আফ্রিকা মহাদেশে মুসলিমরা সংখ্যায় বিপুল। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে এর কোনো প্রতিফলন নেই। তারা যেন নিজ দেশে পরবাসী। সংখ্যার আধিক্য ছাড়া বাস্তব জীবনে তাদের কোনো ভূমিকাই নেই, বরং তারা নানা রকম জুলুম নির্যাতনের শিকার।
আ্যঙ্গোলা: এখানে মোট ১৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা এক মিলিয়ন তথা ১০ লাখ। এখন পর্যন্ত ইসলাম সে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ধর্ম নয়। বরং মুসলমানরা সেখানে ভয়াবহ ধর্মবৈষম্যের শিকার। ব্যাপকভাবে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এবং মসজিদগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ইসলামের মৌলিক বিধান পালনে বাধা দেয়া হয়। বরং ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম যেন অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি উগ্রপন্থী ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সেন্ট্রাল আফ্রিকা: খ্রিষ্টধর্মের পর ইসলাম হলো দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। এর অনুসারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ তথা সাড়ে চার মিলিয়ন। ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছে যাকে মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই গণহত্যা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়। ২০১৭ সালে উগ্রপন্থী খ্রিষ্টান সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘এন্টি বালাকা’ দেশ থেকে মুসলমানদেরকে উৎখাত করার লক্ষ্যে আবারো গণহত্যা চালায় এবং সেক্ষেত্রে তারা সফল হয়। গণহত্যার পর ২০১৮সালে জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতায় দশ লাখ মুসলিম শরণার্থী যখন নিজ ভূমিতে ফিরে এলো, তখন দেখল তাদের ঘর-বাড়ি হয়তো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে নতুবা বেদখল হয়ে গেছে।
নাইজেরিয়া: আফ্রিকায় সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তাদের অধিকাংশই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অন্তর্গত মালেকি মাজহাবের অনুসারী। সংখ্যালঘু শিয়া স¤প্রদায়ের লোকজনও রয়েছে।
হাউসা ও ফুলানী গোত্র দুটি দেশে বৃহত্তম মুসলিম গোত্র। এর বেশির ভাগ লোক কৃষি,ব্যবসা ও বেদুইন পেশায় সাথে জড়িত। পাশাপাশি অনেকে পশুপালন ও পর্যটন শিল্পের সাথেও জড়িত। রাজনীতি ও সামরিক বাহিনীতে হাউসা গোত্রের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তারা দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে।মোট জনসংখ্যা ১২১ মিলিয়ন তথা ১২ কোটি ১০ লাখ। মুসলমানদের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, নেই অধিকার: মুসলিম জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ নিরক্ষর। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। ইসলামী আন্দোলনগুলোর কার্যক্রম মসজিদ-মাদরাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আর আরবি মাদরাসাগুলোর দুরাবস্থা ও সেগুলোর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ না করার দরুণ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলমানদের অবস্থা শোচনীয়। পাশাপাশি দেশটিতে নিয়মিত শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা-সংঘর্ষ লেগেই থাকে। এটা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব নষ্ট করে দিয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক হস্তক্ষেপ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তারা খ্রিস্টান মিশনারিগুলোকে অর্থায়ন করছে এবং সেখানে মুসলমানদের দুর্বল করার লক্ষ্যে ইসরাইলি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইথিওপিয়া: বিশ্বের ১১টি বৃহত্তম মুসলিম দেশগুলোর একটি হচ্ছে ইথিওপিয়া। বেশির ভাগই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত শাফেয়ি মাযহাবের অনুসারী। অল্প কিছু হানাফি, মালেকি ও যাইদি শিয়া ও ইসমাঈলি শিয়ার বসবাস রয়েছে। মুসলিম সমাজের বড়অংশই সুফিবাদের অনুসারী।ইথিওপিয়ার অর্ধেক লোক আরোমো গোত্রের সদস্য। আর এই গোত্রের ৮০ শতাংশই মুসলিম। তাছাড়া আমহারা ও তিগ্রাই গোত্রের ১৫ শতাংশ লোক মুসলিম। তাদের সংখ্যা তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৫০-৫৬ শতাংশ। দেশটিতে তাদেরও কাঙ্ক্ষিত প্রভাব ও ভূমিকা নেই।তবে অন্যদের তুলনায় তাদের অবস্থা ভালো। এর পেছনে মূল ভূমিকা ১৯৯৪ সালের সংবিধানের। আগে খ্রিস্টধর্ম রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ১৯৯৪ সালে একে সংশোধন করে ইথিওপিয়াকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস: ইথিওপিয়া সরকার মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসবাদ ও দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অভিযোগ করে থাকে।
প্রশাসন সরকারবিরোধী ইথিওপিয় মুসলিম, আলেম-ওলামা ও অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেফতার করে থাকে।
হাবশিদের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত রেখে ও রাজনৈতিক ময়দান থেকে মুসলমানদেরকে নির্বাসিত করার মাধ্যমে সরকার দেশটিতে মুসলমানদের উত্থান দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। লেখক: জাহিদ জাওয়াদ সূত্র : মাইদান, আল জাজিরা