১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজটি ধানমন্ডিতে স্থানান্তর হয় ১৯৫৪ সালে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও সেকেলে অবকাঠামো নিয়েই চলছে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের এ প্রাণকেন্দ্র। কলেজটিতে মোট ১৩টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১০টিই জরাজীর্ণ। ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষকদের ট্রেনিং কার্যক্রম। ব্যবহার হচ্ছে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসটিও। পুরনো ভবনগুলো ভেঙে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কলেজসংশ্লিষ্টরা। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ ভবনগুলো ১৯৫৪ সালে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এগুলোতেই ক্লাস চলছে। দীর্ঘদিনের অযত্নের ফলে ভবনগুলোর এ দশা বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে পুরুষ ছাত্রাবাসটি (তিনতলা) পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু ছাত্রাবাসটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও অবকাঠামোগতভাবে বাকি ভবনগুলোও পরিত্যক্ত।
কলেজটির সহযোগী অধ্যাপক জয়দ্বীপ দে বলেন, ক্লাস চালিয়ে নিতে হবে এবং সব ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে কলেজ বন্ধ হয়ে যাবে; এ কারণে অন্য ভবনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমরা ক্লাসসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
সরেজমিন দেখা যায়, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন (দুইতলা), সম্প্রসারিত একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন (তিনতলা), বিজ্ঞান উন্নয়ন কেন্দ্র (ছয়তলা), অধ্যক্ষ বাসভবন (একতলা), পুরুষ হোস্টেল সুপার বাসভবন (তিনতলা), মহিলা হোস্টেল সুপার বাসভবন (তিনতলা), ডরমিটরি ভবন (চারতলা), এমএলএস বাসভবন (তিনতলা) ও মসজিদ (একতলা) খুবই জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলেই প্রতিটি ভবনের ছাদ থেকে পানি ঝরতে থাকে। এছাড়া ভবনগুলোর রঙ উঠে গেছে, শ্যাওলা জমেছে। ছাদ ও মেঝে থেকে সিমেন্ট ঝরে পড়েছে। কোথাও কোথাও রড দৃশ্যমান। দেয়ালও ধসে পড়েছে। বেশির ভাগ ভবনের ওয়াশরুম পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
কলেজটির সহযোগী অধ্যাপক শেখ শাহবাজ রিয়াদ বলেন, সারা দেশের শিক্ষকদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, কিন্তু আমাদের নিজেদের পরিবেশই তো সুন্দর না। দেশের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কলেজ হওয়া সত্ত্বেও আমরা আজ অবহেলার শিকার। কলেজটিতে বর্তমানে চলনসই ভবন রয়েছে তিনটি। পুরুষ হোস্টেল (তিনতলা), মহিলা হোস্টেল (চারতলা) এবং বিজ্ঞান উন্নয়ন কেন্দ্র (চারতলা)। এছাড়া আরো কয়েকটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালে করা পরিকল্পনাটি এখনো পাস হয়নি নানা জটিলতায়। এ সম্পর্কে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুক বলেন, একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা করে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছি। কেউ বলে মন্ত্রণালয় থেকে পাস করিয়ে আনতে হবে, আবার কেউ বলে একনেকে পাস করার পর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আসলে দেশের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কলেজের ব্যাপারে সবার আন্তরিকতা থাকলে এত দিনে বিশ্বমানের টিচার্স ট্রেনিং কলেজে পরিণত হতো। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা নামে একটি ফাইল আমরা পেয়েছি। সেটি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া দেশের সব টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অবকাঠামো বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদ্যমান সমস্যার আশু সমাধান হবে।