বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ঢাকার তিন নদীতে প্রাণ ফেরানো সম্ভব

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

৮ মাসেও চূড়ান্ত হয়নি নদী রক্ষা কমিশন আইনের সংশোধনী 
ঢাকাকে ঘিরে থাকা চারটির মধ্যে তিনটি নদীতেই প্রাণ ফেরানো সম্ভব। এজন্য দরকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সরকারের সদিচ্ছা। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং ধলেশ্বরীর উৎপত্তিস্থল ও মোহনাতে এখনও পানির প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। তবে বালু নদীতে পানির প্রবাহ তৈরি করা কঠিন হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
বালু নদী: গাজীপুরের পারুলি খাল আর টাঙ্গাইলের সুতি নদীর মিলিত স্রোতধারা থেকে বালু নদীর উৎপত্তি। এরমধ্যে পারুলি খাল বছরের বেশিরভাগ সময় পানিশূন্য থাকে। এর দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। সুতি নদীর দৈর্ঘ্য ৩৬ কিলোমিটার। পুরনো ব্রহ্মপুত্র থেকে উৎপত্তি হওয়া সুতি নদী ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত এতে পানি থাকলেও বছরের অন্য সময় শুকিয়ে যায়। ফলে উজান থেকে বালু নদীতে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা কঠিন।
বুড়িগঙ্গা: ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ দিয়ে ২৯ কিলোমিটারের প্রবাহিত স্রোতধারাটি বুড়িগঙ্গা। এর উৎপত্তি স্থল এবং মোহনা ধলেশ্বরী নদীতে। ধলেশ্বরীর উৎস যমুনা আর মোহনা হচ্ছে মেঘনা। ধলেশ্বরীতে সারাবছরই পানির প্রবাহ থাকে। যে কারণে বুড়িগঙ্গাও শুকায় না। বর্ষায় পানির প্রবাহ বেশি থাকে। তখন বুড়িগঙ্গার পানি কিছুটা পরিষ্কার দেখা গেলেও গ্রীষ্মে এর উল্টোচিত্র। বছরের অধিকাংশ সময় পানির রঙ থাকে কালো। যার প্রধান কারণ নদীর তীরবর্তী শিল্পকারখানা দূষণ ও বাসাবাড়ির আবর্জনা।
অন্যদিকে, ধলেশ্বরীর উৎস যমুনায় ড্রেজিং করে এতে প্রবাহ বাড়ানো গেলে বুড়িগঙ্গাতেও প্রবাহ বাড়বে। এর আগে এই ধরনের একটি প্রকল্পের কথা আলোচনা হলেও বিপুল ব্যয়ের কারণে ওই চিন্তা বাতিল করা হয়।
তুরাগ: ৬২ কিলোমিটারের নদীটি ঢাকা ও গাজীপুর দিয়ে প্রবাহিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এই নদীর গভীরতা ছিল ১৩ দশমিক ৫ মিটার। এর উৎসে আছে বংশী নদী। যা জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর হয়ে ঢাকায় এসে তুরাগে মিশেছে। বংশীর উৎপত্তিস্থল পুরনো ব্রহ্মপুত্রে। সেখানে পানির প্রবাহ আছে। এতে বংশীর পানি প্রবাহ বাড়িয়ে তুরাগকে সচল রাখা সম্ভব।
ধলেশ্বরী: ধলেশ্বরীর উৎস যমুনা। এর মোহনা পড়েছে মেঘনা। ফলে এই নদীতেও পানির প্রবাহ তৈরি সম্ভব। ৬২ কিলোমিটার লম্বা এই নদীর পানির প্রবাহ বাড়ানো গেলে প্রাণ ফিরবে ঢাকায় আশেপাশের নদীগুলোতেও।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন: এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বর্ষায় পানি বেড়ে প্রবাহ বাড়বে। এটা প্রাকৃতিক। কিন্তু আমাদেরও কিছু করার আছে। দূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে জনবল বাড়াতে হবে। কার্যকর প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হতে হবে। এ বিষয়ে বাপার সহসভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর প্রবাহ বাড়াতে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সরকারের যতটা আইনের কঠোর প্রয়োগ করার কথা, ততটা করছে না। আমরা পরিবেশবাদীরা সেসব সুপারিশ করছি তাও সরকার দেখছে না।
৮ মাসেও চূড়ান্ত হয়নি নদী রক্ষা কমিশন আইনের সংশোধনী: দেশের নদীগুলো রক্ষায় আরও কঠোর হওয়ার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। সেটি সংশোধনের উদ্দেশে খসড়া জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০২০ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সেই খসড়া আট মাসেও চূড়ান্ত করা যায়নি। গত বছরের ডিসেম্বর এই আইনের সংশোধন করে খসড়া প্রণয়ন করা হয়। এরপর সবার মতামতের জন্য আলোচনা সভা করা হয়, কমিশনের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়। সবার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করে সেটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সে খসড়া আট মাসেও চূড়ান্ত করা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি আবারও এ বিষয়ে কমিশনের কাছে নতুন করে আগের আইনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সদ্য কামরুন নাহার আহমেদ বলেন, খসড়া তো আমরা অনেক আগেই জমা দিয়েছি। এরপর আবার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে কাজটি দ্রুত করার অনুরোধও করেছি। কিন্তু