শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

টানা তিন মাস ধরে কমছে রেমিট্যান্স

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ অক্টোবর, ২০২১

চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরেও কমেছে রেমিট্যান্স। আগের দুই মাসেও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বৈদেশিক আয়। সবমিলে তিন মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪১ কোটি ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়েও রেমিট্যান্স এসেছিল ৬৭১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এ তিন মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৩১ কোটি ডলার বা ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
আবার হুন্ডি প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, করোনার প্রভাবে কাজ হারিয়ে যে হারে দেশে এসেছেন, সে তুলনায় লোক কম যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স কমে থাকতে পারে বলে সংশ্নিষ্টদের ধারণা। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিও কমেছে। তবে বেড়েছে আমদানি। যে কারণে ডলারের দর বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেই রোববার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় বেচা-কেনা হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা জানান, করোনার কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খারাপ ছিল। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আবার পাচার প্রবণতা বেড়ে থাকতে পারে। ফলে মাঝে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানো অনেকে আবার হুন্ডি কারবারিদের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন। এছাড়া গত অর্থবছরে করোনা শুরুর পর কাজ হারিয়ে কিংবা আতঙ্কের কারণে অনেকে জমানো টাকা নিয়ে দেশেও ফিরেছিলেন। যে হারে লোক দেশে এসেছে, সে তুলনায় নতুন করে বিদেশে গেছে অনেক কম। আবার সাধারণভাবেই হঠাৎ করে কোনো কিছুতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলে পরবর্তীতে কমে। সবমিলে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির পর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত থাকলেও এবার কমে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা মোট ১৭৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই মাসে এসেছিল ২১৫ কোটি ডলার। এর মানে গত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বা ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আবার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের এ রেমিট্যান্স গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩২ কোটি ডলার। সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪০ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ৭৬ লাখ ডলার। এককভাবে সর্বোচ্চ ৪৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে। যা মোট রেমিট্যান্সের ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলার বা ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ এসেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ডলার বা ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, করোনার কারণে প্রবাসীদের অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। যে হারে দেশে ফিরেছেন, নতুনভাবে যেতে পেরেছেন সে তুলনায় অনেক কম। এছাড়া আরেকটি অন্যতম কারণ বেশি রেমিট্যান্স আসে এ রকম দেশগুলো এখনও পুরোপুরি আগের অবস্থায় যেতে পারেনি। তবে ইতোমধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা ফিরবে বলে আশা করা যায়। গত অর্থবছর রেমিট্যান্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেমিট্যান্সে সরকারের দুই শতাংশ প্রণোদনা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আবার করোনার প্রভাবে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরাদের অনেকেই সব সঞ্চয় নিয়ে এসেছেন। কেউ-কেউ দেশে কিছু করবেন এই আশায় সব সঞ্চয় পাঠিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান। যেখানে আগের অর্থবছর এসেছিল এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার। এ হিসেবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৬৫৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। আগে কখনও এক অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। করোনার মধ্যে রেমিট্যান্সে ব্যাপক প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত ২৪ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে বর্তমানে আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়লেও রপ্তানি কম থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এখন আবার ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কারণে রিজার্ভ কমে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৪৬ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এতে করে ডলারের দর ব্যাপক বেড়ে আন্তঃব্যাংকেই রোববার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায়। যদিও গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল।
এ বছরের গত জুলাই মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ছয় কারণ উল্লেখ্য করা হয়েছিল। তখন করোনা সংকটের সময়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশ নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে খাবি খাচ্ছেছিল। তবে এই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কিছুটা স্বস্তি দিতেছিল। এসব দেশে অর্থনীতির অন্যতম বড় চালিকা শক্তি হয়েছিল প্রবাসী আয়। করোনার মধ্যে গত ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী আয় বেড়েছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
করোনার মধ্যে কেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় প্রবাসী আয় বেড়েছে, তা নিয়ে ১৩ জুলাই একটি মতামত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সেখানে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ছয় কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হলো প্রবাসীদের সঞ্চয় দেশে পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, বৈধ পথে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি, দেশে থাকা পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীলতা, অর্থ প্রেরণের নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, কর ছাড় ও বড় দেশের প্রণোদনার অর্থের কিছু অংশও আসা। গত ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট ২ হাজার ১৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে এসেছে। করোনার মধ্যেও তখনপ্রবাসী আয়ে ১৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়। আর বর্তমানে প্রবাসী আয় পাঠানোয় পুরো বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল ভারত ও পাকিস্তান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয় দক্ষিণ এশিয়ার গরিব পরিবারগুলোর দারিদ্র্যসীমার ওপরে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সঞ্চয় দেশে পাঠানো: করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ কমেছে। ফলে প্রবাসে বহু শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁরা নিজেদের সঞ্চয় দেশে নিয়ে এসেছেন।
বৈধ উপায়ে অর্থ প্রেরণ: করোনাকালে বৈধ উপায়ে প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরতে পারেননি। এতে বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণের সুযোগও কমে যায়। তাই বৈধ উপায়ে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে।
পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীলতা: করোনার সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে থাকা পরিবারগুলো নানা সমস্যায় পড়েছে। তাই পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাঁরা দেশে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন: প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হচ্ছে। নানা ধরনের আর্থিক চ্যানেল তৈরি হয়েছে। জিপে ও আলিপের মতো অর্থ প্রেরণের অ্যাপস এসেছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবাসী আয় পাঠানো সহজ হয়েছে।
কর ছাড়: কর ছাড় বা আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠালে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়।
বড় দেশের প্রণোদনা অর্থ: করোনাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো নানা ধরনের আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। সেই প্রণোদনার অর্থের কিছুটা অংশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসী শ্রমিকেরাও পেয়েছেন। সেটা অনেকেই দেশে নিজেদের পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন। এখন এই কারণগুলোতে ভাটার টান পড়েছে, বলে মনে করেন বিশ্লেশষকরা। তাই এখনই সতর্ক হতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com