যশোরের চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও নিজ দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার প্রেসক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ফুলসারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ইউপি মেম্বাররা। লিখিত বক্তব্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প, নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রকল্প, রাস্তা সংস্কার, মসজিদের অর্থ বরাদ্দ, সার কেলেংকারি, দলীয় পদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রকল্পে মেহেদী মাসুদ তার সহযোগী দ্বারা নতুন মিটার বাবদ সাড়ে ৫৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সলুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি হওয়ায় সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ১০ লাখ, সহকারী প্রধান শিক্ষক করার কথা বলে আট লাখ, ভবন সংস্কারের নামে দুই লাখ, আরসিএমটিইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ করেন এ ইউপি মেম্বার। এছাড়া, ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি, ভিজিএফ ও কর্মসৃজন প্রকল্পের সব কাজ নিজস্ব লোক দিয়ে করিয়ে লাখ লাখ টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ইউপি মেম্বার আবুল কাশেম। তিনি দাবি করেন, মেহেদী মাসুদ শিবনগর জামে মসজিদে টাকা বরাদ্দের নাম করে এক লাখ, আফরা মসজিদ থেকে দুই লাখ, আফড়াপাড়া মসজিদ থেকে দুই লাখসহ বিভিন্ন মসজিদে বরাদ্দের নামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে মেহেদী মাসুদ তার নিজস্ব লোক দিয়ে প্রায় একশজনের কাছ থেকে বিশ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে না দেওয়ায় ইতিমধ্যে এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মেহেদী মাসুদ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বললেই নির্যাতিত কিংবা মামলার আসামি হতে হয়। ইউপি মেম্বার আবুল কাশেম আরও বলেন, চৌগাছার ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মেহেদী মাসুদ ও তার ভাই আসাদ চৌধুরী ঠিকাদারী কাজ নিয়েও রাস্তা পাকা করেননি। কাজ না করেই দুই ভাই লাখ লাখ টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন দাবি করেন কাশেম। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে,এছাড়া মেহেদী মাসুদ তার পিতা আবুল কাশেম চৌধুরীর নামে প্রতিবন্দ্বী স্কুলে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একইসাথে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্ধ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। অভিযোগ করা হয়েছে,অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তার পোষ্য সন্ত্রাসী সোবহানুল আলম বাবুসহ অন্যান্যকে দিয়ে যুবলীগ কর্মী জুলকান নাঈন, গত বছরের ১০ জুলাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ও ২০১৫ সালের ইউপি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করান। এছাড়া মেহেদী মাসুদের হাতে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন বলে দাবি করেন ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কাশেম। আগামী ইউপি নির্বাচনে ১১টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক দেওয়ার কথা বলে ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন ইউপি মেম্বার আবুল কাশেম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, আগামী ইউপি নির্বাচনে এমন একজন দুর্নীতিবাজ লোককে মনোনয়ন দিলে ওই এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হবে। এ কারণে মেহেদী মাসুদ চৌধুরীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তির দেওয়ার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফুলসারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শের আলী, ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক আব্দুল মান্নান, আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল আহম্মেদ, নির্যাতনের শিকার আব্দুর রহমান, জুলকার নাঈন, যুবলীগ নেতা কবির হোসেন প্রমুখ।