বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার করোনা মোকাবেলায় চার দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের এই ব্যর্থতায় সাংবাদিক মারা যাচ্ছে; চিকিৎসক মারা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে এবং প্রতিদিন লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। করোনায় মৃত্যুর সকল দায় সরকারের; এই দায় তাদেরকে নিতে হবে।
সোমবার (১১ মে) গাজীপুর মহানগর বিএনপির টঙ্গী পূর্ব থানা শাখা কর্তৃক টঙ্গী বাজার এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীর প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রিজভী এসব কথা বলেন।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী আরও বলেন, যে সময় বাংলাদেশে করোনা সামাল দেওয়ার যথেষ্ট সময় ছিল, তখন আপনারা করেননি। চীনে যখন গণসংক্রমণ শুরু হলো তখন আপনারা লকডাউন, শার্টডাউন ইত্যাদি পদক্ষেপ নিলে আজকে বাংলাদেশে গণসংক্রমণ শুরু হতো না। আজকে এই মৃত্যুর দায় সরকারের। কারণ শুরুতে তারা সচেতনতামূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরং এই সুযোগে আজকে নিজেদের লোকদেরকে পকেট ভারি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চাল চুরি হচ্ছে, আত্মসাত হচ্ছে, লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে যদি সত্যিকারের নির্বাচিত সরকার হতো, জনগণের সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার হতো; তাহলে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হতো। আর জবাবদিহি করতে গেলে জনগণের জন্য কী করার দরকার, জনগণের পক্ষে কি কাজ করার দরকার; তারা এই কাজগুলো করতেন। কিন্তু তাদের তো কোন জবাবদিহি করার দরকার নেই। রাতের অন্ধকারে তাদের ভোট হয়ে যায়। তাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের জন্যও কোনো ভোট লাগে না। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে চর্তুষ্পদ প্রাণী ঘুরাফেরা করে। সুতরাং তাদের কেন জনগণের প্রতি এতো মহব্বত থাকবে? কারা বাঁচলো, কে মরলো, কারা অসুস্থ হলো বা কে কি অবস্থায় থাকলো এতে তো সরকারের কিছু যায় আসে না। আর তাদের কিছু যায় আসে না বলেই আজকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আজকে লাশের সারি বৃদ্ধি হচ্ছে। আজকে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ভয়ঙ্কর অবস্থা বিরাজ করছে। এই রকম একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে, একটা ভয়াল পরিস্থিতির মধ্যে মৃত্যু ও আক্রান্তের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
রিজভী বলেন, আমরা আজকে যারা এখানে উপস্থিত আছি, আগামীকাল আমরা কে মরি কে বাঁচি এর কোনো নিশ্চয়তা নাই। অথচ এই সরকার অত্যন্ত ভাল আছে। এই সরকারের মন্ত্রীরা ভাল আছেন। তারা অনেক নিরাপত্তার মধ্যে আছেন। সুতরাং তাদের জনগণ নিয়ে; মানুষ নিয়ে এতো ভাবনার তো দরকার নেই। এই কারণেই আজকে যারা কথা বলছেন, যারা তাদের সমালোচনা করছেন তারা এই সরকারের রোষানলের শিকার হচ্ছেন। এই ক্রান্তিলগ্নেও এই সরকারের ফ্যাসিজম, এই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা বিন্দু পরিমাণ কমেনি।
তিনি বলেন, আজকে সাংবাদিককে সত্য কথা বলার জন্য পিঠমোড়া করে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক করোনায় মারা গেছেন। প্রায় ৮৫ জন সাংবাদিক ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই যে বিষয়গুলো এগুলো লেখা যাবে না। সামাজিক মাধ্যমে এগুলো বলা যাবে না, আর বললে পরিণতি হবে কাজলের মতো। পরিণতি হবে আরও অনেকের মতো। খোকন ছেলেটি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সেই ছেলেটি আজকে হারিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে। একজন দক্ষ প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ছিল সে। কিন্তু চিকিৎসার অভাবে সে মারা গেল। তার পরিবার তার টেস্ট করাতে পারেনি। এটি পজেটিভ না নেগেটিভ খোকন জানতে পারেনি। এই যদি পরিস্থিতি হয়; তাহলে সরকারের সমালোচনা কে করবে না।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধ হাসান উদ্দিন সরকার, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি মাহবুবুল আলম শুক্কুর, পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম কিরণ, গাজীপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। স্থানীয় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম মোফাজ্জল শিশিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এমআর/প্রিন্স