মাত্র ১১০ দিনের ব্যবধানে বিঘাপ্রতি ২৫ মন ধান পেয়ে খুশি সাতক্ষীরার চাষিরা। বিনা-১৭ জাতের এই আমন ধান কাটার পর একই জমিতে রবিশস্য এবং আউশও চাষ করতে পেরেছেন তারা। সময়, পানি এবং সারসাশ্রয়ী বিনা-১৭ চাষ করে চাষিরা লাভবান হওয়ায় অনেকেই নতুন করে এগিয়ে আসছেন। গতকাল বিকেলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের দেবনগর গ্রামের মাঠে আয়োজিত এক মাঠ দিবসে এসব তথ্য জানান কৃষকরা। কৃষকরা বলেন, আমন চাষে আমাদের সময় লাগে ১৫০ থেকে ১৬০ দিন। অথচ মাত্র ১১০ দিনে বিনা-১৭ জাতের ধান পেয়েও আমরা সরিষা ও মুগ, খেসারি আলু চাষের সময় ও সুযোগ পেয়েছি। এরপর একই জমিতে আউশ ধান লাগিয়ে আমরা লাভবান হয়েছি। কৃষক ইউসুফ আলী, জাহাঙ্গীর আলম, সমীর সরদার ও নার্গিস বেগমসহ কৃষকরা জানিয়েছেন, বিনা-১৭ জাতের ধান চাষে ৪০ শতাংশ পানি কম লাগে। একইভাবে ইউরিয়া সারও লাগে ৩০ শতাংশ কম। উচ্চ ফলনশীল এই জাতের ধান গাছের প্রতিটি ছড়ায় গড়ে ২৫০-২৬০টি ধান থাকে এবং তা ঝরে যায় না। একইসঙ্গে ধানগাছগুলো সব সময় খাড়া থাকে। এর চালও সরু বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। কৃষকরা বলেন, অন্যান্য জাতের ধান চাষে যে ফলন আমরা পেয়েছি, তার তুলনায় বিনা-১৭ জাতে অনেক ফলন বেশি। জলাবদ্ধতার শিকার সাতক্ষীরায় পাট চাষের পরই বিনা ধানসহ মোট চারটি ফসল ঘরে তোলার সময় পেয়েছি আমরা। সাতক্ষীরার বিনেরপোতা পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল আক্তার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলার ১৫০ জন চাষি বিনা-১৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। মোট দেড় হাজার একর জমিতে এ ধান চাষ হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই বিঘাপ্রতি গড়ে ২৫ মন ধান পেয়েছেন। এই জাতের ধানের বীজ সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া অভিজ্ঞ চাষীরাও এই বীজ সংরক্ষণ করে তা অন্যদের মধ্যে বিলি করে আসছেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে বিনা-১৭ জাতের ধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’ মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিনা-১৭-এর উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পরিচালক জিএমএ গফুর, সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুল ইসলাম, খুলনা জেলা উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, মো. নজরুল ইসলাম, মো. ওয়ারেশ কবির প্রমুখ।