শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১

সম্প্রতি ইউনিসেফ প্রকাশিত ফিড টু ফেল দ্য ক্রাইসিস অব চিলড্রেনস ডায়েটস ইন আরলি লাইফ; ২০২১ চাইল্ড নিউট্রিশন রিপোর্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রক্রিয়াজাত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন, প্রোটিন, ফসফরাসসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের ঘাটতি থাকে। এছাড়া এসব খাবারে থাকে অতিমাত্রায় রাসায়নিকের মিশ্রণ। ফলে শিশুদের জন্য তো বটেই, বড়দের জন্যও এসব খাবার ক্ষতির কারণ। এ ধরনের খাবার গ্রহণের কারণে সারাজীবনের শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের মাত্রা বেশি। তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ শিশু কোমল পানীয়, ৫ শতাংশ এনার্জি ড্রিংক, ২৭ শতাংশ প্যাকেটজাত ফলের জুস ও প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু আইসক্রিম গ্রহণ করে বলে বায়োরিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, অতিপ্রক্রিয়াজাত বা আল্ট্রা প্রসেসড খাবার ও কোমল পানীয় যেকোনো বয়সীদের জন্য ক্ষতিকর। এতে ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক, হূদরোগসহ নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে এসব খাবারের ভীষণ প্রভাব রয়েছে।
অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে পাউরুটি, বনরুটি, চকোলেট, মিষ্টি জাতীয় খাবার ও কোমল পানীয়, সস, বোতলজাত ফলের রস, স্যান্ডউইচ, বার্গার, ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও স্যুপ, চিনি এবং তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার, প্যাকেটজাত রেডি মিট ও বিভিন্ন চিপসের মতো জাঙ্ক ফুড। এ ধরনের খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে ও কিডনির ক্ষতি করে। এসব খাবারে থাকা অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে। অতিরিক্ত তেল ও চর্বি দিয়ে তৈরি খাবার কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বদহজম ও গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয় গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে ইউনিসেফ বলছে, এসব নিম্নমানের খাবার গ্রহণের ফলে শিশুরা খর্বাকৃতি, শীর্ণকায়, অনুপুষ্টির ঘাটতি
এবং অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার মতো অপুষ্টিজনিত সমস্যার শিকার হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, অসমতা, সংঘাত, জলবায়ু-সংক্রান্ত দুর্যোগ এবং কভিড-১৯ মহামারীর মতো জরুরি পরিস্থিতিতে এমনিতেই কম বয়সীদের পুষ্টি সংকট প্রকট হয়েছে। বিশেষ করে ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়সীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সময় তারা অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। জীবনের এ সময়টিতে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে তাদের দ্রুতবর্ধনশীল শরীর ও মস্তিষ্ক ক্ষতির মধ্যে পড়ছে। ফলে
তাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম প্রভাবিত হয়। নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাসের কারণে তারা যে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির মধ্যে পড়ে তা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। শিশুর বৃদ্ধির জন্য শাকসবজি, ফল, ডিম, মাছ ও মাংসে বিদ্যমান প্রয়োজনীয় পুষ্টি পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়ানো হলে মস্তিষ্কের দুর্বল বিকাশ, দুর্বল শিক্ষা ফলাফল, কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অধিকমাত্রায় সংক্রমণ এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
সরকারের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের ফলে অনুপুষ্টি, অপুষ্টি বা আন্ডারনিউট্রিশন, অতিপুষ্টি বা ওভারনিউট্রিশনের সৃষ্টি হয়। এতে শিশুদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা অসংক্রামক রোগের দিকে ধাবিত হয়। কেননা এতে বেশি পরিমাণে কার্বহাইড্রেড, আয়রন, লবণ, চিনিসহ নানা উপাদান থাকে। কোনোটাই পরিমিত নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমা শাহীন বণিক বার্তাকে বলেন, অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয় গ্রহণের ফলে শিশুদের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। এতে পুষ্টি চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার তাদের খাওয়ানো যায় না। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান যা তাদের দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন তা থেকে বঞ্চিত হয় এবং অপুষ্টির শিকার হয়। তিনি বলছেন, বিশ্বের উন্নত দেশে অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারে পুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ দেশে এসব তেমন একটা নেই। ফলে অতি মুনাফার জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের বিষয়টিতে সতর্ক হচ্ছে না।
ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে ৬-২৩ মাস বয়সী প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে মাত্র একজনকে ন্যূনতম সংখ্যক সুপারিশকৃত খাদ্য দেয়া হচ্ছে। গত এক দশকে ধনী ও দরিদ্র শিশুদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তির ব্যবধান রয়ে গেছে। ধনী পরিবারের ৪৮ শতাংশ শিশুর তুলনায় দরিদ্র পরিবারে ২২ শতাংশ শিশুর ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য পূরণ হয়। ফলে বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩৬ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন, খর্বাকৃতি ও রুগ্ণতায় ভুগছে।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্মসূচির উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক ডা. গাজী আহমেদ হাসান বলেন, জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো এবং প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধের বিকল্প নেই। ছয় মাস পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে হাঁড়িতে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দুধের বিকল্প খাবার শিশুর অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com