রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিজয় ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে: নজরুল ইসলাম খান পতিত আ’লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহাই পায় নাই : ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই : তারেক রহমান ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা: সাবেক ডিসি মশিউর সাত দিনের রিমান্ডে ভারতে ‘অবৈধ’ শেখ হাসিনা, এখন কী পদক্ষেপ নেবে ভারত দেশবাসী তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই কাল হলো তোফাজ্জলের? আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ মুসল্লিদের প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনার নিযুক্ত খতিব রুহুল আমিনের পলায়ন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত: অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে পাঁচ বছরে ব্যয় হবে ৪ হাজার কোটি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১

ভারতের ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়িয়েছে সরকার। ফলে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৭ দশমিক ১৩৮ টাকা মূল্যে আমদানি করা হবে। এ হিসাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় হবে ৪ হাজার ১৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৯ মার্চ দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনপিটিসি বিদ্যুৎ ভেপার নিগম লিমিটেডের (এনভিভিএন) সঙ্গে চুক্তি করে পিডিবি। ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১৬ মার্চ। চুক্তি নবায়নের জন্য নতুন করে এনভিভিএন আরো পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পিডিবিকে। তার অংশ হিসেবে কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বর্তমানে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বহরমপুর-পাবনা সঞ্চালন লাইন হয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট ও ত্রিপুরার সূর্যমনি থেকে কুমিল্লা সঞ্চালন লাইন হয়ে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিটি গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন দেয়া হয়। ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ আমদানির সব শর্ত অপরিবর্তিত রেখে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ১৬০ (১৬০+২০ শতাংশ হিসেবে সর্বোচ্চ ১৯২) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২৬ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য স্বাক্ষরিত পিপিএ অনুযায়ী একই ধরনের শর্তে বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে ভারতীয় কোম্পানি এনভিভিএন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে পিডিবি তাদের ১ হাজার ৮৭৩তম বোর্ডসভায় বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি নবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং জয়েন্ট স্টিয়ারিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনভিভিএনের মাধ্যমে ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি করপোরেশন লিমিটেড (টিএসইসিএল) থেকে বিদ্যুতের মূল্য আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ করে পিডিবি ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।
ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারত-বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়। ত্রিপুরার সূর্যমনি নগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লা সীমান্ত পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে ভারতের পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (পিজিসিআইএল)। এরপর দেশের অভ্যন্তরে কুমিল্লা জেলা পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩১ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
ভারতীয় অংশে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য পিডিবি ও পিজিসিআইএলের মধ্যে ২০১৫ সালের ৪ মে বাল্ক পাওয়ার ট্রান্সমিশন এগ্রিমেন্ট (বিপিটিএ) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির মেয়াদ রয়েছে আগামী ২০৫০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ যদি বিদ্যুৎ আমদানি নাও করে, তবু ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে ট্রান্সমিশন চার্জ প্রদান করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় ত্রিপুরার বিদ্যুৎ কোম্পানি টিএসইসিএলের কাছ থেকে এনভিভিএনের মাধ্যমে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ এনটিপিসি ও পিডিবির মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। পরে ২০১৭ সালে ১০ এপ্রিল আরো ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে পিডিবি ও এনভিভিএনের মধ্যে আরেকটি চুক্তি হয়। এর মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৬ মার্চ পর্যন্ত।
বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে মোট ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানির পরিকল্পনা ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াটও পেরোয়নি। বিদ্যুতের চাহিদা না বাড়ায় উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র অর্ধেক কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ব্যয় হচ্ছে বিপুল অর্থ।
বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ত্রিপুরা থেকে নতুন করে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিতে দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, নতুন চুক্তিতে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্টের’ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনা হবে। সেক্ষেত্রে আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ নেব, ঠিক সে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করব। যেটি আগে ছিল না। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে দেশে গ্যাসভিত্তিক অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এর পরিবর্তে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হচ্ছে। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ফলে ত্রিপুরা থেকে নতুন করে যে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি হয়েছে, তা বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। সব মিলিয়ে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।
এদিকে গত রোববার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে এলএনজি বা গ্যাসভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনাঘাটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে পিডিবি। মোট ৬৯ হাজার ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার এ প্রকল্প নির্মাণ করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com