সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪১ অপরাহ্ন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ : কারণ ও করণীয়

সাদ হোসাইন:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। জীবনের সব দিক ও বিভাগের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসলামÑ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারেও। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি কেবল প্রকৃতির খেয়ালিপনা? না-কি মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কোনো কর্মকা- এর জন্য দায়ী?
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের নিদর্শন সৃষ্টি করেন এবং কখনো কখনো তা তাঁর বান্দাহর ওপর প্রেরণ করেন, যাতে করে তারা মহান আল্লাহ কর্তৃক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও ভীত হয়। বান্দারা মহান আল্লাহর সাথে যেসব শিরকে লিপ্ত হয় বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করে এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি এই নিদর্শনগুলো পাঠান।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘(আসলে) আমি সতর্ক করার জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শন পাঠাই।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৫৯)। মহান আল্লাহ আরো ঘোষণা করেন, ‘অচিরেই আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনগুলো দিগন্ত বলয়ে প্রদর্শন করব এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও (তা আমি দেখিয়ে দেবো) যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের উপর পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এই (কুরআনই মূলত) সত্য; এ কথা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার মালিক সবকিছু সম্পর্কে অবহিত?’ (সূরা হা মিম সিজদা, আয়াত-৫৩)।
আল্লাহর সতর্ককরণ ধরন-ধারণে, আকার-আকৃতিতে, বিভিন্ন সময় বিভিন্নরূপে আপতিত হয়। কখনো ব্যাপক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের আকৃতিতে। কখনো দুর্দমনীয় বন্যার আকারে। কখনো বা যুদ্ধের আকারে, কখনো আবার প্রচ- বা মৃদু ভূমিকম্পের আকারে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘বলো! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তিনি তোমাদেরকে দল-উপদলে বিভক্ত করে একদলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।’ (সূরা আনআম, আয়াত-৬৫)
উল্লিখিত আয়াতে পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠানোর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরিনে কেরাম বর্ণনা করেন, ভূমিকম্প এবং ভূমিধসের মাধ্যমে মাটির অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়ার মতো আজাব। নিঃসন্দেহে বর্তমানে যে সব ভূমিকম্প দেশে-বিদেশে ঘটছে, তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি, যা দিয়ে তিনি তাঁর বান্দাদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। এই ভূমিকম্প এবং অন্যান্য সব দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার ফলে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে। এই দুর্যোগগুলো আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষের গুনাহ। এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে মানুষ!) যে বিপদ-আপদই তোমাদের উপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই এবং (তা সত্ত্বেও) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ (সূরা আশ-শুরা, আয়াত-৩০)
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের উচিত, খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করা। আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট একমাত্র দ্বীন ইসলামকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং আল্লাহ তায়ালা যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন এবং যা করতে নিষেধ করেছেন, তা খুব আন্তরিকভাবে মেনে চলা। যেমন-নামাজ পড়া, জাকাত আদায় করা, সুদ-ঘুষ না খাওয়া, মদ পান না করা, ব্যভিচার না করা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা না করা, হারাম গান ও বাদ্যযন্ত্র না শোনা, হারাম কাজগুলো থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। এতে করে আসা করা যায়, মহান আল্লাহ আমাদের আজাব থেকে নিরাপদে রাখবেন এবং আমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করবেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘অথচ যদি সেই জনপদের মানুষগুলো (আল্লাহ তায়ালার উপর) ঈমান আনত এবং (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করত, তাহলে আমি তাদের উপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু (তা না করে) তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, সুতরাং তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য আমি তাদের ভীষণভাবে পাকড়াও করলাম।’ (সূরা আরাফ-৯৬) ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে ভূপৃষ্ঠের নিচে একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় রয়েছে কঠিন ভূত্বক। ভূত্বকের নিচে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পুরু একটি শীতল কঠিন পদার্থের স্তর রয়েছে। একে লিথোস্ফিয়ার বা কঠিন শিলাত্বক নামে অভিহিত করা হয়। আমাদের পৃথিবী নামের এই গ্রহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, কঠিন শিলাত্বকসহ (লিথোস্ফিয়ার) এর ভূপৃষ্ঠ বেশ কিছু সংখ্যক শক্ত শিলাত্বকের প্লেটের মধ্যে খ- খ- অবস্থায় অবস্থান করছে। ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে এই প্লেটের চ্যুতি বা নড়াচড়ার দরুন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে একের পর এক ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে গেলেও তা আমাদেরকে খুব একটা সচেতন করতে পারেনি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এ লোকালয়ের মানুষগুলো কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে (তারা মনে করে নিয়েছে), আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে! অথবা জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে, আমার আজাব তাদের ওপর মধ্য দিনে এসে পড়বে না- যখন তারা খেলতামাশায় মত্ত থাকবে। কিংবা তারা কি আল্লাহ তায়ালার কলাকৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে, অথচ আল্লাহ তায়ালার কলাকৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জাতি ছাড়া কেউই নিশ্চিত হতে পারে না।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-৯৯)আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, মহান আল্লাহ মাঝে মধ্যে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়। তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করে। পাপকর্ম ছেড়ে দেয়। আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মুনাজাত করে। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলত, ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন।’ মদিনায় যখন একবার ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন হজরত ওমর রা: তার জনগণকে ভাষণে বলেছিলেন, ‘যদি আরেকবার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, তাহলে আমি এখানে তোমাদের সাথে থাকব না।’ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মানুষকে আজাব থেকে নিরাপদ রাখবে। তা হলোÑ যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তাদের উচিত দ্রুততার সাথে সমাজে প্রচলিত অন্যায় থামিয়ে দেয়া। গুনাহমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করা। ভালো কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ সত্য উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন। আমিন। লেখক: শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইসলাম হামিউসসুন্নাহ মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com