তারা গত সপ্তাহে আবার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে আগের আইনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে। আমরা এখন সে বিষয়ে কাজ করছি। খসড়া প্রস্তুতের পর সেটি চূড়ান্ত করতে গত জানুয়ারি মাসে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয় কমিশন। চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রপার্টি বা জনগণের অধিকারভুক্ত ন্যস্ত সম্পত্তি নদ-নদী, খাল, বিল, জলাশয় ও সমুদ্র উপকূলের অবৈধ দখল, দূষণ , অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার , যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে ও নৌপরিবহন যোগ্যরূপে গড়ে তোলা এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করণার্থে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও অপরিহার্য হয়ে পড়ায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১৩ সংশোধন করে কমিশন কর্তৃক জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০২০ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে’ । চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উপরোক্ত বিষয়াবলীর আলোকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পাঠানো হলো।’ কমিশন সূত্র জানায়, এরপর আরও কয়েকবার কমিশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার নানা সংশোধনীর কথা বলে বলে সময় বয়ে যাচ্ছে। করোনার সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউনের কারণেও কাজ কিছুটা পিছিয়েছে। তবে সময়ের হিসেবে দেখা যায় প্রায় ৮ মাস এরইমধ্যে চলে গেছে। কিন্তু এখনও আইনটি চূড়ান্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। ফলে নদী দখলদার বা দূষণকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনের প্রয়োগও করতে পারছে না কমিশন। এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে আজ পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও নানা কর্মসূচি পালন করবে। নদী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার পালন করা হয় বিশ্ব নদী দিবস। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে রিভারস ফর কমিউনিটি বা ‘মানুষের জন্য নদী’। ১৯৮০ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যে শিক্ষক ও নদীপ্রেমিক মার্ক অ্যাঞ্জেলোর উদ্যোগে সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার দিবসটি পালনের সূচনা হয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দিবসটি সমর্থন করা হয়। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে নদী দিবস পালন শুরু করা হয়। এদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, সরকারের সদিচ্ছা আর কঠোর আইনের প্রয়োগ ছাড়া নদীর এই দূষণ দখল বন্ধ করা সম্ভব নয়। নদী কমিশন গঠন করা হয়েছে ঠিক কিন্তু তারা শুধু জরিপই করতে পারে। আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে না। এখন সে বিষয়ে আইন করা হলো। এরপর তাতে আবার সংশোধনী আনা হলো। এসব করতে করতেই বছর মাস চলে যাচ্ছে আইন আর চূড়ান্ত হচ্ছে না। এতে করে কমিশনের কাজও তেমন কার্যকর কিছু হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, নদী রক্ষা কমিশনকে কার্যকর করতে হলে অবশ্যই আইনটি দ্রুত চূড়ান্ত করা দরকার। যত দেরি হবে ততই পিছিয়ে যাবে কমিশনের কাজ। কমিশন এখন শুধু অন্যদের অনুরোধই করতে পারে। নিজেরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না। তাদের এই অধিকার দেওয়া হলে কাজ আরও দ্রুত এগুবে বলে আমি মনে করি। তবে তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দেশের এখনকার প্রচলিত আইন দিয়েও নদীকে রক্ষা করা সম্ভব। যা এতদিন সরকার করেনি। দখল আর দূষণে দেশের নদীগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আমাদের উচিত এখন কঠোর উদ্যোগ নেওয়া। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নদী কমিশনকে নদীগুলোর প্যারেন্টাল রাইট বা অভিভাবকত্ব দিয়েছে এবং বলেছে নদী কমিশনকে স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে শক্তিশালী করতে । যার অংশ হিসেবে নদী কমিশন আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন এই নদী কমিশন আইন যদি মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করে সংশোধন করতে হয় তাহলে তো এই রায়ের যে মূল উদ্দেশ্য সেই উদ্দেশ্যই গর্হিত হয়। কারণ মন্ত্রণালয়গুলো নদীর বিপক্ষে যেসব কর্মকা- করছে সেটা যাতে কমিশন মনিটরিং করতে পারে সেজন্যই এই আইন করার কথা।- বাংলা ট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com