দেখতে খয়েরি রং, খেতে মিষ্টিÑ চাষ করেও অধিক লাভ ফিলিপাইনের জাতের গ্যান্ডারি আখ। এটি ২০ থেকে ২২ ফুট লম্বা হয়। চাষ করতে তেমন বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। প্রায় দুই একর জমিতে এই নতুন জাতের গ্যান্ডারি আখ চাষ করেছেন ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন অপু। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে নতুন জাতের এই আখ ২০ হাজার টাকায় চুয়াডাঙ্গা জেলার দিন্নাতপুর গ্রাম থেকে বাচ্চু নামের এক চাষির কাছ থেকে তিনি ২০০ পিচ চারা সংগ্রহ করেন। চারাগুলো তিনি ৩ শতক জমিতে রোপন করেন। প্রথমে অভিজ্ঞতার অভাবে অর্ধেক চারা মারা যায়। বাকি অর্ধেক চারার আখ দিয়েই তিনি আবার জমিতে নিজেই তৈরি করেন নতুন চারা। এখন তিনি প্রায় দুই একর জমিতে এই নতুন ফিলিপাইনের খয়েরি জাতের গ্যান্ডারি আখ চাষ করেছেন। প্রথমে তিনি ইউটিউব থেকে এই আখের জাত ও চারা সম্পর্কে জানতে পারেন। গত বছর তিনি বেশ কিছু চারা ৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। একটি আখ থেকে ২০/২৫ টি চার পাওয়া যায় আবার সেই একটি চারা থেকে ৮/১০ টি আখ পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে সার, সেচ তারের বেড়া, ও তারসহ প্রায় ৫০থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় দুই থেকে আড়ায় লাখ টাকার এই নতুন জাতের আখ বিক্রি সম্ভব বলে জানালেন চেয়ারম্যান আলী হসেন অপু। এ আখ সাধারণ আখের তুলনায় নরম বেশি, মিষ্টিও বেশি। প্রথমবার ৩শতক জমিতে পরিক্ষা মুলক ভাবে চাষ করে ভালো ফলন পাবার পর তিনি এ বছর বানিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন। এই জাতের আখ অনেক নরম তাই শেয়ালের হাত থেকে আখকে রক্ষা করতে জমির চারদিকে তারের বেড় দিয়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই আসেন এই চাষ সম্পর্কে জানতে ও দেখতে। সরজমিনে আখ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, নতুন জাতের এ আখ এক একটি প্রায় ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা। এই আখ গুলি দেখতে সম্পুর্ন ভিন্ন। দেশি আখের সাথে এই আখের কোনো মিল নেই। নতুন জাতের এই আখ চারা রোপনের দিন থেকে এক বছরের মধ্যে বাজার যাত করা যায়। আখটি গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত দেখতে একই রকম। ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে তিনিই সর্ব প্রথম ফিলিপাইনের খয়েরি জাতের গ্যান্ডারি আখ বানিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন। কার্তিক মাসে এই জাতের আখের চারা রোপন করতে হয়। ৩৩শতকের এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৫শ থেকে ২৮শ চারা রোপন করা যায়। আখ যেনো মাটিতে পড়ে না যায় সে জন্য জমিতে তার টাঙ্গিয়ে তারের সাথে আখ বেঁধে দিতে হয়। খরা মৌসুমে জমিতে একটু বেশি পরিমানে সেচ দিতে হয়। আগামী দুই থেকে অড়াই মাস পর এই আখ বিক্রির উপযোগী হলে বাজার জাত করবেন। পাইকারী দামে প্রতিটি আখ ৭০ থেকে ৮০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি করবেন। আর এই নতুন আখের চাষ সকল কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি প্রতিটি চারা ২৫/৩০ টাকা দামে বিক্রি করবেন। আগামি বছর ৫ একর জমিতে এই নতুন ফিলিপাইনের খয়েরি জাতের গ্যান্ডারি আখ চাষ করবেন বলে জানান তিনি। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন চারা ও চাষ সম্পর্কে জানতে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা শিকদার মোহম্মদ মেহায়মেন আক্তার বলেন, তিনিও রায়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন অপুর গ্যান্ডারী দেখেছেন। আখ চাষ সম্পর্কে চিনিকলের কৃষি বিভাগ ভালো বলতে পারবেন। তবে মুখে খাওয়া আখ হওয়ায় আমরাও বেশ পরামর্শ দিয়েছেন। এটা খুব লাভজনক।