দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় প্রতিষ্ঠিত ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, করোনার উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সাধারণ হাসপাতালের পাশাপাশি কোভিড হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোধে আমাদের প্রত্যেককেই সতর্ক হতে হবে। বাড়িতে ফুলের টবসহ বাসার ভেতরে-বাইরে জমে থাকা যেসব পানি আছে, সেগুলো অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। তিন দিনের বেশি সময় বাসার বাইরে কেউ অবস্থান করলে বাথরুমের কমোড, প্যান ইত্যাদি ঢেকে রাখতে হবে। দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
মিটফোর্ড হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালসহ ছয়টি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৩ই আগস্ট অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। হাসপাতালগুলো হলো : স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড, ঢাকা; শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী, গাজীপুর; রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, কমলাপুর, ঢাকা; আমিন বাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ঢাকা; লালকুঠি হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা; কামরাঙ্গীচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ঢাকা।
মৃত্যু কমেছে এটাই স্বস্তিদায়ক: গত সপ্তাহে করোনায় মৃতের সংখ্যা তার আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৯৮ জন বা ৪১ শতাংশ কমেছে। দেশে গত সপ্তাহে ৬৮২ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান। তারপরও বলবো এটাই স্বস্তিদায়ক পরিসংখ্যান। আজ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে এসব কথা বলেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। গত সপ্তাহে দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, করোনা থেকে সুস্থ হওয়া এবং মারা যাওয়ার পরিসংখ্যান বুলেটিনে তুলে ধরেন অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম। তিনি জানান, গত সপ্তাহে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯১টি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম। পরীক্ষা কম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। বুলেটিনে জানানো হয়, গত এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ৬৮৮ জন, যা তার আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৬ হাজার ৮৮০ জন কম। সামগ্রিকভাবে দেশে করোনা সংক্রমণের নিন্মমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে গত এক সপ্তাহ ধরে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সর্বশেষ ৩১শে আগস্ট শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ ১২ শতাংশের খানিকটা নিচে আমরা অবস্থান করছি।
অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্ত নি¤œমুখী প্রবণতার দিকে যাচ্ছে। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি জানান, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৭৭ জন, জুলাই মাসে সেখানে রোগী সংখ্যা হয় ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জন। তবে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আগস্ট মাসে নতুন শনাক্ত কমে এসেছে। আগস্টে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫১ হাজার ১৩৪ জন । বুলেটিনে জানানো হয়, গত সপ্তাহে জেলা ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা জেলায়, এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম। নোয়াখালী জেলায় সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে। তিনি জানান, দেশে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে। এরপর রয়েছে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা, তারপর মারা গেছেন ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা।
জ্বর হলেই করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ: যেকোনো জ্বরের ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু (এনএস১ অ্যান্টিজেন) পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গুজ্বরের এনএস১ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও ডেঙ্গু পরীক্ষা সহজলভ্য করা হয়েছে।’ গতকাল বুধবার (২৫ আগস্ট) কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে তিনি এসব কথা বলেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীর সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ সার্বিকভাবে কাম্য মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ বাড়ি বা বাসার যেকোনো জমানো পানি (ফুলের টব, ফ্রিজের নিচ, পানির ট্যাংক) তিনদিনের মধ্যে ফেলে দেই, তবে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে নগরবাসীর দিন-রাত সবসময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া ছোটদের বিশেষ করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের শরীর ঢেকে থাকে এমন পোশাক পরিধান করা অত্যাবশ্যক।’