ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত মধুমতী নদী। মধুমতির করাল গ্রাসে প্রতি বছরই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এসব এলাকার শত শত একর ফসলি জমি, বসতবাড়ী, মসজিদ মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি মধুমতীর পানি বৃদ্ধি ও হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে উপজেলার বাজড়া, চরডাঙ্গা, গোপালপুর, চর আজমপুর দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, বানা, চরনারান্দিয়া, ধুলজুড়ি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ী, ফসলি জমি, মসজিদ মাদ্রাসা সহ মাছের ঘের ও ফলের বাগান। নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ভাঙ্গন কবলিত নদী পাড়ের মানুষ। হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদ্রসা। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। উপজেলার বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিকক দ্যালয়, পশ্চিম চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এন বি ডি সি আলহেরা দাখিল মাদ্রাসা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মধুমতি নদী। বর্ষায় তীব্র স্রোতে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি। বিদ্যালয়ের ভবনের থেকে নদী মাত্র ৫ গজ দুরে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে পুরো ভবনটাই বিলীন হয়ে যেতে পারে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির ২০১৪ সালে নির্মিত নতুন একতালা ভবনটি। একইভাবে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ৪৬নং পশ্চিম চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৭নং পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৮০ সালে স্থাপিত এবং ১৯৯৩ সালে পুনঃনির্মাণ করা পশ্চিম চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটি নদী থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে অবস্থান করছে। ১৯৩৫ সালে স্থাপিত এবং ২০১০ সালে একতলা ভনদবন নির্মাণ করা হয় পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি মধুমতি নদী থেকে মাত্র ৪০ গজ দূরে অবস্থান করছে । এদিকে বুড়াইচ ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় এন বি ডি সি আল হেরা দাখিল মাদ্রাসার সন্নিকটে অবস্থান করছে সর্বনাশা মধুমতি। অতিদ্রুত নদীতে ভাঙ্গন রোধে বাধঁ নির্মাণ না করলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। আল হেরা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুর রউফ বলেন, এ ভাবে নদী ভাঙ্গন চলতে থাকলে মাদ্রাসাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আর এতে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান, তারা টেকসই বাঁধের জন্য সংশ্লিষ্টের কাজে আবেন জানিয়েছেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, ‘এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নদীগর্ভে কোন বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেলে দ্রুত অন্য কোন নিরাপদ স্থানে সেটি পুণঃস্থাপন করা হবে।’ জানতে চাইলে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার প্রতিবেদককে বলেন, আপদকালীন বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বিদ্যালয়গুলো রক্ষা করতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে এই কর্মকর্তা আরো জানান, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনটি গত ২৫ মে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত হবে।