উনবিংশ শতাব্দীতে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সে সময়কার যানবাহনসমূহের মধ্যে অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে একটি বাহন বা যান। হ্যাঁ, মোটরসাইকেল বা দ্বিচক্রযানের কথা বলছি, যার আকর্ষণীয় ডিজাইন, সহজ যোগাযোগের মাধ্যম এবং স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে সারা বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয়। বেশিরভাগ মানুষের কাছে মোটরসাইকেল একটি প্রয়োজনীয় বাহন। তদ্রুপ পাঞ্জাবী, পাজামা ও মাথায় হেলমেট পরিহিত এক ব্যক্তির সার্বক্ষণিক ছুটে চলার সঙ্গী হলো হোন্ডা কোম্পানির লাল একটি মোটরসাইকেল। এই বাইকে চেপেই তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি ছুটে চলেছেন শহর গ্রাম সবখানে। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন মো: আনোয়ারুল আজিম আনার। পিতা মরহুম ইয়াকুব আলী বিশ্বাস, মাতা মরহুমা জোহরা বেগম, জন্মস্থান মধুগঞ্জ বাজার, উপজেলা কালীগঞ্জ, জেলা ঝিনাইদহ। ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী আনার পিতা-মাতার কনিষ্ঠ পুত্র। ছাত্রজীবন থেকেই খেলাধুলা সামাজিকতা ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার নেশা ছিল। এই গুণগুলো দেখেই তার সতীর্থ খেলোয়াড় বড় ভাইদের একান্ত ইচ্ছায় ১৯৯৩ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। শুরু হয় ভোটের রাজনীতিতে তার পথ চলা। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৮৪ তথা ঝিনাইদহ ৪ নম্বর আসনের এমপি নির্বাচিত হন আনার। ওয়ার্ড কমিশনার থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৯৩- চলমান) দীর্ঘ এই রাজনৈতিক পথ চলায় আপন সঙ্গী হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন নিজের প্রিয় মোটরসাইকেলটিকে।ঝিনাইদহ-৪ আসনটি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়ন, ঘোড়াশাল ইউনিয়ন, ফুরসুন্ধি ইউনিয়ন, মহারাজপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।সংসদ সদস্য আনার পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়ান মোটরসাইকেলে করেই। ফজরের সালাত আদায় করে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন জনগণের খোঁজখবর নিতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। চলার পথেই গ্রামের কোনো এক চায়ের দোকানে বসে সাধারণ মানুষের সাথে চা পান করতে করতে নানা গল্পগুজবে মেতে ওঠেন। মানুষের অভাব অভিযোগ, সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন ও সমাধানের চেষ্টা করেন। জনগণের প্রতিনিধি জনগণের সাথে মিশে যাওয়ার যে প্রাণবন্ত চেষ্টা এম পি আনারের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তখনই, যখন তিনি গ্রামের মেঠো পথের ধারে মোটরসাইকেল রেখে নদীতে মাছ ধরতে ও সাতার কাটতে নেমে পড়েন পানিতে। আবার গ্রামের চায়ের দোকানে স্থানীয় যুবকদের সাথে মিশে গিয়ে কেরাম বোর্ড খেলতে দাড়িয়ে যান।নিজ নির্বাচনী এলাকার ছোটো বাচ্চা,কিশোর কিশোরী, যুবক, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দল-মত নির্বিশেষে সকলের নিকট পরিচিত আপনজন হলেন এমপি আনার। এলাকার মানুষের অসুস্থতার, মৃত্যুর কিংবা দুর্ঘটনার সংবাদ শোনামাত্রই বাইক চালিয়ে পৌঁছে যান সেখানে।আবার দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে নিয়ে নিজে এম্বুলেন্স চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। একই দিনে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ পেলেও বাইক চালিয়ে পৌঁছে যান মৃত ব্যক্তির জানাজা কিংবা শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। নির্বাচনী এলাকার চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শনেও তিনি বাইক চালিয়ে যান। সাধারণ জনগণ রাস্তাঘাটে সহজেই বাইক থামিয়ে কোনা প্রকার প্রটোকল ছাড়াই নিজের মনের কথা বলতে পারেন এমপি আনারকে। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মোঃ আনোয়ারুল আজিম আনারে ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোলাম রসুল জানান,১৯৮৬ সাল থেকে ঝিনাইদহ ৪ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আব্দুস সাত্তার,নূর উদ্দিন, শহিদুজ্জামান বেল্টু,আব্দুল মান্নান ও আনোয়ারুল আজীম আনার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনারের ন্যায় অন্য কোনো সাবেক সাংসদ জনগণের সাথে মিশে যেতে পারেননি।কারণ তারা সব সময় প্রটোকল নিয়ে চলতেন।ফলশ্রুতিতে জনগণের মনে একটা ধারণা স্থানীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে,”এম পি পদটি অনেক বড়।এই পদের ব্যক্তির তথা সাংসদের সন্নিকটে পৌঁছানো খুব কষ্ট”।আমি মনে করি মানুষের এই ভ্রান্ত ধারণাকে পাল্টে দিতে পুরোপুরিভাবে সক্ষম হয়েছেন বর্তমান সাংসদ।তিনি একজন সংসদ সদস্য হয়েও পূর্বের সংসদ সদস্যদের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে প্রোটোকল ব্যাতীত সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটে চলেন নির্বাচনী এলাকায় । ঘুরে ঘুরে নিজ এলাকার জনগণের সুখ-দুঃখ সুবিধা-অসুবিধা দেখার চেষ্টা করেন।জনগণও একজন সংসদ সদস্যকে রাস্তা ঘাটে,দোকান ঘরে,গ্রামেগঞ্জে কাছে পেয়ে আপন করে নেন।জরুরী প্রয়োজনে কালীগঞ্জের বাইরে থাকা কিংবা অসুস্থতা ব্যতীত সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনারের বাইকে চেপে ছুটে চলা নিত্য দিনের রুটিন। এভাবে মোটরসাইকেলযোগে ছুটে চলতে গিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার কবলেও পড়েন। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার এই প্রতিবেদককে জানান,আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে লালন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্কুলজীবন থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। এমনকি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের আনন্দ বা খুশির চেয়েও জনসেবামূলক কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও রাজনৈতিকভাবে স্বনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলাদেশ অদম্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে।আমার নির্বাচনী এলাকাতেও উন্নয়নের ব্যাপক ছোঁয়া লেগেছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি আমার উপর অর্পিত জনগণের দেওয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে। এজন্য সকাল হলেই মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। যাতে অল্প সময়ে অনেক বেশি স্থানে অনেক বেশি জনগণের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি। মোটরসাইকেল যোগে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গ্রামের মেঠো পথে অলিতে গলিতে খুব সহজে যাওয়া যায়।