ধর্মীয় শিক্ষা ও জ্ঞান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। বিবিধ বিদ্যা বা জ্ঞানে আমরা মানুষেরা জ্ঞানী হই কিন্তু আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমি আধুনিক বিদ্যায় বিদ্যান হওয়া ছাড়া অচল নই। পক্ষান্তরে, ধর্মীয় বিদ্যা বা জ্ঞান ছাড়া আমি চরম পরম ব্যর্থ বিশেষ করে পরজগতে বা চিরস্থায়ী জীবনে। আমি মুমিন মুসলিম বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে কস্মিনকালেও মুমিন মুসলিম হতে পারি না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি উচ্চারণ করলাম কালিমায়ে তাইয়েবা বা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অর্থ- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনিই একমাত্র আমার উপাস্য এবং মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল বা প্রেরিত পয়গম্বর। উচ্চারণ আদৌ যথেষ্ট নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি এ কালিমার অর্থ জানলাম বা বুঝলাম এবং মনে-প্রাণে তা দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করলাম। আমাকে দৃঢ়ভাবে ও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে- ‘আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক নেই বা হতেও পারে না। তিনি অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি, তাঁর সমকক্ষ কেউ হতে পারে না।’ (সূত্র : কালিমা তাইয়েবা ও সূরা ইখলাস)
পরিপূর্ণ মুমিন হতে সর্বোচ্চ দৃঢ়তার সাথে সাতটি বিষয় বিশ^াস করতেই হবে। যথা- ১. আল্লাহ তায়ালা; ২. ফেরেশতাগণ; ৩. আল্লাহ প্রদত্ত কিতাবসমূহ; ৪. সব নবী ও রাসূল; ৫. পরকাল; ৬. তাকদির (যার ভালো-মন্দ আল্লাহর তরফ থেকে); ৭. মৃত্যুর পর পুনরুত্থান। তন্মধ্যে ছয়টি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত এবং (৬ নং) তাকদির সহি হাদিস দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। শতকরা কতভাগ মুমিন মুসলিম উপরি উক্ত সাতটি বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন? অবগত না থাকলে মানা বা দৃঢ় বিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না। আমরা আল্লাহর সেই শিখানো দোয়াটি বেশি বেশি চর্চা করার চেষ্টা করি- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের ক্রিয়াকলাপ থেকে মন্দ বা অসৎ কর্মকা- দূর করে দিন এবং আমাদেরকে সৎকর্মশীল বা মুমিনদের সাথে মৃত্যু দান করুন। অর্থাৎ ঈমানের ওপর বা ঈমানের সাথে আপনার কাছে ফেরত নিন।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-১৯৩)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জানাজার সালাতে সর্বশেষ দোয়ায় সর্বশেষ উচ্চারণ- ‘ওয়ামান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফা তাওয়াফফাহু আলাল ঈমান’। অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাদেরকে মৃত্যু দান করেন, তাদেরকে ঈমানের ওপর মৃত্যু দিন। বিশ্বাস করি ঈমানের ওপর মৃত্যুটা যে চিরস্থায়ী সফলতা বা জান্নাত লাভের চাবি তা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত।
ঈমানের তাৎপর্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ নেই, উপরি উক্ত আলোচনা থেকে তা প্রমাণিত সন্দেহাতীতভাবে। কাজেই ঈমান সম্পৃক্ত জ্ঞান সর্বপ্রকার ও সর্বপ্রধান জ্ঞান, যা না থাকলে মানুষ সর্বহারা। এ জ্ঞানটুকু ধর্মীয় জ্ঞান। ফলে ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ যা রাসূল সা:-এর বাণী। ঈমানের জ্ঞানের পর প্রয়োজন সূরা ফাতিহাসহ কমপক্ষে পাঁচটি সূরা কুরআন থেকে জানা বা মুখস্থ করা। কারণ ওই পাঁচটি সূরা সালাত আদায়ের জন্য অপরিহার্য। ঈমানের পরপরই মুমিনের ওপর সালাত আদায় ফরজ হয়ে যায়।
উপরি উক্ত ন্যূনতম ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া একজন ব্যক্তি মুমিন মুসলিম হতে পারে না। তৎপর তার প্রয়োজন কুরআন শেখা এবং আনুষঙ্গিক অপরিহার্য বিষয়াদি যথা- অজু করা, ফরজ গোসল করার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা। যার ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব অথচ আধুনিক শিক্ষা বা জ্ঞানে উঁচু স্তরের জ্ঞানী তার জীবন ব্যর্থ। তার ওপর প্রযোজ্য আল্লাহর সে বাণী- ‘বলুন, যারা জানে বা জ্ঞানী (ধর্মীয় বিষয়ে) এবং যারা জানে না বা জ্ঞান নেই, তারা কি সমকক্ষ হতে পারে?’ (সূরা আজ জুুমার, আয়াত-৯) উত্তর- কিছুতেই তারা সমকক্ষ হতে পারে না। যার জ্ঞান নেই সে পরকালে ব্যর্থ বা জাহান্নামবাসী এবং যার জ্ঞান আছে এবং জ্ঞানকে বাস্তবায়ন এবং ফলপ্রসূ করেছে, সে ইহকালে সৎ মানুষ এবং পরকালে মহাসফল বা জান্নাতবাসী। বর্তমান বিশ্বে যেদিকে তাকাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা দেখতে পাই ভয়াবহ, দুর্বিষহ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা যা থেকে উত্তরণ বাস্তব কোনো ব্যবস্থাপনা দ্বারা সম্ভব বলে মনে করি না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মানুষেরা প্রথমত ধর্মজ্ঞানে জ্ঞানী না হবো এবং আহরিত জ্ঞান বাস্তবায়ন না করব ও করাব, পরস্পর পরস্পরকে সৎ পরামর্শ দিতে থাকব, বিশেষ করে মানুষকে ঈমান বৃদ্ধি ও সালাতমুখী করার জন্য। একজন মানুষ যে পরিবেশে বসবাস করছে সেই পরিবেশে তার ব্যক্তি, কর্ম, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিভাবে চললে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন হবে না তা জানা আবশ্যক। এ ছাড়া নতুন পরিবেশে গেলে সেখানেও নিজেকে সঠিক পথে চালানোর প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন আবশ্যক। হে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা! আমাদেরকে ও আমাদের কৈশোরে পদার্পণকারী সন্তানদেরকে ধর্মীয় শিক্ষায় ও জ্ঞানে জ্ঞানী হতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে দয়া করে তাওফিক দান করুন যাতে করে আমরা উভয় জগতে শান্তি ও সফলতা অর্জন করতে পারি। আমিন।
লেখক: সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ ও চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস।