সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

ইবাদতের সারবস্তু দোয়া

ডা: রেনুকা ইসলাম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বর্তমান এই করোনার মহামারীতে যারপরনাই আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। কেউ বাবা হারিয়েছেন, কেউ মাকে চিরদিনের মতো বিদায় দিয়েছেন, কেউ কলিজার টুকরো সন্তানকে কবরে রেখে এসেছেন। কেউ প্রিয়তম স্বামীহারা হয়ে অঝোরে কাঁদছেন। ভাই হারিয়েছেন বোনকে। স্বজনদের বুকে কেবল কান্না আর বেদনা। তার ওপর প্রতিদিন বেঁচে থাকার সংগ্রাম। জীবন তো চালাতে হবে। এত বেদনার মাঝেও আমাদের বুকে কষ্টের পাহাড় নিয়ে কাজকর্ম করতে হয়। সেখানেও কি আমরা খুব ভালো আছি? কেউ চাকরি হারিয়েছেন, করোনাকালীন সময়ে, কারো বেতন হয়নি, কারো বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে, সন্তানের স্কুল-কলেজের বেতন বাকি রয়েছে, হাতে চলার মতো প্রয়োজনীয় টাকা নেই, কেউ ঋণী হয়েছেন, ঋণ শোধ করতে পারছেন না, আরো শত শত সমস্যা আমাদের সামলাতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অনেকেই দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। কান্নাকাটি করছেন। মধ্যবিত্তরা আজ ধরাশায়ী। কী অসম্ভব যাতনায় ভুগছি আমরা। আমরা কেউই ভালো নেই।
জীবনে এত দুঃখ, কষ্ট, শোক, যাতনা, বঞ্চনা, প্রিয়জন হারানোর বেদনা কিভাবে সইব? তাই আজ হাত তুলছি পরম করুণাময়ের কাছে যিনিই একমাত্র পারেন আমাদের এসব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে। হে আল্লাহ। তুমি একমাত্র মহান রব। দয়াময়। সর্বোচ্চদাতা। এই দুঃসময়ে তুমি আমাদের আকুল আবেদনে সাড়া দাও। তুমিই পারো আমাদের দগ্ধ হৃদয়কে শান্ত করতে। তোমার দয়া ছাড়া এত শোক এত কষ্ট কিভাবে আমরা সামলাব? পবিত্র কুরআনে তুমি কতবার বলেছ আমি বান্দাহর ডাকে সাড়া দেই। তোমরা আমাকেই ডাকো।
সূরা আল আরাফে বলেছ, তোমরা আমাকে চুপিচুপি ডাকো। সূরা আল আনআমে বলেছ, মুমিনদেরকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। সূরা আন কাবুতে বলেছ, তোমরা আল্লাহর কাছেই রিজিক চাও। হে আল্লাহ। সর্বোত্তম রিজিকদাতা এই চরম দুর্দিনে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। কোনো মুসলমানকে রিজিকের কষ্টে রেখো না। সূরা মুলকে তুমি বলেছ, তুমি যদি রিজিক বন্ধ করে দাও তবে আর কে রিজিক দিতে পারবে?
হে রব। আমরা তোমার প্রতিটি কথায় বিশ্বাস করি এবং একমাত্র তোমার কাছেই রিজিক চাইছি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে। সূরা মোহাম্মদে তুমি ওয়াদা করেছ যারা তোমার পথে থাকবে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গার কল্যাণের ব্যবস্থা করে দেবে। হে রাব্বুল আলামীন। পরওয়ারদেগার। সব জগতের মালিক। আজ আমাদের চরম দুর্দিনে একমাত্র তুমি ছাড়া কেউই বাঁচাতে পারবে না। এই মুহূর্তে কেউ আছেন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে, কেউ অক্সিজেন নিচ্ছেন, দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা। কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কষ্ট যাতনায় কাতরাছেন। হে আমাদের রব। তুমি সব বিপদ-আপদ তোমার অসীম দয়ার বরকতে দূর করে দাও। আমাদের অসংখ্য ভুলত্রুটি মাফ করে দাও। আমাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিও না।
আমরা আজ বুঝতে পারছি প্রতি পদে পদে তুমি রয়েছ আল্লাহ। একমাত্র আল্লাহই আমাদের সর্বোত্তম সাহায্যকারী। আমাদের হৃদয়ের এই আকুল আবেদনকে তুমি ফিরিয়ে দিও না। আমাদের তোমার অনুগত বান্দাহ হওয়ার ক্ষমতা দাও। কারণ পবিত্র কুরআনে তুমি অনেকবার বলেছ, হেদায়েতের মালিক কেবলমাত্র তুমি। হে আল্লাহ, আমাদের মনকে তোমার প্রতি ভালোবাসা ও ভরসাস্থল বানিয়ে দাও। আমরা যেন একমাত্র তোমার কাছেই সব রকমের সাহায্য অত্যন্ত আশা নিয়ে চাইতে পারি। কারণ তুমি পবিত্র কুরআনে নিরাশ হতে নিষেধ করেছ। এবার বলো তাহলে আমরা আর কোথায় নত হবো তুমি ছাড়া।
হে মহান রব। আমাদের তুমি সেই ধৈর্য দাও এত সব বিপদ মোকাবেলা করার। কারণ তুমি নিজেই কুরআনে বারবার বলেছ, তুমি ধৈর্যশীলদের সাথে আছ। আজ একমাত্র তোমার পানেই চোখ ভিজে যাচ্ছে। হে দয়াময়। হে রাব্বুল আলামীন। আমাদের আশা ভরসার স্থল সবকিছু তো তুমি। সূরা আলে ইমরানে তুমি বলেছো, তোমার কাছেই বলতে, তোমাকে পাওয়ার পর তোমার সরল পথ থেকে যেন দূরে সরে না যাই। আমাদের আর পরীক্ষা করো না প্রভু। আমাদের সাহায্য করো। তুমি এই সূরায় আরো আশা দিয়ে বলেছ যে, যারা তোমাকে ভালোবাসবে তুমিও তাদের ভালোবাসবে। হে আল্লাহ। অজোরে কেঁদে কেঁদে বলছি, তোমার পবিত্র সত্তার কসম, তোমাকে মনে প্রাণে আমরা ভালোবাসি। তাহলে তুমি এই মহাবিপদের মুহূর্তে আমাদেরকে সাহায্য করো। আমাদের ছেড়ে দিয়ো না। আর পরীক্ষা নয় রাব্বুল আলামীন।
হে মহান রব আমরা আজ যারপরনাই অসহায় হয়ে শুধু তোমাকেই ডাকছি। সবার চোখ পানিতে ভেজা। হৃদয়ে কষ্ট বেদনার হাজারো ক্ষত। সূরা ইনশিরাহে (সূরা আলামনাশরাহ) বলেছ, অবশ্যই কষ্টের পরে রয়েছে স্বস্তি। একি কালজয়ী, মহান, হৃদয় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তোমার বাণী। এ বাণী তো আমাদের জন্য। হ্যাঁ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের জন্য। আমরা সম্পূর্ণ আস্থার সাথে তোমার দয়া ভিক্ষা করছি। সব অবস্থায় যেন তোমার জিকির, তোমার শোকর এবং তোমার ওপর ভরসা রেখে তোমার কাছেই পুরোপুরিভাবে নিজকে সঁপে দিতে পারি, তোমার সাহায্য আসবেই। আসবেই ইনশাআল্লাহ। আমীন।
লেখক: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com