাল শাপলা দেখার জন্য। সকালের সূর্যের আলোতে লাল শাপলার এই ঝলমলে উজ্জ্বলতা দেখলে এক নিমিষেই যেন মন ভরে যায়। সবুজের পটভূমিতে লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমিকরা ছুটে আসছে এই শাপলা বিলে। পাহাড়ের মতো ছোট ছোট টিলার উপর দিয়ে তৈরি রাস্তাটি যেতে যেতে লাল আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই চোখে পড়বে। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরো গাঢ় হয়ে ধরা দেবে। চোখ জুড়িয়ে দেবে জাতীয় ফুল শাপলার বাহারি সৌন্দর্য। আগাছা আর লতাগুল্মে ভরা বিলের পানিতে ফুটে আছে অসংখ্য লাল শাপলা। সূর্যের সোনালি আভা শাপলাপাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বিলের সৌন্দর্য। নৌকা কিংবা হাঁটুপানি মাড়িয়ে বিলে ঢুকলে মনে হবে বাতাসের তালে তালে এপাশ-ওপাশ দুলতে দুলতে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ফুটন্ত শাপলা। সে হাসিতে বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দধারা।
রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা মধ্যপাড়া এলাকাটি শাপলার রাজত্বের কারণে এখন শাপলা বিল নামেই বেশি পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের গ-ি ছাড়িয়ে বিলটির কথা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য স্থানে। বিশেষ করে শহরে ইট-পাথরে বন্দিজীবন কাটানো মানুষ প্রশান্তির আশায় ছুটে আসে এ বিলে। এই শাপলা বিলে শীত মৌসুমে পর্যটকের ভিড় বাড়ে। পর্যটকদের প্রশান্তি বিলানো ছাড়াও এই বিল ও তার শাপলা স্থানীয়দের অন্নেরও জোগান দেয়। লাল শাপলা ফুলের সমাহার দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। অল্প ভাড়ায় ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ২০০ একর জলাভূমির সৌন্দর্যময় শাপলা বিল পাড়ি দেয়া যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম হোসেন জানান, শাপলা বিল আমাদের উপার্জনের মাধ্যম হয়েছে। প্রতি বছর এই সময় এ বিলে ফোটা শাপলা ফুল দেখার জন্য দূর-দূরান্তের মানুষ আসে। শাপলা ফুল দেখতে আসা মানুষকে নৌকায় উঠিয়ে বিলটি ঘোরাই। এই শাপলা বিল দেখতে আসা মানুষকে নৌকায় ঘুরিয়ে এই মাঝিদের প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। এই উপার্জন দিয়ে তাদের সংসার চলে। স¤প্রতি বিল ঘুরে দেখা যায়, আগাছা ঠেলে অনেকেই নৌকা নিয়ে বিলের গহিনে যাচ্ছে। বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছে নৌকায়। কেউবা ব্যস্ত মাছ ধরায়। বিল থেকে শাপলা তুলে অনেকে তা বিক্রি করে স্থানীয় বাজারে। মাছ বিক্রি করেও সংসার চালায় অনেকে। তবে বিলের সঠিক আয়তন জানা নেই কারো। স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ তালুকদার জানান, প্রায় ২০০ একর জমির ওপর প্রাকৃতিকভাবে বিলটি গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অনেকে জীবিকার জন্য বছরের একটা বড় সময় বিলের মাছ ও শাপলার ওপর নির্ভরশীল থেকে। বিলে ঠিক কত আগে থেকে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে, সে তথ্য দিতে পারেনি স্থানীয়রা।
জিন্দা পার্ক এলাকার বাসিন্দা মাসুদ বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিলে শাপলা থাকে। জিন্দা পার্ক এলাকার মরিয়ম নামে এক গৃহিণী বলেন, লাল শাপলার কদর বেশি, এটি রান্না করার পরও রক্তের মতো লাল থাকে। তবে রান্নার আগে তা সিদ্ধ করে নিতে হয়। এটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমন খেতেও খুব সুস্বাদু। তিনি আরো বলেন, আগে বিলে প্রচুর শাপলা জন্মালেও এখন বিল ভরাট হতে থাকায় পানি কমে যাচ্ছে, ফলে আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে শাপলার উৎপাদন। বিলের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণেও শাপলা কমে যাচ্ছে। একই এলাকার আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, তিনি প্রতিদিন তার ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে মাছ ধরেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ বড়শি পেতে কই, খলিশা, টাকি, শোল, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেন। এই মাছ বিক্রি করে প্রায় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় হয় তার।
আব্দুল জাব্বার নামে একজন কৃষক জানান, তিনি শুকনো মৌসুমে জমি চাষ করেন আর বর্ষা মৌসুমে বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। তার মতো শতাধিক পরিবার এভাবে টিকে আছে। তিনি আরো বলেন, ১৫ থেকে ২০টি শাপলার একটি আঁটি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। শাপলা বিক্রি করে প্রায় হাজার টাকা আয় হয় তার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com