বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতা পেলে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে-মাফরুজা সুলতানা সুইজারল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস হাফেজা আসমা খাতুনের ইন্তেকালে বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির শোক দেশের মেধাবী ও আদর্শবান লোকদেরকে দলে আনার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন: তারেক রহমান গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষে ‘নীরব বিপ্লব’ ট্রাম্পের কাছে বাস্তববাদী পদক্ষেপ আশা করছে ইরান ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার দিন-তারিখ ঠিক করে সংস্কার করা অন্তর্র্বতী সরকারের কাজ নয়:খন্দকার মোশাররফ রাজনীতিতে স্লোগান নয়, মেধা ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে: ফখরুল বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে লুৎফুজ্জামান বাবর

হাতিরঝিলে অবৈধ স্থাপনা অবসারণের বিপক্ষে রাজউক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রাজধানীর হাতিরঝিলের নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনাকে অবৈধ ঘোষণা করে সেসব অপসারণে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। সংস্থাটির দাবি হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। সেজন্য স্থাপনাগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারার অর্থ দিয়েই ঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখন স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হলে ‘অর্থসংকটে’ পড়বে কর্তৃপক্ষ। আয়ের উৎস হিসেবে স্থাপনাগুলো রাখতে চায় রাজউক।
তবে রাজউকের এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক মনে করছেন হাতিরঝিলের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীরা। তারা বলেছেন, মানুষের জন্য সুন্দর একটি উপভোগ্য জায়গার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এটা যৌক্তিক হতে পারে না।
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রকল্প এলাকার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে রাজউক। তাতে আবেদন করা ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র যাচাই করে তখন ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়। পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে এর সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬টি করা হয়।
পরে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট করা হয়। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩০ জুন রায় দেন আদালত। রায়ে পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে হাতিরঝিলের সব ধরনের হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি প্রকল্পটিকে পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি ঘোষণা করেন। এ ছাড়া পুরো প্রকল্পের স্থায়ী পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডকে নিয়োগ করা হয়।
আদালতের রায় বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবো। কারণ এগুলো অবৈধ নয়। স্থাপনাগুলো সামরিক বাহিনী থাকতে তাদের আওতায় লিজ দিয়েছে। তারা সরকারের অনুমোদন নিয়েছে। মূলত এগুলো অবৈধ না। যারা লিজ নিয়েছে তারা লিজ মানি (অর্থ) দেয়। অগ্রিম অর্থও দিয়েছে। তাদের (সেনাবাহিনী) কাছ থেকে যখন আমাদের কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর হয়ে আসবে তখন আমরা এগুলো বুঝে নিবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতের রায়ের কপি হাতে পেলে আপিল করবো। এখন সিএমপি (সিভিল মিসেলেনিয়াস পিটিশন) করেছি। আপিলের পরে যে সিদ্ধান্ত হবে আমরা সেটা করবো। পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেলে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে রেগুলার বিষয়ে আপিল করা হবে।
আপিল আবেদনে কী কী চাওয়া হবে‑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি অথরিটির আওতায় চলে। সরকারই এটি চালায়। কারা কীভাবে কাজ করবেন তা তো একটি নিয়মকানুন বা আইন দিয়েই সরকার চালায়। আমরা সবগুলো পয়েন্টে আপিল করতে বলেছি।
স্থাপনাগুলো নকশা বহির্ভূত, আদালত সেগুলো অবৈধ ঘোষণা করেছে, রাজউক বিষয়টি কিভাবে দেখছে‑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের রায়ের বিষয়ে আমরা আপিল করবো। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী হাতিরঝিলে বড় একটি বিল্ডিং হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি এখন আর হবে না। সেখান থেকে অর্থ আসার কথা। যা দিয়ে হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। সে কারণে এই স্থাপনাগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। এখন যে স্থাপনাগুলো লিজ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে লিজ মানি (অর্থ) আসে। আমরা সেখানে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার করেছি। সেটা লিজ দিয়েছি। কিন্তু সেটি করোনার জন্য এখনও কার্যকর হয়নি। সেখান থেকে লিজ মানি পাবো। এই টাকাগুলো পেলে হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ হবে। হাতিরঝিলকে তো সাসটেইনেবল করতে হবে।
এদিকে আদালতের রায়ের পর হাতিরঝিলে লিজ দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য আরও ৭ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তারা কয়েকটি অবৈধ স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন।
হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মজিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আদালত হাতিরঝিলের বিষয়ে সা¤প্রতিক সময়ে রায় দিয়েছেন। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এখানে এই স্থাপনাগুলো রাখলে হাতিরঝিলের সৌন্দর্যহানি হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন রাজউকের ভাষ্য হচ্ছে আমি রক্ষণাবেক্ষণের টাকা কই পাবো? তাদের এই কথা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় না। মানুষের জন্য এতো সুন্দর একটি উপভোগ্য জায়গা ম্যান্টেন করার জন্য সব কমার্শিয়াল অ্যাকটিভিটি দিয়ে রাখতে হবে এমনটা যৌক্তিক মনে হয় না। এধরনের স্থানের ক্ষেত্রে, যেখানে মানুষ গিয়ে আনন্দ পায়, বিনোদন পায় সরকার তার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় রাখবে না এটা হতে পারে না।
অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, মানুষের প্রতিটি বিনোদনের জায়গাতেই দোকানপাট থাকতে হবে বিষয়টা এমন না। মানুষের খাবারের দরকার হলে আশপাশের বহু দোকান রয়েছে যেখানে গিয়ে তারা খেতে পারবে। ওখানে পানির পাশে বসে খেয়ে খোঁসাটা নিচে ফেলতে হবে এমনটা তো হতে পারে না।
তিনি খরচ বহনের জন্য ঝিলের মধ্যে যে অ্যাম্ফিথিয়েটার ও কার পার্কিং করা হয়েছে সেটা যথেষ্ট মনে করেন। পাশাপাশি রাজউককে আদালতের রায় মেনে নিয়ে দ্রুত আপিল থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান এই প্রকৌশলী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স-বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, একটি অবৈধ বিষয়কে কোনভাবেই বৈধ বলা যায় না। নকশা বহির্ভূত যেসব স্থাপনা রয়েছে তার সবই অবৈধ। হাতিরঝিল নিয়ে আদালতের যুগান্তকারী রায়টি রাজউকের মেনে নেওয়া উচিত।-সূত্র: বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com