নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকার ছোট বড় দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে নকল সিগারেট। ক্রেতাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নকল পণ্যের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। ফলে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে, আসল পণ্যের দাম দিয়ে পাচ্ছে নকল সিগারেট। আর বৈধ সিগারেট কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও ব্র্যান্ডের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ এ বাজার নিয়ন্ত্রনের বাইরে থাকায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ও তাদের পরিবেশকের প্রতিনিধি বলছে, স্থানীয় একটি চক্র সমবায় সমিতির আড়ালে তাদের ব্র্যান্ডের নকল গোল্ডলিফ সিগারেট বাজারজাত করছে। প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও বৈধ তামাকজাত পণ্য সিগারেট। শহরের মডেল স্কুল মোড়, শিবগঞ্জ মোড়সহ প্রায় প্রতিটি এলাকার আনাচে কানাচে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজারের মুদি দোকানে নকল গোল্ডলিফ সিগারেট আবাধে বিক্রি হচ্ছে। প্রথমে দেখে বোঝার উপায় নেই সিগারেটগুলো নকল। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে সম্পূর্ণ তামাক মুক্ত করার লক্ষ্য প্রতি বছর শুল্ক-কর বৃদ্ধিসহ নানা আইনি পদক্ষেপ নেয় সরকার। যাতে পণ্যটির দাম বেড়ে যায় এবং মানুষ তামাকজাত পণ্য কম ব্যবহার করেন। কিন্তু অবৈধভাবে উৎপাদিত জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর নকল সিগারেটের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনসহ সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। গত সাত সেপ্টেম্বর উপজেলা সদরের মডেল স্কুল গেট সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে তমুল বাকবিতন্ডা দেখে এগিয়ে যান প্রতিবেদক। সেখানে নকল সিগারেট বিক্রি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছিল উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই ক্রেতা অভিযোগ করেন যে, সুবত এর চায়ের দোকান থেকে ২১০ টাকা দিয়ে এক প্যাকেট (২০ শলাকা) গোল্ডলিফ সিগারেট ক্রয় করেন। কিন্তু দোকানি তাকে নকল সিগারেট দিয়েছে। আসল প্যাকেটের নিচের অংশ খোদাই করে একটি নম্বর লেখা থাকে। দোকানি তাকে যে সিগারেটের দিয়েছে তাতে সেই নম্বর নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই চা দোকানি বলেন, উপজেলা সদরের দুলালপাড়া এলাকার কর্ণফুলী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এর মাঠকর্মীদের কাছ থেকে সিগারেটগুলো কিনেছেন। ওই সমিতির অফিসে গিয়ে নকল সিগারেটের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মোকলেছার রহমান নিজেকে সাবেক সেনা ও র্যাব সদস্য দাবি করে বলেন, লাভের আশায় তারা গোল্ডলিফ সিগারেট কিনে রেখেছিলেন। এখন তা কর্মীদের মাধ্যমে বাজারজাত করছেন। কোথায় থেকে তারা নকল সিগারেট কিনেছেন সে ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি। সমবায় সমিতিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফুল ইসলাম বলেন, তাদের মাঠকর্মীরা ঋণ আদায়ের পাশাপাশি সিগারেট, গুল ও চা পাতি বাজারজাত করে। এখন থেকে তারা আর সিগারেট বাজারজাত করবে না। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ও তাদের পরিবেশকের স্থানীয় প্রতিনিধি সাব্বির আহমেদ বলেন, নকল সিগারেটের শলাকা হাতে নিলে দেখা যায়, ব্র্যান্ডের নাম অমসৃণ ও গাঢ় রংয়ের। আঙুল দিয়ে নকল শলাকায় চাপ দিলে আসল শলাকা অপেক্ষাকৃত নরম। আসল প্যাকেটের নিচের অংশ খোদাই করে একটি নম্বর থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, সিগারেট কোম্পানির নিযুক্ত ডিলারের বিক্রয় প্রতিনিধিরা চাহিদা মতো সিগারেট সরহরাহ করে না। বাধ্য হয়েই নকল সিগারেট ক্রয় করতে হয় তাদের। তাছাড়া দামেও সস্তা। উপজেলা সদরের বাসিন্দা তারেক হোসেন নামে এক ভোক্তা বলেন, হুবহু আসল প্যাকেট থেকে নকল সিগারেটের শলাকা বের করে দেওয়া হয়। তাই সহজে বোঝা যায় না। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হীরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, সমিতিটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কোনো সমবায় সমিতি তাদের কর্মীদের মাধ্যমে নকল পণ্য বাজারজাত করতে পারে কি না প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবদুল হাকিম বলেন, তামাক শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং নি¤œমানের তামাক দিয়ে তৈরি নকল সিগারেট স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। এ ব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।